করোনা রোগে ব্যবহৃত ওষুধের দাম বাড়ছেই , দুশ্চিন্তায় প্রশাসন- অভিযানেও কাটছে না সংকট

করোনা রোগে ব্যবহৃত ওষুধের দাম বাড়ছেই , দুশ্চিন্তায় প্রশাসন- অভিযানেও কাটছে না সংকট

নাজিম মুহাম্মদ ।।

করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগে ব্যবহৃত ওষুধের দাম, ওষুধ নিয়েই যত দুশ্চিন্তা প্রশাসনের, অভিযানেও কাটছে না সংকট ।

করোনা রোগে ব্যবহৃত ওষুধের আকাশ ছোঁয়া দাম । অনেক সময় বাড়তি দাম দিয়ে মিলছে না প্যারাসিটামল কিংবা সর্দিকাশিতে ব্যবহৃত ওষুধ। এক পাতা ডক্সিসাইক্লিন ক্যাপসুল মিলানো যেন সাত সমুদ্র জয় করা। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ওষুধের দাম। ওষুধ প্রস্তুুতিকারি প্রতিষ্ঠান দাম না বাড়ালে এক শ্রেণির ওষুধ ব্যবসায়ী ও বিক্রয় প্রতিনিধিরা মিলে ওষুধের কৃত্রিম সংকট করছে।

র‌্যাব ও জেলা প্রশাসনের তিনদফা অভিযান চালানোর পরও ওষুধের পাইকারি ও খুচরা দোকানে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের ব্যবহৃত জরুরি ওষুধের সংকট রয়ে গেছে বাজারে। আগের মতোই অপরিচিতদের কাছে এসব ওষুধ বিক্রি করে না ফার্মেসির মালিকেরা। পরিচিতদের কাছে বিক্রি করলেও আকাশছোঁয়া দাম আদায় করা হচ্ছে।

এরমধ্যে গত ৫ জুন নগরীর ইপিজেড এলাকায় তিনটি ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব সদস্যরা মালিকদের গ্রেপ্তার ও গুদামজাত করা ওষুধ উদ্ধার করেন। র‌্যাব-৭ কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী ফার্মেসির মালিকরা ৭৫০ টাকা মূল্যের ইভেরা-৬ বিক্রি করছিলেন ২৪০০ টাকায়। ৫০ টাকার স্ক্যাবো বিক্রি করছিলেন ৫০০ টাকায়। ২০ টাকার জিঙ্ক ৫০ টাকায়, ২০ টাকার সিভিট ৫০ টাকায়৩৬০ টাকার রিকোনিল ৬০০ টাকায় এবং ৪৮০ টাকার মোনাস-১০ বিক্রি করছিলেন ১০৫০ টাকায়। পরদিন ৬ জুন নগরীর পাইকারি ওষুধ বিক্রয়কেন্দ্র হাজারী গলিতে চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একযোগে অভিযান চালান। অভিযানে গুদামজাত করা ওষুধ ও বিপুল পরিমাণ নকল হ্যান্ড সেনিটাইজার ও পিপিই জব্দ করা হয়। বেশি দামে ওষুধ বিক্রির অপরাধে প্রায় ১১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয় বিভিন্ন ফার্মেসির মালিকের কাছ থেকে।

বুধবার নগরীর কর্নেলহাট এলাকায় কয়েকটি ফার্মেসিতে একই ধরনের অভিযান চালান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিরিন আক্তার। এসময় বিভিন্ন অভিযোগে তিনটি ফার্মেসিকে ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ওষুধ প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়ক মো. কামরুল হাসান এ প্রসঙ্গে বলেন, ওষুধের দাম ঠিক রাখার জন্য আমরা ধারাবাহিকভাবে ফার্মেসির মালিকদের অনুরোধ করে যাচ্ছি। এরপরও কেউ ওষুধের কৃত্রিম সংকট ও দাম বাড়িয়ে ওষুধ বিক্রি করলে অভিযানের আওতায় পড়বেন। তিনি বলেন, ওষুধ বিক্রির সময় ক্যাশ মেমো দিতে হবে। এর একটি অংশ ফার্মেসিতে সংরক্ষণ করতে হবে। এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গত কয়েকদিনে নগরীর বিভিন্ন ফার্মেসিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফেকজোফেনাডিন গ্রুপের ফেনাডিন, ফেকজো আগে প্রতি পাতা খুচরা ৮০ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে দুইশো টাকায়।
মোনাস-১০ ইত্যাদি প্রতিপাতা ওষুধ আগে গড়ে ২২৫ টাকা বিক্রি হতো। এখনতা বিক্রি হচ্ছে চার থেক পাঁচশো টাকায়। ডক্সিসাইক্লিন গ্রুপের ডক্সিন কিংবা ডক্সিক্যাপ এখন বাজারেই নেই। ক্যাপসুলটি আগে প্রতি পাতা বিক্রি করা হতো ২২ টাকা। বর্তমানে পাওয়া গেলেও প্রতি পাতার দাম নিচ্ছে এক থেকে দেড়শো টাকা। ইবারমেকটিন গ্রুপের ইভেরা-৬ কিংবা এসকেবো প্রতিপাতা বিক্রি হতো ১৫০ টাকায় যা এখন ক্রেতাভেদে ৭০০ টাকায়ও বিক্রি করা হচ্ছে। আবার ওষুধটি বাজারে পাওয়াও যাচ্ছে না। এজিথ্রোমাইসিন টেবলেট আগে সর্বোচ্চ তিন থেকে সাড়ে তিনশো টাকায় বিক্রি হতো যা এখন ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।

ওষুধের মতো কৃত্রিম সংকট চলছে বিভিন্ন জীবানুনাশক লিকুইড বিক্রির ক্ষেত্রেও। ফুটপাতে নানা কোম্পানির নামে রাতারাতি কিছু জীবানুনাশক পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু স্বীকৃত কোম্পানির লিকুইড বাজার থেকেই উধাও হয়ে গেছে। করোনাকালে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পর থেকেই নগরীতে চলছে এ ধরনের জীবানুনাশক লিকুইডের সংকট। কোনো কোনো দোকানে বিক্রি হলেও তা যথারীতি অতিরিক্ত দামে কিনতে হয়।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. বদিউল আলম বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের ওষুধসহ সব ধরনের ওষুধের সরবরাহ বাজারে স্বাভাবিক রয়েছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করায় তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলছে। ওষুধের বাজার পুরোপুরি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।