চন্দ্রঘোনাবাসীর স্বপ্নের ব্রীজ নির্মাণের কাজ বন্ধ পাউবি’র বাঁধায় কারণে

চন্দ্রঘোনাবাসীর স্বপ্নের ব্রীজ নির্মাণের কাজ বন্ধ পাউবি’র বাঁধায় কারণে

জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া ।।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি) বন্ধ করে দিয়েছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের হাশেম খালের উপর ৪ কোটি টাকা বরাদ্দে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধিনে নির্মাণাধীন ব্রীজের কাজ ।
সেচের সমস্যা, হাশেম খাল দিয়ে পানি চলাচলে বাধা সহ বিভিন্ন অজুহাতে তাঁরা ব্রীজ নির্মাণ কাজটি বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানা যায়।
অথচ এলজিইডি বলছে, ২৫ মিটার প্রস্থের খালের উপর ৪০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ব্রীজটি নির্মাণে মাত্র ব্যবহার করা হবে দুটি স্পেন। যেগুলো খালের ভেতর নয়, দুই পাড়ের শুকনো মাটির উপর নির্মাণ করা হবে। এতে সেচের সমস্যা ও পানি যাতায়াতে কোন বাঁধাই সৃষ্টি হবে না।
এভাবে অনাকাঙ্খিত ভাবে চন্দ্রঘোনাবাসীর স্বপ্নের ব্রীজের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল উল্লেখ করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও ব্রীজের নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু করতে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি’র জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ঝুঁকিপূর্ণ চলাচলে শিক্ষার্থী সহ এলাকাবীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত ব্রীজ নির্মাণ করে চলাচলের উপযোগী করা না হলে বেহাল ব্রীজটি ভেঙ্গে গিয়ে প্রাণহানি সহ আরও বড় দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
সুত্রে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী একটি জনবহুল ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ বসবাস করেন। পুরা ইউনিয়নকে দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে ইউনিয়ন দিয়ে বয়ে যাওয়া হাশেম খাল। এই খালের পশ্চিম দিকে কদমতলী, কাটাখালী সহ কয়েকটি গ্রামে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষের বসবাস। যাদের প্রাত্যহিক কাজে এই খাল পাড় হয়ে অপর পাড়ে ইউনিয়নের একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইউনিয়ন পরিষদ, মাদ্রাসা, কৃষি মাঠ সহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন। তাই এতদ অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে হাশেম খালের উপর ব্রীজ নির্মাণের দাবী করে আসছিল।
স্থানীয়দের দাবীর প্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে এই খালের উপর ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব অর্থায়নে কোনরকম মানুষ চলাচলের জন্য চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন সড়ক বরাবর লোহার ফ্রেমের উপর কাঠ দিয়ে একটি ব্র্রীজ নির্মাণ করা হয়। যেটি নির্মাণের কয়েক বছরের মধ্যেই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। প্রতিনিয়ত এই ব্রীজ দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে নিয়মিত ছোট-বড় দুর্ঘটনার মুখে পড়ছেন স্থানীয়রা। এরমধ্যে একজনের প্রাণহানিরও ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবছর ইউপি ও জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের কাছে স্থানীয়রা এখানে একটি ব্রীজ নির্মাণের দাবী জানিয়ে আসছিল।
স্থানীয়দের এই দাবীর প্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় সম্প্রতি ব্রীজ নির্মাণ কাজের বরাদ্দ দেওয়া হয়। ব্রীজটি নির্মাণে এলজিইডির পক্ষ থেকে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই বরাদ্দকৃত টাকা দিয়ে এই স্থান হাশেম খালের উপর দিয়ে দুটি স্পেনের উপর ৪০মিটার দৈর্ঘ্যরে ও সাড়ে ৫ মিটার প্রস্থের একটি ব্রীজ নির্মাণ করার নক্শা করা হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়ার সাহায্যে ব্রীজটি নির্মাণের দায়িত্ব পায় টিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স বেঙ্গল ট্রেডিং। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী মো. ইউনুস ব্রীজের নির্মাণ কাজের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও শ্রমিকদের থাকার জন্য খালপাড়ে অস্থায়ী ঘরও নির্মাণ করেন। এবং খালের উপর ব্রীজ নির্মাণের কাজও শুরু করে দেন।
