আসছে নতুন শিক্ষাবর্ষ, কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বছরের প্রথম দিনই পাবে পাঠ্যবই

আসছে নতুন শিক্ষাবর্ষ, কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বছরের প্রথম দিনই পাবে পাঠ্যবই

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

আসছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। দরজায় কড়া নাড়ছে নতুন বছর। বছরের প্রথম দিন শিশু-কিশোররা খালি হাতে স্কুলে গিয়ে নতুন ঝকঝকে বই নিয়ে ঘরে ফিরবে। কেউ কেউ দীর্ঘশ্বাসে ঘ্রাণ নেবে আনকোরা বইয়ের। নতুন বছরে নতুন শ্রেণিতে উত্তীর্ণের উচ্ছ্বাস আর নতুন বই প্রাপ্তির আনন্দ দুয়ে মিলে খুশির বন্যা বয়ে যাবে দেশের প্রতিটি স্কুলে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবর্ষের শুরুতে পাঠ্যবই হাতে পেত না এক দশক আগেও। বই পেতে কখনও কখনও তিন থেকে চার মাস লেগে যেত তাদের। পাল্টে গেছে সেই চিত্র।

বছরের প্রথম দিন বই উৎসবের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিশুরা এখন বিনামূল্যে পাঠ্যবই হাতে পায়।জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, এবার প্রায় এক মাস আগেই ছাপা হয়ে গেছে বিনামূল্যের ৩৫ কোটি বই। পৌঁছে গেছে তা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের হাতে। এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, বই বিলম্বে পাওয়ার দিন এখন অতীত। আগেভাগে ছাপা হয়ে উপজেলার গোডাউন ও স্কুলগুলোতে গিয়ে এখন বই-ই শিশুদের অপেক্ষায় থাকে। আমাদের সার্বিক প্রচেষ্টা ও মুদ্রণ শিল্প মালিকদের সহযোগিতায় এই বিশাল কর্মযজ্ঞ যথাসময়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে।
এবার ৩৫ কোটি বই দেশীয় মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো ছেপেছে। এতে গতবারের চেয়ে অন্তত ১০০ কোটি টাকা কম খরচ পড়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি সারা দেশে পাঠ্যপুস্তক উৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয়ভাবে পাঠ্যপুস্তক উৎসবের মূল ভেন্যু ঢাকায় দুটি স্থানে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই দিন সকালে রাজধানীর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় আজিমপুর সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করবে। এর আগের দিন গণভবনে বই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানান, আগামী ১ জানুয়ারি ২০২০ শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে সারা দেশের ৪ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ১৯৮ জন ছাত্রছাত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হবে ৩৫ কোটি ৩১ লাখ ৫৪ হাজার ৬৩৮ কপি পাঠ্যবই। এ বই ছাপতে ব্যবহার করা হয়েছে ৮৮ হাজার টন কাগজ। শিশুরা খালি হাতে স্কুলে গিয়ে ওইদিন নতুন ক্লাসে উঠে ঝকঝকে বই নিয়ে আনন্দচিত্তে বাড়িতে ফিরবে। তারা জানান, সব বই এবার দেশেই ছাপা হয়েছে। সারা দেশের প্রায় ৪০০ মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের (প্রিন্টিং প্রেস) ৯৮ হাজার কর্মী রাত জেগে পাঠ্যবই ছাপা, কাটিং ও বাইন্ডিংয়ের কাজে জড়িত ছিলেন। আর এসব বই ছেপে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দিতে কাজ করেছে ১৬ হাজার ৪০০টি।
২০২০ শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যের বই ছাপতে সরকারের ৯২৯ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার দাখিল স্তরের বই ছাপতে খরচ হবে ৪৬৯ কোটি টাকা। মাধ্যমিক স্তরের প্রায় আট কোটি বইয়ের কাগজ কিনে দেওয়া হয়েছে। তাতে আরও ব্যয় হবে ১৯৭ কোটি টাকা। আর প্রাথমিক স্তরের বই ছাপতে খরচ হবে ২৬৪ কোটি টাকা।
এনসিটিবি জানিয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষের প্রাক-প্রাথমিক স্তরের ৩২ লাখ ৭২ হাজার ১৮৬ জন কোমলমতি ছাত্রছাত্রীর জন্য ৬৬ লাখ ৭৫ হাজার ২৭৬ কপি বই ছয়টি লটে ছাপানো হয়েছে। প্রাথমিক স্তরের (প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি) ২ কোটি ৪ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৫ ছাত্রছাত্রী হাতে পাবে ৯ কোটি ৮৫ লাখ ৫ হাজার ৪৮০ কপি বই। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৯৭ হাজার ৫৭২ জন শিশুর জন্য প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির জন্য পাঁচটি ভাষায় রচিত ২ লাখ ৩০ হাজার ১০৩ কপি বই ছাপানো হয়েছে। ইবতেদায়ি (মাদ্রাসার প্রাথমিক) স্তরের ৩২ লাখ ৬৯ হাজার ৭১৫ জন শিশুর জন্য ২ কোটি ৩২ লাখ ৪৩ হাজার ৩৫ কপি বই ছাপানো হয়। এর সঙ্গে সারা দেশের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ৭৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হয় ৯ হাজার ৫০৪টি বই। মাধ্যমিক স্তরে মোট ছাপা হয়েছে ২৪ কোটি ৭৭ লাখ ৪২ হাজার ১৭৯ কপি বই। এর বাইরে কারিগরি স্তরের জন্য ১৬ লাখ ৩ হাজার ৪১১ কপি বই, এসএসসি ভোকেশনালের জন্য ২৭ লাখ ৬ হাজার ২৮ কপি বই এবং দাখিল ভোকেশনাল স্তরের জন্য ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৬৫ কপি বই ছাপানো হয়েছে।
২০১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে সরকার ধারাবাহিক সাফল্য হিসেবে নতুন বছরের শুরুতেই সারা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করে আসছে। চলতি ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট ২৯৬ কোটি ৭ লাখ ৮৯ হাজার ১৭২ কপি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রতিবছর সরকারের বিশাল এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করছে; যা সারাবিশ্বে নজরকাড়া সুনাম বয়ে এনেছে।