আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ , ডিমান্ড নোটের টাকা দিয়েও অনিশ্চয়তায় ২০ হাজার আবেদনকারী

শুকলাল দাশ ।।

আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ , ডিমান্ড নোটের টাকা দিয়েও অনিশ্চয়তায় ২০ হাজার আবেদনকারী

আবাসিকে আর কোন গ্যাস সংযোগ না দেয়ার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (কেজিডিসিএল) ২০ হাজার আবেদনকারীর সংযোগ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (কেজিডিসিএল) আবাসিকে নতুন সংযোগের জন্য ২০ হাজারের বেশি গ্রাহককে ডিমান্ড নোট ইস্যু করেছিল বেশ কয়েক বছর পূর্বে। একই সাথে পূর্বের সংযোগস্থলে আরো সংযোগ বর্ধিতকরণের জন্য আবেদন জমা পড়েছে প্রায় ২ হাজারের মতো। ডিমান্ড নোটের দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করেও গ্রাহকরা নতুন সংযোগের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করছেন। কিন্তু গত ১৫ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘নতুন করে আর কোন বাসা বাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না। আমরা সিলিন্ডারে চলে যাচ্ছি এবং এখন থেকে আমরা বেরও হতে পারবো না। এজন্য সবাইকে সিলিন্ডার ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে। আগামীতে কাউকে নতুন করে কোন সংযোগ দেয়া হবে না।’
এব্যাপারে কর্ণফুলী গ্যাসের মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) প্রকৌশলী মো. আজিজুল হক আজাদীকে জানান, আমাদের কাছে সরকারি সার্কুলার এসেছে আবাসিক ও বাণিজ্যিকে পাইপ লাইনে আর সংযোগ না দিতে। পাইপ লাইনের মাধ্যমে আর গ্যাস সংযোগ হবে না। আবাসিকে নতুন সংযোগের জন্য আমাদের কাছে ২০ হাজারের মতো গ্রাহক টাকা জমা(ডিমান্ড নোট) দিয়েছেন। ১ হাজারের মতো গ্রাহক এক্সটেনশনের জন্য আবেদন করেছেন। তবে তাদের কাছ থেকে টাকা জমা নেয়া হয়নি। তারা শুধুমাত্র সংযোগ বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছেন। সেগুলোও আর হবে না। আবাসিকের পাশাপাশি বাণিজ্যিকও আর সংযোগ দেয়া হবে না। এব্যাপারে গত দেড় মাস আগে একটি সার্কুলার এসেছে মন্ত্রণালয় থেকে। আবার গত ৪/৫দিন আগেও একটি সার্কুলার এসেছে।
যেসব গ্রাহক সংযোগের জন্য ডিমান্ড নোট জমা দিয়েছে তাদেরকে আমরা বলছি-‘আবাসিকে সরকার আর সংযোগ দেবে না।, আপনারা চাইলে আপনাদের টাকা ফেরত নিয়ে যেতে পারেন।’ তারপরও গ্রাহকরা বলছেন-টাকা থাক, আরো দেখি।’
কর্ণফুলী গ্যাসের বিতরণ বিভাগের এক ঊর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, মূলত ২০১৫ সালের শুরু থেকেই নীতি নির্ধারণী মহল থেকে আবাসিকে গ্যাস-সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। তখন থেকে চট্টগ্রামে সংযোগ দেয়ার কাজটি ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়া হয়। এরপর সংযোগ প্রদান একেবারেই বন্ধ করে দেয়া হয়। এব্যাপারে কর্ণফুলী গ্যাসের ম্যানেজার (কাস্টমার অ্যান্ড মেইনটেনেন্স) প্রকৌশলী অনুপম দত্ত আজাদীকে জানান, নতুন সংযোগ দেয়া-না দেয়া সবই সরকারের পলিসির বিষয়। নীতি নির্ধারণী মহল যেই সিদ্ধান্ত দেন সেটা আমরা পালন করি। সচিব স্যার যখন আমাদের অফিসে এসেছিলেন তখনও আবাসিকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে নতুন সংযোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশনা দিয়েছেন। আবাসিকে সংযোগের জন্য যেসব গ্রাহক ডিমান্ড নোট জমা দিয়েছেন এখন তাদের টাকা ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত হবে। তারা চাইলে তাদের টাকা ফেরত নিতে পারবেন।
বহুল প্রত্যাশার এলএনজি আমদানির পর আবাসিক খাতে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়ার একটি সম্ভাবনা তৈরি হলেও কার্যত তা আর হচ্ছে না। সরকারের নীতি নির্ধারণী মহল পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্রাহকদের আর গ্যাস সরবরাহ দিতে চান না। চট্টগ্রামসহ সারাদেশের হাজার হাজার মানুষ আবাসিক সংযোগের জন্য আবেদন করে এবং অনেকেই ডিমান্ড নোটের অর্থ পরিশোধ করে অপেক্ষায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত আর সংযোগ যে পাচ্ছেন না, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।