ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে একবার করোনাভাইরাস প্রবেশ করলে মহামারী তৈরি হবে

ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে একবার করোনাভাইরাস প্রবেশ করলে মহামারী তৈরি হবে
ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে একবার করোনাভাইরাস প্রবেশ করলে মহামারী তৈরি হবে

স্বপ্না চক্রবর্তী ।।

একবার ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রবেশ করলে তা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ। তাই যেভাবেই হোক একে দেশে প্রবেশ করতে না দিয়ে প্রতিরোধ করা অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক তৈরি করা নতুন করোনাভাইরাসের বিষয়ে সময়ের আলোকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যেহেতু এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করা যায়নি তাই এটি প্রতিরোধে সতর্কতার বিকল্প নেই। বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। দেশটির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ শিক্ষাবিনিময় চলে আসছে এত দিন ধরে। তাই দেশটিতে আমাদের নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। তবে এ মুহূর্তে পারতপক্ষে কেউ চীনে যাবে না বা চীন থেকে আসাও উচিত হবে না। যারা এসে গেছে তাদের তো আইসোলেটেড অবস্থায় রাখা হয়েছেই। তবে নতুন করে যদি কেউ আসে তাহলে তাকে ১৪ দিন অবজারভেশনে রাখতে হবে। সরকারিভাবে তো এই প্রক্রিয়া চলছেই। তবে যারা নিজে উদ্যোগে দেশে আসছেন তাদেরও নিজ উদ্যোগেই ১৪ দিন নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকতে হবে। কারণ এই ভাইরাস ১৪ দিন পর্যন্ত সুপ্ত অবস্থায় থাকে। তিনি বলেন, এ রোগটির কারণ এখনও অজ্ঞাত। তবে পশু-পাখি থেকে ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকায় যাদের বাড়িতে গৃহপালিত পশু-পাখি রয়েছে যেমনÑ গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগিÑ এদের মধ্যে কোনোটিকে একটু দুর্বল বা অসুস্থ মনে হলেই আলাদা রাখতে হবে। শুধু তাই নয়, তাদের স্পর্শ করে হাত ভালো করে ধোয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

দেশের অভ্যন্তরে এই রোগ যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিমানবন্দর, স্থলবন্দরগুলোতে বিশেষ স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, নিউমোনিয়াসদৃশ করোনাভাইরাসের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের জন্য তথ্য কেন্দ্র খুলেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর। এরই মধ্যে বিশে^র বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্তের লক্ষণ মিলেছে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ থাকলেও দেশীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এর মোকাবেলায় প্রস্তুত আছে। এরই মধ্যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। 

তিনি বলেন, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এমন রোগী বাংলাদেশে এখনও পাওয়া না গেলেও ঝুঁকি রয়েছে। দেশে এখন ‘কমন কোল্ড’-এর সময়। আর যদি ‘কো মরবিডিটি’ থাকে তাহলে যেকোনো ভাইরাসে যেকোনো ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলে সেটা জটিলতার দিকে যেতে পারে। ‘মার্স’ ও ‘সার্স’ পরিবারের এই নতুন করোনাভাইরাস সম্পর্কে এখনও পুরোপুরি জানা না যাওয়ায় সমস্যাটা আরও জটিল হচ্ছে। তাই সর্দি-কাশিতে মাস্ক ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

তিনি বলেন, বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন এই ভাইরাসের নাম দিয়েছে ২০১৯-এনসিওভি। নতুন এই করোনাভাইরাসের লক্ষণ হলো জ্বর, কফ ও শ^াসকষ্ট। এর থেকে নিউমোনিয়া, তারপর কিডনি ফেইলিউর হওয়ার ঘটনাও যেহেতু ঘটছে, সেহেতু সামান্য জ্বর-কাশিকেও অবহেলা করার সুযোগ নেই। 

প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনের হুবেই প্রদেশে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২২ জনে। এ ভাইরাসে চীনের হুবেই প্রদেশ ও বিভিন্ন এলাকায় এই পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৫৪৬ জন আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে উহানে এক মার্কিন ও জাপানি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। সংক্রামক ভাইরাসটি এরই মধ্যে আরও অন্তত ২৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে তিন শতাধিক মানুষকে আক্রান্ত করেছে। সম্প্রতি চীনের উহান শহরের একটি সি-ফুড মার্কেট থেকে নতুন করোনাভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে।