কনস্টেবল জনির কবজি প্রতিস্থাপন, কবিরের স্ত্রী গ্রেপ্তার

কনস্টেবল জনির কবজি প্রতিস্থাপন, কবিরের স্ত্রী গ্রেপ্তার
কনস্টেবল জনির কবজি প্রতিস্থাপন, কবিরের স্ত্রী গ্রেপ্তার

ডেস্ক নিউজ, পোস্টকার্ড ।।

আসামির দায়ের কোপে পুলিশ কনস্টেবল মো. জনি খানের বিচ্ছিন্ন হওয়া হাতের কবজি টানা সাড়ে ৯ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে জোড়া লাগানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত। গত রোববার রাজধানীর মোহাম্মদপুরস্থ আল-মানার হাসপাতালে বিকেল ৫টা থেকে রাত ২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত টানা ৯ ঘণ্টা ৪০ মিনিট অস্ত্রোপচার করা হয় জনির। গতকাল বেলা ১২টায় গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের অপারেশন্স ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট শাখার পরিচালক ডা. মো. শহিদুল্লাহ।

তিনি জানান, অপারেশনটি খুবই জটিল ছিল। একটা মানুষের সম্পূর্ণ দ্বিখন্ডিত হয়ে যাওয়া হাতে অনেকগুলো অংশ থাকে। সেগুলোকে আলাদা করে সিরিয়ালি বের করতে হয়েছে। এরপর টানা ৮ ঘণ্টা ৪০ মিনিট অপারেশন করতে হয়েছে। এর আগে অপারেশন পূর্ববর্তী আরও এক ঘণ্টা সময় লেগেছে। সবমিলিয়ে সাড়ে নয় ঘণ্টার অধিক সময় লেগেছে।

ডা. মো. শহিদুল্লাহ জানান, রোগী এখন সম্পূর্ণ শঙ্কামুক্ত। তার হাতের স্বাভাবিক রং চলে এসেছে। নার্ভ যেগুলো জোড়া দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও ফাংশন চলে আসতে শুরু করেছে। হাতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় হাতেও উষ্ণতা চলে এসেছে। আশা করছি, তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবেন। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাজেদুর রেজা ফারুকীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যদের চিকিৎসক দল এই অস্ত্রোপচারে অংশ নিয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় ৩ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করে লোহাগাড়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার রাতে থানার এএসআই মো. মফিজুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় ঘটনার মূলহোতা কবির আহমদ (৩০), তার স্ত্রী রুবি আক্তার (২৮) ও মা মোস্তফা বেগমকে (৫৫) আসামি করা হয়েছে। গতকাল ভোররাতে পার্বত্য লামা উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে কবিরের স্ত্রী রুবি আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়।

লোহাগাড়া থানা সুত্রে জানা যায়, গত ২৪ মার্চ অনধিকার প্রবেশ ও মারামারির অভিযোগে পদুয়া লালারখিল এলাকার আবুল হোসেন কালু বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় একই এলাকার মৃত আলী হোসেনের পুত্র কবির আহমদকে আসামি করা হয়। গত রোববার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করতে বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশের একটি টিম। এ সময় আসামি কবির আহমদ গ্রেপ্তার এড়াতে ধারালো দা দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করেন। এতে দায়ের কোপে কনস্টেবল মো. জনি খানের বাম হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এছাড়া পুলিশের আরেক কনস্টেবল শাহাদাত হোসেন ও মামলার বাদী আবুল হোসেন কালু আহত হন। তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে কনস্টেবল জনি ও আবুল হোসেন কালুকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন চিকিৎসক। একইদিন আশংকাজনক অবস্থায় কনস্টেবল জনিকে হেলিকপ্টার যোগে নিয়ে রাজধানীর আল-মানার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ঘটনার পর পরই আসামি কবির আহমদ পালিয়ে যায়।

লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান জানান, পুলিশের দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারধরের অপরাধে ৩ জনকে আসামিকে করে থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ঘটনার মূলহোতা কবির আহমদকে গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মামলার পর তার স্ত্রী রুবি আক্তারকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। এছাড়া ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে কনস্টেবল জনি খানের বিচ্ছিন্ন হওয়া কবজি জোড়া লাগানো হয়েছে। বর্তমানে শঙ্কামুক্ত আছেন তিনি।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;