চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে রেজাউল করিমকে জেতাতে আওয়ামী লীগে ঐকমত্য

শীর্ষ নেতাদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক,কোন্দল নিরসন করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার

চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে রেজাউল করিমকে জেতাতে আওয়ামী লীগে ঐকমত্য
চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে রেজাউল করিমকে জেতাতে আওয়ামী লীগে ঐকমত্য

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা চট্টগ্রামের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে ‘রুদ্ধদ্বার’ বৈঠক করেছেন । এ সময় তারা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে বিজয়ী করতে দলীয় কোন্দল নিরসনসহ দলের নেতাকর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন ।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান সমন্বয়কারী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপির উদ্যোগে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ব্যানারে গতকাল সন্ধ্যায় নগরীর হোটেল পেনিনসুলায় এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষ হয় রাত সাড়ে ৯টায়।

সভায় আওয়ামী লীগের দলীয় মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নেতাসহ চট্টগ্রামের শীর্ষ নেতারা মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে বিজয়ী করতে একমত হয়েছেন। বৈঠক শুরুর আগে অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে সভার প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের সাথে কথা হলে তারা সভার বিষয়ে বিস্তারিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন। বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় নেতা, নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার নেতারা ছাড়া অন্য কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি।

সভায় শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। সভার শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, রেজাউল করিম চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রার্থী, তাঁকে যেকোনো মূল্যে জিতিয়ে আনতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে রেজাউল করিম চৌধুরীকে জিতিয়ে এনে প্রধানমন্ত্রীকে এই চট্টগ্রামের মেয়র উপহার দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী রেজাউল করিম চৌধুরীর মতো একজন তৃণমূলের রাজনৈতিক কর্মীকে মনোনয়ন দিয়ে মূল্যায়ন করেছেন। এখন রেজাউল করিম চৌধুরীকে জিতিয়ে এনে আমাদের নেত্রীর(আওয়ামী লীগ সভাপতি) সম্মান দেয়া উচিত। আমাদের সকলের উচিত, ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে নৌকার প্রার্থীকে জিতিয়ে আনা।

সূচনা বক্তব্যে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন, নেত্রী আমাকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমার একটা দায়িত্ব-কর্তব্য আছে। এজন্য আমি সবাইকে নিয়ে বসলাম। অতীতেও আমি আমার নিজ দায়িত্বে মহিউদ্দিন চৌধুরীর নির্বাচনে লিফলেট বিতরণ করেছি। তখনও আমাকে কেউ কাজ করার জন্য বলেনি। এখনও দলের জন্য কাজ করবো। নেত্রী আমাকে অনেক দিয়েছেন। আমার আর চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। যতদিন বেঁচে থাকবো ততনদিন দলের জন্য কাজ করে যাব।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আওয়ামীলীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি, আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক(চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) আহমদ হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আওয়ামীলীগের উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন ও আওয়ামীলীগের দলীয় মেয়র প্রার্থী এম. রেজাউল করিম চৌধুরী। এছাড়াও সভায় মেয়র পদে আওয়ামীলীগের অন্যান্য যেসব নেতা দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন তাদের মধ্যে নগর আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, আবদুচ ছালাম, আলতাফ হোসেন বাচ্চু, সেলিনা খান বক্তব্য রাখেন।

নগর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের পরিচালনায় সভায় দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি, উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম.এ সালাম, এম.এ লতিফ এমপি, নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, দিদারুল আলম এমপি, মাহফুজুর রহমান এমপি, খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি, উত্তর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমানসহ মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, মরা গাঙ্গে কখনো জোয়ার আসে না। বিএনপির মরা গাঙ্গে আর কখনো জোয়ার আসবে না। বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত দল। তারা নির্বাচনে অংশ নিলেও নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে তারা সরে দাঁড়ায়।

তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের বিকল্প কোন দল নেই। আওয়ামীলীগ বিশাল সাগরের মতো। এখানে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকলেও কারো সাথে দ্বন্দ্ব নেই।

আওয়ামীলীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী রেজাউল করিম চৌধুরীকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছেন। এখানে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনও উপস্থিত আছেন। এতেই বুঝা যায়, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে নীতি আদর্শ। এই আদর্শ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। এর নেতৃত্বে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রামের ঐক্যবদ্ধ আওয়ামীলীগ রেজাউল করিম চৌধুরীকে জয়ী করে প্রধানমন্ত্রীকে মেয়র পদটি উপহার দেবে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, রেজাউল করিম চৌধুরী দীর্ঘদিনের পুরনো এবং পরীক্ষিত রাজনীতিক। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবাই উনাকে গ্রহণ করেছেন। এখন উনাকে যে কোনো মূল্যে জিতিয়ে আনাই হবে আমাদের প্রধান কাজ। সুতরাং নেত্রীর সিদ্ধান্তের কথা মাথায় রেখে সবাইকে রেজাউল করিম চৌধুরীর জন্য কাজ করতে হবে।

সভায় মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন বলেন, রেজাউল করিম ভাইকে প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি আমাদের দলীয় প্রার্থী। তাকে জয়ী করে প্রধানমন্ত্রী কাছে মেয়র পদটি উপহার দিতে হবে। রেজাউল ভাইকে জিতিয়ে আনার জন্য আমি সর্বোচ্চ যা যা করার দরকার, সবই করবো। এখানে বিন্দুমাত্র কোন কার্পণ্য করবো না। কারণ মেয়র নির্বাচনকে আমরা সিরিয়াসলি নিয়েছি। আমরা নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব।

নির্বাচনে দলীয় নেতাকর্মীদেরকে ডোর টু ডোর গিয়ে ক্যাম্পেইন করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু মিছিল-মিটিং করলে হবে না। হাউজ ক্যাম্পেইন করতে হবে। ভোটারদের ঘরে ঘরে যেতে হবে। ভোটারদের বুঝাতে হবে। তাদেরকে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেই হবে।
এ লক্ষ্যে ২৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম নগরের আওতাধীন ওয়ার্ড ও থানা কমিটি এবং কার্যনিবাহী কমিটির সদস্যদের নিয়ে সভা করা হবে বলেও তিনি জানান। কাউন্সিলর পদে যাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে এবং যারা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন, বিরোধিতা ঠেকাতে তাদের ডেকে মতবিনিময় করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে তিনি অনুরোধ জানান। এসময় মেয়র নাছির উদ্দিন ফেসবুকে পরস্পরের বিরুদ্ধে লেখালেখি বন্ধের বিষয়ে মোশাররফ হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘ ফেসবুকে একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে লিখছেন। এটা বন্ধ করা উচিত। এটা নিয়ে যদি কোনো ঘটনা হয়ে যায়, তখন দায় এসে পড়বে আমি কিংবা নগর আওয়ামী লীগের ওপর।

মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন,আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। আমি বিভিন্ন সময়ে দলের মনোনয়ন চেয়েছি। না দিলেও অভিযোগ করিনি। দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রী আমাকে নৌকা দিয়েছেন। অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি কোনো নতুন মানুষ নই। আমি আপনাদের দীর্ঘদিনের রাজপথের সহযোদ্ধা। আপনাদের অনেকের জন্যও নির্বাচনে নি:স্বার্থভাবে কাজ করেছি। আমি লোভ-লালসার জন্য রাজনীতি করি না। আমি সত্যিকার অর্থে জনগণের সেবক হয়ে কাজ করবো। মানুষকে সেবা দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাশা পূরণ করতে চাই। এজন্য আমি সকল নেতাকর্মীর ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতা চাই।