কক্সবাজারবাসীরা রোহিঙ্গাদের কারণে ‘মানসিক চাপে’ : টিআইবি

কক্সবাজারবাসীরা রোহিঙ্গাদের কারণে ‘মানসিক চাপে’ : টিআইবি
কক্সবাজারবাসীরা রোহিঙ্গাদের কারণে বর্তমানে ‘মানসিক চাপে’ : টিআইবি

পোস্টকার্ড প্রতিবেদক ।।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়ে বর্তমানে মানসিক চাপে ।

বৃহস্পিতবার মাইডাস সেন্টারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত "বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের (রোহিঙ্গা) নাগরিকদের বাংলাদেশে অবস্থান: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়" শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

টিআইবি জানায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পেগুলোতে ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ও ৫০ শতাংশ শিশু রক্তশূন্যতায় ভুগছে। এছাড়াও ৬-২৩ মাস বয়সীদের মধ্যে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ শিশু ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য খাদ্য পায়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় স্থানীয় জনগােষ্ঠী অর্থনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশগত, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিভিন্ন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

সামাজিক ঝুঁকিগুলোর মধ্যে রয়েছে- স্থানীয়রা সংখ্যালঘু হয়ে যাচ্ছে, কক্সবাজারের স্থানীয় অধিবাসী মােট জনসংখ্যার ৩৪.৮%, যেখানে রােহিঙ্গা জনগােষ্ঠী ৬৩.২%, স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে মানসিক চাপের ঝুুঁকি তৈরি ইচ্ছে। এছাড়া সরকারি হাসপাতালগুলাের মােট চাহিদার ২৫ শতাংশের অতিরিক্ত রােহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য সেবায় ব্যয় হচ্ছে। ফলে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে স্থানীয় জনগােষ্ঠীর। পাশাপাশি স্থানীয়দের খাদ্য নিরাপত্তার ঝুকি তৈরি হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজার ও বাংলাদেশ চরম অর্থনৈতিক ঝুঁকিগুলাের মধ্যে রয়েছে। অল্প পারিশ্রমিকের বিনিময়ে স্থানীয়রা বিভিন্ন কাজে (লবণ চাষ, চিংড়ি হ্যাচারি, চাষাবাদ) রোহিঙ্গাদের নিয়ােজিত করছে। ফলে রােহিঙ্গা শ্রমিকদের সহজলভ্যতার কারণে স্থানীয়রা কাজের সুযােগ হারাচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন পণ্যের হঠাৎ চাহিদা বৃদ্ধিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রােহিঙ্গা, মানবিক সহায়তায় নিয়ােজিত কর্মী ও সরকারি কর্মকর্তাদের যানবাহন এবং ত্রাণবাহী ট্রাকের চলাচল ও চাপের কারণে রাস্তা-ঘাটের ক্ষতি ও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের কারণে পরিবেশগত ঝুঁকিগুলাের মধ্যে রয়েছে- ৬.১৬৪ একর বনভূমি উজাড় হওয়াসহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়া, ভূমিধসের ঝুঁকি। ক্যাম্পে জঙ্গিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গােষ্ঠীর তৎপরতার ফলে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার ঝুঁকি বিরাজ করছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

আরও জানানো হয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পেগুলোতে পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক প্রচারণার ঘাটতি, প্রতিদিন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গড়ে প্রায় ৮৫-৯০ জন শিশু জন্মগ্রহণ করছে। বর্তমানে ৬০০ জন এইচআইভি রোগী রয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হওয়ার আশংকা সত্ত্বেও কোনো স্ক্রিনিং এর ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশে ডিপথেরিয়া নির্মূল হওয়ার কাছাকাছি থাকলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মহামারির ঝুঁকি। চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত ডিপথেরিয়া আক্রান্ত ৮ হাজার ৬৪১ জন মৃত্যু ৪৫ জন।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সংকট নিরসনের কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন।