শেখ রেহানার জন্মদিন আজ, নীরবে-নিভৃতে কাজ করে গেছেন যিনি

শেখ রেহানার জন্মদিন আজ, নীরবে-নিভৃতে কাজ করে গেছেন যিনি
শেখ রেহানার জন্মদিন আজ, নীরবে-নিভৃতে কাজ করে গেছেন যিনি

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার ৬৮তম জন্মদিন আজ বুধবার। ১৯৫৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যা করে। সে সময় শেখ হাসিনার স্বামী ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মস্থল জার্মানির কার্লসরুইয়ে বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকায় বেঁচে যান তিনি। সেখান থেকে ভারতে চলে যান দুই বোন। পরে শেখ রেহানা লন্ডনে চলে যান। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে ভারত থেকে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন।

দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হয়েও কখনো রাজনীতিতে আসেননি শেখ রেহানা। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ সক্রিয় রাজনীতিবিদদের অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। জনহিতৈষী কাজে সবসময়ই ভূমিকা রাখছেন শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, সবার কাছে ‘ছোট আপা’ বলে পরিচিত। অধ্যাপক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক ও শেখ রেহানা দম্পতির তিন ছেলেমেয়ে। তাদের মধ্যে বড় মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনে নন্দিত রাজনীতিক। তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির একজন সদস্য (এমপি)। ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত। ছোট মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক লন্ডনে কন্ট্রোল রিস্কস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের গ্লোবাল রিস্ক অ্যানালাইসিস সম্পাদক।

শেখ রেহানা প্রথম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পিতা শেখ মুজিবসহ পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ গড়ে তোলেন। ১৯৭৯ সালের ১০ মে বিশ্ব মানবতার কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি তোলেন। সেদিন সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠান থেকে বোন শেখ হাসিনার পক্ষে প্রথমবারের মতো ঘৃণ্য ওই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি তোলেন। সেদিন শেখ রেহানা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, জাতিসংঘের মহাসচিব, জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিশনের চেয়ারম্যান, আমেরিকার কংগ্রেসের হিউম্যান রাইটস কমিটির চেয়ারম্যান, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের প্রধানদের কাছে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচারের প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

শেখ রেহানা, নীরবে-নিভৃতে কাজ করে গেছেন যিনি

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ গুলি করে হত্যা করা হয়। শেখ রেহানা বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে দেশের বাইরে থাকায় রক্তাক্ত অভ্যুত্থান থেকে সেদিন বেঁচে গিয়েছিলেন।

শেখ রেহানা সাধারণ মানুষের মতোই জীবনযাপন করেন। নীরবে-নিভৃতে দেশের জন্য কাজ করেন। সর্বদা বড় বোন শেখ হাসিনার পাশে থেকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে গেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বোন প্রসঙ্গে বলেন, তার ছোট বোন অনেকটা মায়ের মতো সংগঠিত ও সুশৃঙ্খল। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছে রেহানা ‘ছোট আপা’ হিসেবেই পরিচিত।

রেহানা তার পৈতৃক টুঙ্গিপাড়া গ্রামের জীবনকে মিস করেন। পূর্ণদৈর্ঘ্য ‘হাসিনা: এ ডটার'স টেল’ প্রামাণ্যচিত্রে এর প্রতিফলন রয়েছে। পঁচাত্তর ট্র্যাজেডির পর বড় বোন শেখ হাসিনার মতো শেখ রেহানার জীবনেও ঝড় বয়ে যায়, সেই দুঃসময় সামলে উঠে তিনি এগিয়ে গেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের আগে শেখ হাসিনাসহ বেলজিয়ামে উড়াল না দিলে বাবা-মা ও ভাইদের মতো তাকেও হত্যা করা হতো। তবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে শেখ হাসিনা ও রেহানার জন্য জীবন কখনোই সহজ ছিল না। হত্যাকাণ্ডের সময় তারা বেলজিয়ামে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের বাসায় ছিলেন। জাতির পিতাকে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে রাষ্ট্রদূত তাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি বিমানবন্দরে যেতে গাড়ি দিতেও অস্বীকৃতি জানান। পরে দুইবোন জার্মানি হয়ে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে চলে যান। সেখানে তাদের নির্বাসিত জীবনের দীর্ঘ একটা সময় কাটে।

শেখ রেহানা পরে ভারত থেকে লন্ডনে চলে যান এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। লন্ডনে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন শেখ রেহানা। দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হয়েও কখনো রাজনীতিতে আসেননি শেখ রেহানা। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ সক্রিয় রাজনীতিবিদদের অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা দিয়ে গেছেন সবসময়।

এসব আন্দোলন-সংগ্রাম এবং আওয়ামী লীগের প্রতিটি সংকটে বড় বোন শেখ হাসিনার পাশে থেকে সহযোগিতা করে গেছেন শেখ রেহানা। দেশ ও জাতির কল্যাণে অনেকটা নেপথ্যে থেকেই ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর এ কনিষ্ঠ কন্যা। জনহিতৈষী কাজেও সব সময়ই ভূমিকা রয়েছে শেখ রেহানার। মানবিক হৃদয়ের জন্য মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তিনি। যিনি সাধারণ হয়েও অসাধারণ।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের প্রথম আহ্বান জানান শেখ রেহানা

