চমেক হাসপাতালে মাত্র আড়াইশ টাকায় সব দাঁতের এক্স-রে

রতন বড়ুয়া ।।

চমেক হাসপাতালে মাত্র আড়াইশ টাকায় সব দাঁতের এক্স-রে
চমেক হাসপাতালে মাত্র আড়াইশ টাকায় সব দাঁতের এক্স-রে

দাঁতের ওপিজি (অর্থোপেন্টোমোগ্রাম) এক্স-রে মেশিন প্রথমবারের মতো যুক্ত হলো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং বিভাগে। প্রায় ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ডিজিটাল এই মেশিনের সেবাও ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। এই মেশিনে মাত্র আড়াইশ টাকায় সবকয়টি (দু’পাটি) দাঁতের এক্স-রে সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে রেডিওলজি বিভাগে। বাইরে (বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়ানগস্টিক সেন্টারে) এই এক্স-রে ফি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার কম নয়। চমেক হাসপাতালে মেশিনটি চালু হওয়ায় তুলনামূলক কম খরচে এর সেবা পাচ্ছেন রোগীরা। গত মাস (আগস্ট) থেকে দাঁতের এই ডিজিটাল এক্স-রে সেবা চালু হয়েছে বলে আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুভাষ মজুমদার।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে- সচরাচর দুই ধরনের এক্স-রে করানো হয় দাঁতের। একটি পেরিএপিকাল এক্স-রে (ঢ়বৎরধঢ়রপধষ ী-ৎধু)। আর অন্যটি ওপিজি ((ঙচএ) বা অর্থোপেন্টোগ্রাম। পেরিএপিকাল এক্স-রেগুলো আকারে ছোট এবং এটি সাধারণত দুই বা তিনটি দাঁতের প্রতিচ্ছবি ধারণ করতে পারে। কিন্তু ওপিজি তুলনামূলক অনেকটা বড়। যা মুখের সবগুলো দাঁতের প্রতিচ্ছবি ধারণ করতে পারে। একই সাথে দাঁতের আশেপাশে হাড়ের মধ্যে কোন টিউমার বা অন্য কোন সমস্যা আছে কিনা তাও দেখা যায় এই মেশিনে।
অত্যাধুনিক এই ওপিজি এক্স-রে মেশিন-ই বসানো হয়েছে রেডিওলজি বিভাগে। এর আগে অত্যাধুনিক এই মেশিন পায়নি চমেক হাসপাতাল। হাসপাতালের দন্ত বিভাগে থাকলেও সেটি পেরিএপিকাল এক্স-রে। তবে রেডিওগ্রাফার (টেকনিশিয়ান) না থাকায় প্রায় সময় সেটিও অচল থাকে বলে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। দাঁতের এক্স-রে এর ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো এমন মেশিন পাওয়া গেছে জানিয়ে রেডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুভাষ মজুমদার আজাদীকে বলেন- মেশিনটি চালু হওয়ায় এখানে (রেডিওলজি বিভাগে) স্বল্প খরচে দাঁতের অত্যাধুনিক এক্স-রে করার সুযোগ রয়েছে। দাঁতের এক্স-রে করা প্রয়োজন, এমন রোগীরা চাইলে এখানে এসে কম খরচে এই এক্স-রে সুবিধা নিতে পারেন। ডিজিটাল এই মেশিনের সুবিধা হচ্ছে, এতে একই সাথে দু’পাটি বা সবকয়টি দাঁতের প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। যা অন্য মেশিনে পাওয়া যায় না। সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বিভাগে এই এক্স-রে সেবা দেওয়া হয় বলেও জানান অধ্যাপক ডা. সুভাষ মজুমদার।
এদিকে, গরিব-অসহায় রোগীদের ক্ষেত্রে বিনামূল্যে এই এক্স-রে করার সুযোগও রয়েছে হাসপাতালে। তবে বিনামূল্যের সুযোগটি নিতে হাসপাতালের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম/প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয় গরীব রোগিদের। হাসপাতালের প্রশাসনের অনুমোদনেই কেবল বিনামূল্যে এ সেবা পাওয়া যাবে।
যে কারণে দাঁতের এক্স-রে করা দরকার :
চিকিৎসকরা বলছেন- ধরুন, আপনার কোন একটি বা পাশাপাশি দুটি দাঁত শিরশির করছে কিংবা ব্যথা করছে কিন্তু আপনি আয়নায় দাঁতে কোন সমস্যা দেখতে পাচ্ছেন না। সেক্ষেত্রে আপনার দাঁতের এক্স-রে করানো উচিত। এক্স-রে করলে ওই সমস্যার কারণ জানা যাবে। যা দাঁতের বাইরে থেকে দেখে বুঝা যাচ্ছিল না।
আবার ধরুন, শিশু সন্তানের দাঁত তুলতে হবে। দাঁত হালকা নড়ে কিন্তু সাধারনভাবে টেনে তোলার উপযোগী নয়। তখন শিশুটির এক্স-রে করাতে হবে। কেননা এই দাঁত শিশুর দুধ দাঁত এবং এর নিচ থেকেই আসছে তার স্থায়ী দাঁত। যদি কোন কারণে তার স্থায়ী দাঁত তৈরি না হয় তাহলে শিশুর দুধ দাঁত তুলে ফেললে সেই জায়গা সারাজীবন ফাঁকা থেকে যাবে। উপরন্তু পাশের দাঁতগুলো সেই ফাঁকা জায়গার দিকে সরে আসতে থাকবে। এতে করে পুরো মুখের দাঁত গুলোই বিশ্রী রূপ নিতে পারে।
কারো দাঁত থেকে পুঁজ বের হচ্ছে। কিংবা দাঁতের মাড়ির কোন জায়গায় অনেকটা ফুলে আছে। অথচ নিয়মিত ব্রাশ করেন। কি করতে হবে বুঝতে পারছেন না। এক্স-রে করলেই বুঝা যাবে এই ফোলা কি আসলে কোন ফোঁড়া (পুংঃ, ধনংপবংং) নাকি কোন টিউমার। কিংবা অন্য কি কারণে স্থানটি ফোলে আছে। এক্স-রে করার ঝামেলা এড়াতে মুখের ফোলাটাকে গুরুত্ব না দিলে পরবর্তীতে জটিল অপারেশনে চোয়ালের একাংশ কেটেও ফেলতে হতে পারে। বয়স ২৫ বছরের বেশি, তাও আক্কেল দাঁতের কোন চিহ্ন নেই। এক্স-রে করলেই বোঝা যাবে কি অবস্থায় আছে আক্কেল দাঁতগুলো। রুট ক্যানেল করতে হবে দাঁতে। দাঁতের শিকড় মাড়ির কতটা ভেতরে ঢুকে আছে, সেটি এক্স-রে ছাড়া বোঝা যাবে না। কারো স্থায়ী দাঁত অল্প বয়সেই নড়তে শুরু করেছে। এক্স-রে করে দেখতে হবে কি কারণে নড়ছে।
ডেন্টিস্টরা বলছেন, দাঁতের চিকিৎসায় এক্স-রে এর প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। খালি চোখে যা দেখা যায় না তা দেখার জন্যই এক্স-রে’র প্রয়োজন হয়। দাঁত ও মাড়ির ভেতর-বাহিরের অবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে দাঁতের এক্স-রে’র বিকল্প নেই বলে মনে করেন ওরাল এন্ড ডেন্টাল সার্জন স্নেহাশীষ বড়ুয়া। তবে দাঁতের এক্স-রে করানোর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি মন্তব্য করে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন এ চিকিৎসক।