তবে কাজ শুরুর ১ মাসের মাথায় ব্রীজ নির্মাণে বাঁধা হয়ে দাড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি)। তারা ব্রীজ নির্মাণ হলে কৃষকদের সেচের পানির সমস্যা ও খালের পানির স্বাভাবিক যাতায়াতে বাঁধাগ্রস্ত হওয়া সহ বিভিন্ন কারণ দেখায়। এতে তাদের বাঁধার মুখে চন্দ্রঘোনাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের এই ব্রীজ নির্মাণের কাজ থমকে দাড়িয়েছে।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নূর মোহাম্মদ বলেন, “হাশেম খালের উপর বর্তমানে যে লক্কর ঝক্কর ব্রীজটি রয়েছে এটির উপর দিয়ে প্রতি দিন শত শত স্কুল-মাদ্রাসাগামী ছাত্রছাত্রী ও হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে আসা যাওয়া করছে। অর্ধশত বছরের স্বপ্নের হাশেম খাল ব্রীজটি বরাদ্দ হওয়ার খবরে এলাকার মানুষ উল্লাসিত ছিল। কিন্তু উন্নয়নের বাঁধাগ্রস্তকারীদের বেড়া জালে এটি আটকে যাওয়া মানে জননেত্রী শেখ হাসিনা ও রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের চলমান উন্নয়নের ধারাকে ব্যাহত করা। আমরা অতিদ্রুত কুচক্রিমহলের সকল ষড়যন্ত্র কাটিয়ে ব্রীজ নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করার দাবি জানাই।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য রেজাউল করিম বলেন, এই খালের পূর্ব প্রান্তে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস। যারা মাত্র একটি সেতুর অভাবে মূল চন্দ্রঘোনার সাথে বিচ্ছিন্ন। এই ব্রীজটি ২০০৮ সাল হতে প্রতিটি জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে আমাদের নির্বাচনী ওয়াদা ছিল। তাই গণমানুষের স্বার্থে ব্রীজের নির্মাণ কাজ দ্রুত বাস্তবায়নে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”
উপজেলা প্রকৌশলী মো. দিদারুল আলম বলেন, “হাশেম খালের দৈর্ঘ্য মাত্র ২৫ মিটার। কিন্তু মাত্র দুটি স্পেনের উপর দিয়ে ৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের ব্রীজটি নির্মাণের নক্শা করা হয়েছে। এই দুটি স্পেন খালের উপর নয়, নির্মিত হবে দুই পাড়ের শুষ্ক মাটির উপর। তাই সেচের অসুবিধা, পানি যাতায়াতে সমস্যা কোনটাই হবে না। আমরা এই বিষয়টি অবহিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনাপত্তিপত্র পেতে প্রয়োজনীয় আবেদন করেছি। এই ব্যাপারে অনাপত্তিপত্রটি হাতে পেলে পুনরায় কাজ শুরু করা হবে।’
এই ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাঙ্গামাটি পওর উপ-বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘যেই স্থান দিয়ে ব্রীজের নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে জায়গাটি আমাদের কর্ণফুলী সেচ প্রকল্পের ইছামতী ইউনিট প্রজেক্ট’র। তাছাড়া ব্রীজ নির্মাণের প্রজেক্ট নেওয়ার আগে আমাদের সাথে তাঁরা কোনরকম যোগাযোগ করেনি। পানির সেচের অসুবিধা সহ আইনগত সমস্যার কারণে ব্রীজটি নির্মাণে বাঁধা দেওয়া হয়েছে। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী চট্টগ্রাম এর কাছ থেকে আমরা একটা অনাপত্তিপত্র পেয়েছি। আমরা পত্রটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর ফরোয়ার্ড করেছি।’

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আজগর বলেন, এর আগেও তো ওই স্থান দিয়ে আমরা ব্রীজ নির্মাণ করেছিলাম। কই তারা তো তখন কোন বাঁধা দেয়নি। তাদের কাজ যেমন জনসেবা করা, এই ব্রীজটিও জনগণের প্রয়োজনেই নির্মাণ করা হচ্ছে। তাছাড়া ব্রীজটি নির্মাণ করা স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবী। স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনেও এই স্থান দিয়ে ব্রীজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ছিল। সেই প্রতিশ্রুতিরই বাস্তবায়নে এই স্থান দিয়ে ব্রীজ নির্মাণে বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্রীজ নির্মাণে সরাসরি বাঁধা সৃষ্টি না করে, কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করতে পারতো। এভাবে চন্দ্রঘোনাবাসীর দুই পাড়ের জনসাধারণের চলাচলের জন্য বরাদ্দকৃত ব্রীজটির নির্মাণ করাতে স্থানীয়রা বিক্ষুব্দ হয়ে উঠেছে। স্বপ্নের এই ব্রীজটি বাস্তবায়নে আমরা মাননীয় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি মহোদয়ের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’