১৯৭৫ সালের নৃশংস সেই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রথম তুলে ধরেছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা। তার সেই আবেগ ও কান্না জড়িত বক্তব্য শুনে সেদিন উপস্থিত সকলেই অবাক হয়ে যায়। এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য তিনি যেই দাবি তুলেন তা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পায়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা ১৯৭৯ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা খুনিদের বিচারের দাবি উত্থাপন করেন, এটি ছিল বিশ্বদরবারে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচারের প্রথম আহ্বান।

১৯৭৯ সালের ১০ মে তিনি স্টকহোমে ইউরোপীয় দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান, জাতিসংঘের মহাসচিব ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এনজিও’র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে সর্ব-ইউরোপীয় বাকশালের এক সম্মেলনে বক্তৃতার মাধ্যমে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়ের দিকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সেই আবেগঘন পরিবেশনার মধ্য দিয়ে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের ওপর বৈশ্বিক চাপ সৃষ্টির সেই অনন্য নজির ইতিহাসের পাতায় ভাস্বর হয়ে আছে। জানা যায়, তৎকালীন সময় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ছিলেন দিল্লিতে। তিনি শেখ রেহানাকে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বিচার চাইবার আহ্বান জানান।

এরপর শেখ রেহানা প্রখ্যাত আইনজীবী স্যার টমাস উইলিয়ামস, কিউসি’র সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা করেন। স্যার টমাস ইউলিয়ামস আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর আইনজীবী ছিলেন। তিনি ড. শফিকের সাথে হাউস অফ কমন্সে স্যার টমাসের সাথে দেখা করেন, তাকে সর্ব-ইউরোপ বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতির পদ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি এই অনুরোধ ফেলতে পারেননি।

১৯৮০ সালের ১৬ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যার পঞ্চম বছর স্মরণে একটি বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল- যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ছিল। সেখাে শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং স্যার টমাস উইলিয়ামস, কিউসি প্রধান বক্তা ছিলেন।  

আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির ডক্টর কনরাড উড এবং ব্রিটিশ লেবার পার্টির দুইজন আইনপ্রণেতা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সেখানে স্যার টমাস উইলিয়ামস ঘাতকদের বিচারের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেন।

১৯৮০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর লন্ডনের হাউস অফ কমন্সের কাছে একটি রেস্তোরাঁয় এই প্রবীণ আইনজ্ঞ আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। এই কমিটির প্রধান ছিলেন তিনি নিজে এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ও আইরিশ আইনজীবী শন ম্যাকব্রাইড ছিলেন এই কমিটির অন্যতম সদস্য। জেফরি টমাস এমপি ও সলিসিটর অ্যাব্রে রোজ ১৯৮১ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ভিসার আবেদন করেন, তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং ভিসা প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি ফেব্রুয়ারিতে হাউস অফ লর্ডস পর্যন্ত গড়ায়।

তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড ক্যারিংটনসহ অনেকে এ নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন। আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটি ১৯৮২ সালের ২০ মার্চ বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার এবং জাতীয় চার নেতা হত্যার প্রাথমিক প্রতিবেদন দাখিল করে।

১৯৮৩ সালে সাপ্তাহিত বিচিত্রার সাক্ষাৎকারে দেশবাসীর কাছে প্রথম বিচার চাইলেন শেখ রেহানা

জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যার পর ১৯৮৩ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রথম সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয় শেখ রেহানার। 'বাংলার মানুষের কাছে বিচার চাই' শিরোনামে প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘১৫ আগস্ট আমি মরে গেলেই ভালো হত। বাবা নেই, মা নেই, ভাই নেই। আমার আর বাঁচতে ইচ্ছা করে না। আমি কী নিয়ে বাঁচব? কী আছে আমার? রাসেল কী অপরাধ করেছিল? ও তো রাজনীতি করত না। আমার মা তো রাজনীতি করত না। কেন ওরা তাদের হত্যা করল?  খোদা তায়ালার কাছে বলছি, আমার মতো যেন কাউকে তিনি শাস্তি না দেন। আমি এতিম বড় অসহায়। আমি মেয়ে হিসেবে বাঙালি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার চাই।’

প্রায় ৪০ বছর আগে নেয়া সাক্ষাৎকারে শেখ রেহানার তৎকালীন মানসিক অবস্থা বোঝাতে গিয়ে লেখা হয়েছিলো, "১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রসঙ্গ আসতেই যেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন ঘটলো। হাসির লেশ মাত্র আর খুঁজে পেলাম না তার মধ্যে। মুহূর্তে রেহানার মুখ মলিন হয়ে উঠলো। মনে হচ্ছিলো তার দেহমন ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাচ্ছে। চোখ দুটিতে পানি ছলছল করছে। অনেক্ষন নিরব হয়ে থাকলেন। কান্নাভেজা কণ্ঠে বললেন, 'কি অপরাধ করেছিলো বঙ্গবন্ধু, কি অপরাধ করেছিলো আমার ভাইয়েরা, কি অপরাধ করেছিলো শিশু রাসেল? কেনো তাদের হত্যা করা হলো? বাংলার মানুষের কাছে এমন কি অপরাধ করেছে তারা?"

