তেল ও গো-খাদ্যের চাহিদা মেটাতে সূর্যমুখীর আবাদ বাড়ছে সীতাকুণ্ডে

তেল ও গো-খাদ্যের চাহিদা মেটাতে সূর্যমুখীর আবাদ বাড়ছে সীতাকুণ্ডে
তেল ও গো-খাদ্যের চাহিদা মেটাতে সূর্যমুখীর আবাদ বাড়ছে সীতাকুণ্ডে

মেজবাহ খালেদ ।।

সুলতান আহাম্মদ, সীতাকুণ্ডের লতিফপুরের নীলাম্বর তালুকদার সড়কের সপ্ন বিলাশ মাঠে তাঁর সূর্যমুখীর আবাদ । এ ক্ষেত এখন ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। ফলে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা সূর্যমুখী বাগানের ফুল দেখতে এখন প্রতিদিন সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন হাজারো প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। কেউ দল বেঁধে দেখতে আসছে , কেউ পিকনিক করছে, কেউ সেলফি তোলায় ব্যাস্ত । সুলতানের বাগান দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষ আসছে ।

শুধু  সুলতান না, সীতাকুণ্ডে সূর্যমুখী ফুলের প্রথম চাষেই বাজিমাত করেছেন আরো ৯ কৃষক। তাদের সূর্যমুখী বাগানের ফুল দেখতে এখন প্রতিদিন সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন হাজারো প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। তাছাড়া সূর্যমুখী ফুলের আবাদ দিনদিন বাড়ছে  গ্রামীণ জনপদে। সূর্যমুখী ফুলে ফোটা এক ধরনের শুকনো দানা (বিচি) থেকে উৎপাদিত হয় সান ফ্লাওয়ার তেল, যা ভেজালমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত; যার চাহিদা সারাদেশে। এর দামও বেশ ভালো। পাশাপাশি সূর্যমুখী ফুলের উচ্ছিষ্ট থেকে বের হয় ‘খইল’ নামের এক ধরনের গরুর খাদ্য। বর্তমানে বাজারে ভোজ্য তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় প্রান্তিক কৃষকরা এখন সম্পূর্ণ বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখী চাষাবাদ শুরু করেছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানা যায়, তৈল উৎপাদনের লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সীতাকুণ্ডে প্রথমবারের মতো দুটি ইউনিয়নে সূর্যমুখী চাষ শুরু হয়েছে। মোট ১০ জন কৃষককে কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রণোদনা দিয়ে চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফলন হয়েছে উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল ব্লকের একটি ক্ষেতে। এই ক্ষেতটির মালিক আলী হোসেন জুয়েল যৌথভাবে চাষ করেন তার বন্ধু আরিফ হোসেন, পারভেজ, এমরান ও ইদ্রিসকে সঙ্গে নিয়ে। পরে এই ৫ জনের চেষ্টা ও কৃষি অফিসারের দিক নির্দেশনায় একটি সফল সূর্যমুখী ক্ষেত গড়ে তোলে।

টেরিয়াইল ব্লকের ক্ষেতের উদ্যোক্তা আলী হোসেন জুয়েল বলেন, আমাদের ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার পিপাস চৌধুরী আমাকে সূর্যমুখী তেল উৎপাদনের পরামর্শ দেন। এজন্য তিনি বিনামূল্যে বীজ, সারও প্রদান করেন। কিন্তু আমার কাছে সূর্যমুখী চাষ ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়েছিলো। কিন্তু আমার চার বন্ধু মিলে ৩৩ শতক জমিতে ডিসেম্বরের শেষ দিকে বীজ বপন করি। মার্চের প্রথমে ফুল আসে। এখন পুরো ক্ষেত ফুলে ছেয়ে গেছে। এতে প্রায় এক কেজি বীজ ও প্রচুর সার লেগেছে। এ ছাড়াও ১৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। আর এ জমি থেকে ৭০ লিটার সূর্যমুখী তেল এবং প্রায় ২৫০ কেজি গো খাদ্যের খৈল উৎপাদন হবে। যা বিক্রি করলে ৫০-৬০ হাজার টাকার মতো পাওয়া যাবে।

অন্যদিকে লতিফপুরের সুলতান আহাম্মদ জানান, তেল উৎপাদনের লক্ষ্যে আমি কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এই ক্ষেতটি গড়ে তোলা হলেও জমিটি হলুদ সূর্যমুখীতে ছেয়ে যাবার পর এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় এখন প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন এই ক্ষেতে। খরচের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি আয় হবে বলে আসা প্রকাশ করেন তিনি ।

উপজেলা কৃষি অফিসার হাবীব উল্লাহ বলেন, সূর্যমুখী ফুলের চাষে সফলতা দেখে অন্য কৃষকরাও আগ্রহী হয়েছে। তাই আগামীতে আরো অনেক কৃষক সূর্যমুখী চাষ করবে বলে আমরা আশাবাদী।

খালেদ/ পোস্টকার্ড ;