‘বড়রা কাটছে গাছ আমাদের সর্বনাশ’ : বিশ্বের শিশুরা জলবায়ু ধর্মঘটে রাস্তায়

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

‘বড়রা কাটছে গাছ আমাদের সর্বনাশ’ : বিশ্বের শিশুরা জলবায়ু ধর্মঘটে রাস্তায়
‘বড়রা কাটছে গাছ আমাদের সর্বনাশ’ : বিশ্বের শিশুরা জলবায়ু ধর্মঘটে রাস্তায়

সুইডিশ কিশোরী অ্যাক্টিভিস্ট গ্রেটা থানবার্গের ডাকে , জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকানো ও পরিবেশ বাঁচানোর দাবি নিয়ে গতকাল শুক্রবার বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ শিশু অংশ নিয়েছে ‘ক্লাইমেট স্ট্রাইক’ বা ‘জলবায়ু ধর্মঘট’ নামের বিশেষ কর্মসূচিতে। যা বিভিন্ন দেশে শিশুদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এদিন আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়ার বড় বড় শহরে স্কুলে না গিয়ে শিশুরা পরিবেশ বাঁচানোর দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নেমে এসেছিল রাস্তায়। তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বড়রাও শামিল হয়েছেন এ আন্দোলনে। তাদের সবার কণ্ঠেই ছিল এক স্লোগানÑ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হলেও পরিবেশকে বাঁচাতে হবে। রুখতে হবে জলবায়ু পরিবর্তন।

বিবিসি জানায়, ‘জলবায়ু ধর্মঘট’ কর্মসূচিতে সাড়া দিয়ে এদিন ঢাকার রাস্তায়ও সরব উপস্থিতি ছিল শিশু-কিশোরদের। সকালে ঢাকার প্রায় ৩৫টি স্কুল থেকে নানা রঙের পোশাক পরা কিশোর-কিশোরীরা সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জড়ো হয়। সেভ দ্য চিলড্রেনের সহযোগিতায় আয়োজিত এ র‌্যালিতে তারা জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। এ সময় তাদের হাতে ছিল নানা বক্তব্য লেখা প্ল্যাকার্ড। এ ছাড়া গতকাল একশনএইড বাংলাদেশের সংহতিতে ‘গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক’-এর অংশ হিসেবে তরুণসহ নানা বয়সের মানুষ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেয়।

মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিশু-কিশোররা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব এখনই পৃথিবীর মানুষের ওপর পড়েছে, ঝড়-বন্যা-দাবানল-খরা যেভাবে মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলছে, সেগুলো ভবিষ্যতে আরও বিপর্যয়কর হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে আজকের শিশুরাই। সে কারণে নিজেদের ভবিষ্যৎ রক্ষায় বড়দের প্রতি আহ্বান জানিয়েই রাস্তায় নেমেছে তারা। মোহাম্মদপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারজানা আক্তার পলি বলে, ‘বড়রা এই যে গাছপালা কেটে কলকারখানা আর বাসস্থান বানাচ্ছে, তাদের দোষের কারণে আমাদের ভুগতে হবে। আমরা সমাজে টিকতে পারব না। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও টিকে থাকতে পারবে না।’

মিরপুর বিসিআইসি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফারিয়া ফায়জা কণিকা বলেন, ‘আমরাই পরবর্তী প্রজন্ম যারা ভবিষ্যতে থাকব। পরিবেশের যা অবস্থা, সেটা আমাদেরই সহ্য করতে হবে। তাই নিজেদের ভালোর জন্য আমাদেরই পদক্ষেপ নিতে হবে।’

একশনএইড বাংলাদেশের অনুষ্ঠানে সংস্থাটির প্রোগ্রাম পরিচালক মো. আসগর আলী সাবরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সংকট সমাজে অসমতা বৃদ্ধি করছে। জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা একটি বড় ইস্যু। আন্তর্জাতিক অর্থায়নে দেখা যায় বাংলাদেশের মত যে সব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ, তাদের ক্ষেত্রেই বরাদ্দ সবচেয়ে কম।

আন্দোলনের অংশ হিসেবে প্লাস্টিক ও ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য দিয়ে দানবাকৃতির মূর্তি তৈরির পাশাপাশি এতে আরও অংশ নেয় ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, একটিভিস্টা, ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয় ও ইউল্যাব বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট, প্লান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, কেয়ার বাংলাদেশ, ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা।

অন্যদিকে এদিন ‘জলবায়ু ধর্মঘট’-এর সবচেয়ে বড় র‌্যালিটি হয় লন্ডনে। হাজার হাজার শিশু-কিশোরের সঙ্গে এদিন পরিবেশ বাঁচানোর দাবি নিয়ে মিছিল করেন বড়রাও। জেসিকা আহমেদ নামে ১৬ বছর বয়সী লন্ডনের এক স্কুলছাত্রী জানায়, মিছিলে অংশ নিতে সে আজ স্কুলে যায়নি। তার মতে, স্কুল প্রয়োজনীয় তবে তা আমার ভবিষ্যতের চেয়ে বড় নয়। বড় মিছিল ও র‌্যালি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কেও। এতে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনও সংহতি প্রকাশ করে। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে অন্তত ৩ লাখ মানুষ একই দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। সরকারের কাছে ২০৩০ সাল নাগাদ পরিবেশ কার্বন দূষণমুক্ত করার দাবি জানিয়েছে তারা। বিক্ষোভ হয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের নাইজেরিয়া, কেনিয়া, জিম্বাবুয়েতেও। এ ছাড়া এশিয়ায় ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা, থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক, ভারতের মুম্বাই, দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলেও একই দাবিতে পথে নেমেছিলেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।