ইডেনে বাজলো গোলাপি বলের টেস্টের ঘণ্টা , হাসিনা-মমতা বৈঠক

ইডেনে বাজলো গোলাপি বলের টেস্টের ঘণ্টা , হাসিনা-মমতা বৈঠক

ক্রীড়া ডেস্ক ।।

কলকাতার ইডেন গার্ডেনস আরও একটি ক্রিকেট ইতিহাসের সাক্ষী হল । তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে দড়ি টেনে ঘণ্টা বাজালেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই ঘণ্টাধ্বনিতেই মাঠে গড়ালো গোলাপি বলে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রথম দিবারাত্রির টেস্ট। বাংলাদেশ বা ভারত আগে কখনও দিবারাত্রির টেস্ট খেলেনি। তাই গোলাপি বলের সঙ্গে দুই দেশের ক্রিকেটারদের মাঠের মোকাবেলা এটাই প্রথম। আর সেই মাহেন্দ্রক্ষণটি স্মরণীয় করে রাখতে এলাহি আয়োজন করেছেন ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের নতুন সভাপতি বাংলার ছেলে সৌরভ গাঙ্গুলী। ভারত দলের সাবেক অধিনায়ক গাঙ্গুলী ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গলেরও সভাপতি। কলকাতা টেস্টের সূচনালগ্নে উপস্থিত থাকতে তিনিই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছিলেন।
পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে। তবে পূর্ব-নির্ধারিত কর্মসূচির কারণে মোদী নিজে কলকাতার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি। বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে চড়ে গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে প্রধানমন্ত্রী পৌঁছান কলকাতায়। হোটেল তাজ বেঙ্গলে সামান্য বিশ্রাম নিয়েই তিনি চলে যান ইডেনে। দুই টেস্টের এই সিরিজের প্রথমটিতে ইতোমধ্যে হেরে গেছে টাইগাররা। কলকাতা টেস্টে টসে জিতে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলে খেলা শুরুর আগে শেখ হাসিনা আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে মাঠে যান সৌরভ গাঙ্গুলী। এ সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে হাত উঁচু করে দর্শকদের তুমুল উল্লাস আর শুভেচ্ছার জবাব দিতে দেখা যায়। খবর বিডিনিউজের।
কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে শুক্রবার বাংলাদেশ-ভারত দিবারাত্রির টেস্ট শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাঠে গিয়ে খেলোয়াড়দের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে মঞ্চে রাখা ঘণ্টা বাজিয়ে শেখ হাসিনা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম দিন-রাতের টেস্টের সূচনা করেন। এর আগে মাঠে দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়।
এই টেস্ট ঘিরে কলকাতা এখন রীতিমত গোলাপি জ্বরে আক্রান্ত। পুরো ইডেন গার্ডেনকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে নতুন সাজে। মূল প্রবেশদ্বার সাজানো হয়েছে ফুল দিয়ে। সেখানেও রয়েছে গোলাপি রঙয়ের প্রাধান্য। কলকাতার বিভিন্ন স্থাপনাতে রাতে হয়েছে গোলাপী আলোকসজ্জার ব্যবস্থা। এমনকি গঙ্গায় নৌকার সাজেও গোলাপি।
এদিকে শুক্রবার বিকেলে হোটেল তাজ বেঙ্গলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টেস্টের প্রথম সেশনের খেলা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে হোটেলে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। মধ্যাহ্নভোজ শেষে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে তিনি বাংলাদেশ থেকে বাইসাইকেল আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন তাদের বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে বাইসাইকেলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আমরা বাংলাদেশ থেকে বাইসাইকেল আমদানি করতে আগ্রহ প্রকাশ করছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বাংলাদেশের কোনো ব্যবসায়ী চাইলে পশ্চিমবঙ্গে বাইসাইকেল তৈরির কারখানা করতে পারেন। এক্ষেত্রে তাদের জমি দিয়ে সহায়তা করা যেতে পারে। কোনো ব্যবসায়ী বাংলাদেশ সীমান্তে বাইসাইকেল কারখানা করে পশ্চিমবঙ্গে বাইসাইকেল আমদানি করলে তাদের পরিবহন খরচ কম হবে।
বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের সমাজকল্যাণ বিষয়ক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি, শিল্প এসব ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে পারে। পুরো ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ এবং পশ্চিমবঙ্গে শতভাগ শিক্ষার্থী বৃত্তির আওতায় রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রীকে জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রায় দুই কোটি শিক্ষার্থীর বৃত্তি পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকা মায়েদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সাক্ষাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী উপস্থিত ছিলেন।