আজ পবিত্র আশুরা , আশুরায় নফল রোজার ফজিলত

আজ পবিত্র আশুরা , আশুরায় নফল রোজার ফজিলত
আজ পবিত্র আশুরা , আশুরায় নফল রোজার ফজিলত

ইসলাম ডেস্ক ।।

আজ ১০ মহররম পবিত্র আশুরা। দিনটি মুসলিম জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময়। এ দিনে নফল রোজা পালনে বিশেষ গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে হাদিসে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে রমজান এবং আশুরায় যেমন গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি, অন্য সময় তা দেখিনি।’ (বুখারি : ২০০৬)

ইসলাম-পূর্ব যুগেও এই দিনটির গুরুত্ব ও মর্যাদা ছিল। সৃষ্টির সূচনা থেকে অনেক তাৎপর্যময় ঘটনা সংঘটিত হয়েছে আশুরায়। বিশেষ করে হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.) ও তাঁর পরিবার এবং অনুসারীরা ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে নির্মমভাবে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হন। ইসলামের ইতিহাসে এ এক মর্মান্তিক ও বেদনাবিধুর ঘটনা। ধর্মীয় গুরুত্ব, মাহাত্ম্য ও কারবালা প্রান্তরের হৃদয়বিদারক ঘটনাকে স্মরণ করে বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা যথাযোগ্য মর্যাদায় আশুরা দিবস পালন করে থাকেন। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে তাঁদের এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল রয়েছে। কারবালার শোকাবহ এ ঘটনা আমাদেরকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা জোগায়।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পবিত্র আশুরা অত্যন্ত শোকাবহ, তাৎপর্যপূর্ণ ও মহিমান্বিত একটি দিন। বিভিন্ন কারণে এ দিনটি বিশ্বের মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, পবিত্র ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ। বিশেষ করে, হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও তাঁর পরিবারবর্গ কারবালা প্রান্তরে শাহাদাতবরণ করে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় এক উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন।’

দিবসটি উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সরকারি ছুটি। জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টাল বিশেষ প্রবন্ধ, নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও-টিভি চ্যানেলও আশুরার তাৎপর্য নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে।

আশুরা উপলক্ষে শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন তাজিয়া মিছিল বের করে থাকে। এক্ষেত্রে কিছু নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ৭ আগস্ট ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তাজিয়া মিছিলে পাইক দলভুক্ত ব্যক্তিরা দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি নিয়ে অংশগ্রহণ করে, যা ধর্মপ্রাণ ও সম্মানিত নগরবাসীর মনে আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টি করে। এটি জননিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ। তা ছাড়া মহররম মাসে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো হয়, যা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি বহন এবং আতশবাজি ও পটকা ফোটানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন ডিএমপি কমিশনার। এ আদেশ তাজিয়া মিছিল শুরু হতে শেষ সময় পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

আশুরার প্রকৃত শিক্ষা মূলত হোসাইনি আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সত্যের পক্ষে লড়াই করার সাহস ও চেতনা অর্জন করা। একই সঙ্গে এ দিনের বিশেষ আমল রোজা পালন করা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানের পর আল্লাহর কাছে মহররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ। আর ফরজ নামাজের পর রাতের নামাজই হলো সর্বোত্তম।’ (মুসলিম : ১১৬৩)। অন্য হাদিসে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আশুরার রোজা রাখো এবং ইহুদিদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করো; আশুরার আগে বা পরে আরও এক দিন রোজা রাখো।’ (মুসনাদে আহমদ : ১/২৪১, বায়হাকি : ৪/২৮৭)

আশুরায় নফল রোজার ফজিলত

মহররম মাসে নফল রোজা রাখার সওয়াব অন্য সব নফল রোজার সওয়াবের চেয়ে বেশি। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররমের রোজা।’ (মুসলিম : ১৯৮৯)। বিশেষভাবে আশুরা তথা মহররমের ১০ তারিখ অত্যন্ত তাৎপর্য এবং মাহাত্ম্যপূর্ণ দিন। এ দিনে রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে এ দিনে রোজা রেখেছেন এবং স্বীয় উম্মতকে রোজা রাখার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে রমজান এবং আশুরায় যেমন গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।’ (বুখারি : ২০০৬)

হজরত আলী (রা.)-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিল, রমজানের পর আর কোনো মাস আছে, যাতে আপনি আমাকে রোজা রাখার আদেশ করেন? তিনি বললেন, এ প্রশ্ন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট জনৈক সাহাবি করেছিলেন, তখন আমি তাঁর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, ‘রমজানের পর তুমি যদি রোজা রাখতে চাও, তবে মহররম মাসে রাখো। কারণ এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তায়ালা একটি জাতির তওবা কবুল করেছিলেন এবং ভবিষ্যতেও অপরাপর জাতির তওবা কবুল করবেন।’ (তিরমিজি : ৭৪১)

মহররমের ১০ তারিখে রোজা রাখার পাশাপাশি এর আগে বা পরে একটি রোজা অতিরিক্ত রাখতে বলা হয়েছে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় এসে দেখেন, ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা পালন করে। তিনি তাদেরকে বলেন, এ দিনটির এমন কী মাহাত্ম্য যে তোমরা রোজা পালন করো? তারা বলে, এ দিনে আল্লাহ মুসা (আ.) ও তার জাতিকে মুক্তিদান করেন এবং ফেরাউন ও তার জাতিকে নিমজ্জিত করেন। এজন্য মুসা (আ.)

কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এ দিন রোজা পালন করেছিলেন। তাই আমরা এ দিন রোজা পালন করি। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, মুসার (আ.) বিষয়ে আমাদের অধিকার বেশি। এরপর তিনি এ দিন রোজা পালন করেন এবং রোজা পালন করতে নির্দেশ প্রদান করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ইনশাল্লাহ আগামী বছর আমরা মহররমের নবম তারিখেও রোজা রাখব। (মুসলিম : ১৯১৮)

এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, নবীজি (সা.) আমাদেরকে বিজাতীয় সাদৃশ্য পরিহার করার শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমাদেরকে আশুরার রোজা একটির পরিবর্তে দুটি রাখতে হবে। দ্বিতীয় রোজাটি ১১ মহররমও রাখা যাবে। তা ছাড়া এই হাদিস থেকে শিক্ষা নিয়ে জীবনের সব ক্ষেত্রে অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বন পরিহার করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের মহররম মাসে বেশি বেশি রোজা রাখার এবং আশুরার তাৎপর্য অনুধাবন করে তদনুযায়ী আমল করার এবং সব ধরনের গুনাহ বর্জন করার তওফিক দান করুন। আমিন।

খালেদ / পোস্টকার্ড;