করোনার বিপজ্জনক জোন হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের ৫ উপজেলা

করোনার বিপজ্জনক জোন হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের ৫ উপজেলা

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

চট্টগ্রামবাসী করোনভাইরাসে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের (গণ সংক্রমণ) চূড়ায় উঠতে শুরু করেছে । এখন অপেক্ষা শুধু রেড জোন ঘোষণার। গেল কয়েকদিনে মহানগরী ছাড়িয়ে উপজেলাগুলোতে হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। যদিও এখনও মোট আক্রান্তের ৭১ শতাংশ মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। আর ২৯ শতাংশ চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার। তবে শুরুর দিকে যেভাবে মহানগরীতে করোনা পজিটিভ রোগী বেড়েছে, সেই চিত্র এখন ধীরে ধীরে দেখা যাচ্ছে উপজেলাগুলোতেও।

চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তের প্রথম এক মাসে (৩ মে) মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ৮১ জন। এর মধ্যে মহানগরীর ৫০ জন এবং উপজেলার ৩১ জন। দ্বিতীয় মাসে (৩ জুন) সে সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩৯৭ জনে। এর মধ্যে মহানগরের ২ হাজার ৫৮০ জন এবং উপজেলার ৮১৭ জন। কিন্তু গত ছয় দিনে সে সংখ্যাটা ৮৮১ জন বেড়ে চার হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে উপজেলারই ৪১২ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অঘোষিত লকডাউন শেষে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অবাধ যাতায়াতের কারণে উপজেলার বাসিন্দারা কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের শিকার হয়েছেন। যে কারণে শুধু করোনা আক্রান্তের দ্বিতীয় মাসেই ১৪ উপজেলার মধ্যে পাঁচ উপজেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক ছাড়িয়েছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে পটিয়া উপজেলায়। শনাক্তের প্রথম মাসে যেখানে রোগী শনাক্ত হয় মাত্র ২ জন, সেখানে দ্বিতীয় মাসেই শনাক্ত হয়েছে ১৪৪ জন। শেষ ছয় দিনে তা ১৮৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এরপর রয়েছে হাটহাজারী উপজেলা। করোনা শনাক্তের প্রথম মাসে এই উপজেলায় আক্রান্ত হয় একজন। দ্বিতীয় মাসে সে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১৩৬ জনে। কিন্তু গেল কয়দিনে রোগীর সংখ্যা এখন ১৮১ জন। এর পরে অবস্থানে রয়েছে বোয়ালখালী ও সীতাকুণ্ড উপজেলা।

সীতাকুণ্ড উপজেলায় প্রথম মাসে শনাক্ত হয় তিনজন, দ্বিতীয় মাসে ১০৫ জন আর এখন সেই সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ১৪৩ জনে। বোয়ালখালী উপজেলায় প্রথম মাসে শনাক্ত হয় একজন মাত্র রোগী, কিন্তু দ্বিতীয় মাসেই সেটি দাঁড়ায় ৫৮ জনে। গেল ছয় দিনে এ সংখ্যা এখন ১৪৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এরপর রেড জোনের তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে চন্দনাইশ উপজেলা। করোনা শনাক্তের প্রথম মাসে সেখানে শনাক্ত হয় মাত্র দুইজন। দ্বিতীয় মাসে সে সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৫ জন। কিন্তু গেল কয়দিনে এ সংখ্যা এখন ১১১ জনে এসে দাঁড়িয়েছে।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে করোনা পরীক্ষার নয়দিনের মাথায় প্রথম একজন ষাটোর্ধ ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। যা গত ৩ এপ্রিল ৩৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজে (বিআইটিআইডি) এ রোগী শনাক্ত করেন। এর আগে আরও ৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। তবে আক্রান্ত ব্যক্তি ছাড়া বাকি সকলের করোনা নেগেটিভ আসে। তবে, প্রথম দিকে ওই রোগী হিস্ট্রি গোপন করলেও পরবর্তীতে জানা যায় সুপার শপে চাকরি করা ছেলের সংস্পর্শেই তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ধীরে ধীরে এক দুই তিন করে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের শিকার চট্টগ্রামবাসী। সংখ্যাটা এখন সাড়ে চার হাজারের কাছাকাছি।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘এখনও চট্টগ্রামে মহানগরীর চেয়ে উপজেলায় করোনা রোগী কম। তাই আমাদের হিসাবে যেসব জায়গায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে সেসব এলাকাকে রেড জোন ধরা হয়েছে। সেই হিসাবে মহানগরী আর উপজেলায় রেড জোন ধরা হয়েছে। জাতীয়ভাবে মন্ত্রণালয়ের রেড জোনের নির্দেশনা এখনও আসেনি। এটার এ-টু-আইয়ের আলাদা নীতিমালা রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে নির্দেশনা আসবে। তবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সিটি করপোরেশন জোন এলাকার তালিকা ঘোষণা করবে এবং তারাই বাস্তবায়ন করবে।’

সুত্র.চট্টগ্রাম প্রতিদিন