করোনাকালে সীতাকুণ্ডের মানুষ যে সব সংগঠন ও ব্যক্তিত্বকে কাছে পেয়েছে

করোনাকালে সীতাকুণ্ডের মানুষ যে সব সংগঠন ও ব্যক্তিত্বকে কাছে পেয়েছে

এম কে মনির ।। 

প্রাণঘাতী মহামারী কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে গোটা বিশ্ব। এক অপরিচিত সময়ের সাথে সাক্ষাত হয়েছে পৃথিবীর মানুষের।সরকারকেও নিতে হয়েছে নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। প্রায় তিন  হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে বাংলাদেশে।এ যেন ৭১ সালের যুদ্ধের চেয়ে কম।এক অজানা ভাইরাস সকলকে কাবু করে জনজীবনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন এনেছে।দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে ব্যাপক।লকডাউনে হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে নিরুপায়ভাবে ঘরবন্দি হয়েছে । ক্রমশ জৈবিক চাহিদার তাড়নায় হতদরিদ্র মানুষ ছুটে চলেছে দু’মুঠো অন্নের খোঁজে।সমাজের দুঃস্থ, অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষের  এমন সীমাহীন দুর্ভোগে বসে থাকেনি উত্তর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসমূহ, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তিত্বগণ।তারা মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে রেখেছে নানা জনকল্যাণমুখী ভূমিকা।নুন আনতে পানতা ফুরিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছে খাদ্য সহায়তা।সৃষ্টি করেছে জনসচেতনতা, নিয়েছে নানা উদ্যোগ।করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনমূহ নিজেদের এজেন্ডায় হতদরিদ্র মানুষের সহযোগিতাকে সর্বাগ্রে রেখেছে।

সীতাকুণ্ড উপজেলায় করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে শতশত স্বল্প আয়ের পরিবারে। এসব পরিবারের দুঃখ দুর্দশার কথা ভেবে মানবতার কল্যাণে ছুটে চলেছেন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায়। তিনি লকডাউনের প্রথম দিক থেকেই সীতাকুণ্ডের গরীব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ব্যাপারে ছিলো সচেষ্ট। সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ত্রাণ সামগ্রী, সরকারি ত্রান সামগ্রী গ্রহণ ও ন্যার্য প্রাপ্ত মানুষের মাঝে তা বিতরণে নিয়েছেন এক যুগান্তকারী উদ্যোগ।সরকারি সহায়তা ও নিদর্দেশনা বাস্তবায়নে রেখেছেন বলিষ্ঠ ভূমিকা ।তার এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। মিল্টন রায় এর এমন কর্মতৎপরতা সীতাকুণ্ডবাসীর মনে  আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

সীতাকুণ্ড সার্কেলের এসপি শম্পা রাণি সাহা,সীতাকুণ্ড  মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ফিরোজ হোসেন মোল্লা, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবায় এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা বাস্তবায়নে দুর্বার ভূমিকা পালন করেছেন। যা ইতিমধ্যে জন প্রশংসা কুড়িয়েছে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নুর উদ্দিন রাশেদ এর কথা না বললে ভুলই হবে। তিনি সীতাকুণ্ডের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অধিকতর উন্নত করেছেন।সীতাকুণ্ড বাসীর চিকিৎসায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন সর্বাত্নকভাবে।তার কাজ ও কর্মতৎপরতা মানবিক অবদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সীতাকুণ্ডের অনেক ডাক্তারগণ করোনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে।ডাঃবিদ্যুৎ বড়ুয়ার কথা বলতেই হয়।তিনি করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিয়েছেন এক যুগান্তকারী উদ্যোগ।বাংলাদেশে তিনি প্রথম ফিল্ড হসপিটাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন।আর তা সীতাকুণ্ড উপজেলায় স্থাপন করেছেন।

করোনাকালে শুধু প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা নয় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সীতাকুণ্ডের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিগণ।

সীতাকুণ্ডের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব দিদারুল আলম এমপি,উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল্লাহ আল বাকের ভূইয়্যা,উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন করোনাকালে সীতাকুণ্ডবাসীর জন্য এগিয়ে এসেছে উদারচিত্তে।

হতদরিদ্র মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ,করোনা আক্রান্তদের অক্সিজেন সরবরাহসহ মানুষের সেবায় ছুটে চলেছেন নিরন্তর। ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন ত্রাণ সামগ্রী।

সীতাকুণ্ড  সমিতি-চট্টগ্রাম, ইপসা, সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাব, সীতাকুন্ড অনলাইন প্রেসক্লাব , সীতাকুন্ড অনলাইন  জাণালিস্ট এসোসিয়েশন , মাতৃভূমি, বারামখানা, মণিষা, জনসেবা কল্যাণে আমরা, সীতাকুণ্ড যুব উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, দিশারি যুব ফাউন্ডেশন, প্রথম প্রহর ফাউন্ডেশন, পেশকারপাড়া যুব সংগঠন, সীতাকুণ্ড ব্লাড ডোনার্স সোসাইটি, স্বপ্বীল যুব কল্যাণ সোসাইটি, সীতাকুণ্ড ব্লাড ডোনেট গ্রুপ,সীতাকুণ্ড যুব প্রগতিশীল ফাউন্ডেশন, শেখপাড়া সমাজ উন্নয়ন সংস্থা, লিও ক্লাব ও লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগং সীতাকুণ্ড, লিবার্টি,অগ্রনী,সহ সীতাকুণ্ডের  অসংখ্য সংগঠন ত্রান সামগ্রী বিতরণসহ নানাভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। যা বাংলাদেশে বিরল।

শুধু এসব সামাজিক সংগঠন নয় সীতাকুণ্ডের রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ মানুষের পাশে দাঁড়াতে কার্পন্য করেনি।সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগ, সীতাকুণ্ড উপজেলা যুবলীগ,উপজেলা ছাত্রলীগ,কৃষকলীগ সীতাকুণ্ডের মানুষের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছে।

পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, যুবদল,ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবকদলও।সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন ইউনিয়নে হতদরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন এ দলগুলো।

সীতাকুণ্ডবাসীর সেবায় এগিয়ে এসেছে কিছু রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব তন্মধ্যে লায়ন গিয়াস উদ্দিন, ডাঃশাহীদুল আলম মিন্টু,আবুল কাশেম ওয়াহিদী,পারভেজ উদ্দিন সান্টু,হাজী ইউসুফ শাহ,হাজী মহিউদ্দিন,বাড়বাড়কুণ্ড ইউপি চেয়ারম্যান সাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী,বাঁশবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান সওকত আলী জাহাঙ্গীর, ভাটিয়ারি ইউপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দীন, বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেহান উদ্দিন, পৌর মেয়র বদিউল আলমসহ নাম না জানা অসংখ্য ব্যক্তিত্ব।

আর এসব ব্যক্তিত্ব ও সংগঠনসমূহের মানবিক উদ্যোগে ভালো আছে সীতাকুণ্ডবাসী।দেশের অন্য জেলা ও উপজেলায় আমরা অনাহারে থাকার খবরও পেয়েছি সেখানে সীতাকুণ্ডে কোন মানুষ অনাহারে রয়েছে বলে শোনা যায়নি।

সামাজিক পুঁজির যথার্থ ব্যবহার এই সীতাকুণ্ডে হয়েছে। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য সে কথা সীতাকুণ্ডের সামাজিক সংগঠন  ও এসব ব্যক্তিরা প্রমাণ করেছে।তাদের মানবিক উদ্যোগ সীতাকুণ্ডের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকুক।পরবর্তী প্রজন্ম শিক্ষা নিক।মানবতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনে ভূমিকা রাখুক।