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর জাতির সম্মুখে এটি ছিলো বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যের বিচার চাইবার আকুতি, যা এই দেশের জনগণের হাতে সপেছিলেন শেখ রেহানা। এই সাক্ষাৎকারে বেশ স্পষ্ট করে বলেছিলেন কিভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে হত্যা করা হয়েছে জাতির পিতা ও তার পরিবারের সকল সদস্যকে।

রেহানা কখনো রাজনীতিতে শামিল হওয়ার কথা ভাবেননি; কিন্তু নেপথ্যে থেকে বড় বোনকে সব ধরনের সহযোগিতা করে গেছেন এবং যাচ্ছেন। ইতিহাসবিদদের বর্ণনানুযায়ী, রেহানা একজন আদর্শ বোন, বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য পূরণের লক্ষ্যে নিঃস্বার্থ সমর্থনের উৎস। দুই বোন জন্মসূত্রে বন্ধনে আবদ্ধ এবং তারা অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও হুমকি এখনও থামেনি। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার পর থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। সে বছরই তার ওপর হামলা চালায় বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের সংগঠন ফ্রিডম পার্টির সন্ত্রাসীরা।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো সবচেয়ে বড় হামলায় ২৪ জন নিহত ও কমপক্ষে ৪০০ জন আহত হন। যড়যন্ত্রকারীরা আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটাতে চেয়েছিল সেদিন। ২১ আগস্ট রেহানা শেখ হাসিনার সঙ্গে সেই সমাবেশে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। তবে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী হাসিনা তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। শেখ রেহানা বলেন, ‘আমি খুব অনুরোধ করলাম আপাকে–আপা, আমি যাই তোমার সঙ্গে আজকে।’ উনি বললেন, ‘না, তুমি বাসায় থাকো, তোমার যেতে হবে না।’

‘আমি তখন অভিমান করে, খুব রাগ করে ছোটবেলার মতোই দুমদাম করে ঘরের ভেতর চলে গেলাম।’ এর মধ্যে বাসায় কয়েকজন মেহমান আসেন জানিয়ে শেখ রেহানা বলেন, ‘আপা বললেন, ওনাদের তুমি চা-নাশতা খাওয়াও, গল্প করো, আমি এখনই আসব।’

মেহমানদের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই টেলিভিশনে সমাবেশে হামলার খবর পান শেখ রেহানা। ‘ওই ঘটনা দেখে আমি (বাসার) নিচে চলে আসি। এর মধ্যে খবর আসছে যে আপা (শেখ হাসিনা) নেই।’

রেহানা বলেন, ‘এর মধ্যে আপার গাড়িটা সুধা সদনে এলো, এসে দাঁড়াল। আমি সেখানে দাঁড়ানো। দেখলাম আপার সমস্ত শরীরে, শাড়িতে, মুখে, চোখে রক্ত ভরা। আমি আস্তে আমার আঁচলটা দিয়ে এগুলো মুছে আপাকে ধরে ভেতরে আনলাম।’

২০০৪ সালের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রথম কিংবা শেষ চেষ্টা নয়, এর আগে-পরে হত্যার উদ্দেশ্যে তার ওপর ১৫ বার সশস্ত্র হামলা হয়েছে। ষড়যন্ত্র হয়েছে আরও অন্তত পাঁচবার। শেখ রেহানা যেহেতু শেখ হাসিনার নিত্যসঙ্গী, তাই তিনিও তার বোনের মতোই হুমকিতে রয়েছেন।

নানান হুমকি তাড়া করলেও শেখ রেহানা তার সন্তানদের ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি করতে সহায়তা করে গেছেন।

রেহানা একজন গর্বিত মা। সততার অনুকরণীয় আদর্শ এক রত্নগর্ভা মা তিনি। অধ্যাপক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক ও শেখ রেহানা দম্পতির তিন ছেলেমেয়ে। তাদের মধ্যে বড় মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির একজন এমপি। ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত এবং আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ট্রাস্টি।

ছোট মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী লন্ডনে ‘কন্ট্রোল রিস্কস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের গ্লোবাল রিস্ক অ্যানালাইসিস সম্পাদক হিসেবে কর্মরত।

বঙ্গবন্ধুর যে উত্তরাধিকারকে ঘাতকরা নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল, সেই শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাই থেকে ফিনিক্স পাখির মতো উঠে এসেছেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার মানুষের কল্যাণে তার দুই কন্যার এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। সূত্র. দৈনিক সময়ের আলো ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;