সাগরে চলছে ইলিশ ধরার মহোৎসব। প্রতিদিন হাজার হাজার টন ইলিশ নিয়ে মোকামে ফিরছে মাছ ধরার ট্রলার, ইঞ্জিন বোটগুলো। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চাঁদপুর, বরিশালের প্রধান প্রধান বিপনন কেন্দ্রগুলো ছোট-বড় ইলিশে সয়লাব। কিন্তু তারপরও খুচরা বাজারে দাম কমছে না। যে হারে ধরা পড়ছে সে হারে বাজারে আসছে না। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে আবার মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আসছে এমন একটি সংবাদে সতর্ক আড়তদাররা। তাই যা ইলিশ ধরা পড়ছে তার অর্ধেক পাঠানো হচ্ছে হিমাগারে। বাকিটা দিচ্ছে বাজারে। এতে খুচরা বাজারে দামের নিয়ন্ত্রণটা থাকছে তাদের হাতে। অন্যদিকে বাজারে প্রচুর ডিমওয়ালা মা ইলিশ এবং জাটকাও বিক্রি হচ্ছে দেদারসে।
৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর সাগরে গিয়ে ট্রলার পূর্ণ করে ফেরার পর দেখা যাচ্ছে দেড় দুই কেজি ওজনের ইলিশের ৬০ ভাগই ডিমওয়ালা মা মাছ। বিষয়টি নজরে এসেছে মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে। ইলিশের প্রজনন মৌসুমের সময়সূচি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সব কিছু হিসাব-নিকাশ করে সেপ্টেম্বরে বা অক্টোবরে আবার ২০-২২ দিনের জন্য সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্বান্ত আসছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
মৎস্য অধিদফতরের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এখন চলছে ইলিশের ভরা মৌসুম। আগামী তিন মাস থাকবে এই মৌসুম। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার গত কয়েক বছর ধরে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে আসছে। চালিয়ে যাচ্ছে প্রচার-প্রচারণা। বছরের নির্দিষ্ট একটি সময় সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এ সময়ে তালিকাভুক্ত জেলে পরিবারগুলোকে রেশন সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এসব কারণে প্রতিবছর ইলিশের উৎপাদন বেড়ে চলছে। আগে যেখানে ইলিশ ধরা পড়ত ২ থেকে আড়াই লাখ টন তা এখন বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। চলতি বছর ৫ লাখ টন ইলিশ শিকারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে মৎস্য অধিদফতর।
একাধিক ফিশিং ট্রলার মালিক, ইঞ্জিনিয়ার, আড়তদারের সঙ্গে আলাপ হয় ইলিশ পরিস্থিতি নিয়ে। ২০ মে থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ ছিল ওই সময়ে ইলিশের প্রজনন মৌসুম বলে। তাহলে কেন এত ডিমওয়ালা মা ইলিশ ধরা পড়ছে তা নিয়ে তারাও বিস্মিত। তারা জানান, ডিমওয়ালা মাছের সঙ্গে ধরা পড়ছে প্রচুর জাটকা। মোকামে ফেরার পথে বাছাই করে জাটকা সাগরে ফেলে দেওয়া হচ্ছে ঝামেলা হতে পারে সে আশঙ্কায়। ইলিশ বড় হওয়ার জন্য জাটকা (৯ ইঞ্চির কম সাইজের) ধরা থাকে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আট মাস। এত কিছুর পরেও ঝাঁকে ঝাঁকে ডিমওয়ালা ইলিশ ও জাটকা ধরা পড়ায় মাছ ধরা নিষিদ্ধের সময়সীমার যথার্থতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি তাদের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা এ নিয়ে ভাবছেন কি করা যায়।