জিপিএইচ-এর করাল গ্রাস - জামসেদ উদ্দীন

জিপিএইচ-এর করাল গ্রাস - জামসেদ উদ্দীন

প্রচণ্ড শব্দ দূষণ আর আকাশ জোড়া কালো ধোঁয়ায় বিষিয়ে উঠেছে চারপাশের পরিবেশ। এতে করে একে একে তিনটি গ্রাম বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কুমিরা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের খানজানি পাড়ার আর মাত্র অবশিষ্ট কয়েকটি পরিবার রয়েছে। তাও সময়ের ব্যাপার, তাদের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন হতে।
পুলিন দাস( ৫৫) দুঃখের সাথে জানান। আমাদের জমি, ঘরভিটে যেতে বসেছে। আমরা ন্যায্য মূল্য পাইনি।
এদিকে তারা এবারও চাতালের কাজ করতে পারেনি। উল্টো পুলিন দাস ধান শুকানোর উঠান কোদাল দিয়ে কেটে জমি বানাতে দেখা যায় । ওই উঠানে সিদ্ধ ধান শুকানো হতো। অথচ এ ফ্যাক্টটির জন্যেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। পানি নিষ্কাশনের পথও অনেকাটা সংকোচিত হয়ে গেছে। তারা পানি চলাচলের পথে ইমারত স্থাপন করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে । খোদ জিপিএইচ মহাসড়ক দখল করে ৫ তলা উঁচু অফিস স্থাপন করে। মহাসড়ক হতে ৪০ ফুট পর্যন্ত মহাসড়কের জায়গা। একটি গাড়ি পাকিং করবে সে
জায়গাটুকু পর্যন্ত দখল করে নিয়েছে।
রাস্তার আশেপাশে তাদের লোকজন ঘুরঘুর করছে। কেউ কিছু বললে টুটি চেপে ধরবে।
পুলিন দাসকে তারা প্রতিনিয়ত পাগল বলেই যাচ্ছে । জামাই খ্যাত এক ব্যক্তিসহ কয়েকজন টাউট এসব বলাবলি করে ।
পুলিন দাসের চার ভাই'র সাথে জায়গা বায়না করে তাকে চাপের মুখে হুমকি দিচ্ছে, তার জায়গা যেন নাম মুল্য দিয়ে হাতিয়ে নিতে পারে। ফ্যাক্টরির কথিত এসব লোকজন নাম ভাঙিয়ে করে আসছে। ' জামাই' বাবুও এসব করেন।
পুলিন দাস এখন যাবে কোথায়? স্ত্রী, ৪ সন্তান নিয়ে তার সংসার। কোথায় মাথা গুজাবে। তাদের পেশাগত কাজকর্মতো বন্ধ হয়ে গেছে।
ওই পাড়ায় গোপাল দাস, স্বদেশ দাস, সুধীর দাস, মৃত নেপাল দাসের পরিবার, নিরঞ্জন দাস, মনসন দাসসহ ৫০ পরিবার বসবাস করে আসছে। তারা সকলে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন । যেকোন মুহূর্তে চৌদ্দপুরুষের বসত ভিটা ছাড়তে হবে।
ফ্যাাক্টরীটি এখনো পূর্ণদমে চালু হয়নি। তবে এর মধ্যেই এ অবস্থা। হাজার কোটি টাকা ব্যাংক লোন নিয়ে আধুনিক কারখানা স্থাপনে এসব কি হচ্ছে? আর মিলটির পরিচালক শিমুল চৌধুরী বলেন, 'এসব কিছু না। '
কোথায় পার্কিং স্থান, শ্রমিক বান্ধব পরিবেশ, বিশ্রামঘর, ক্যান্টিন , চিকিৎসাকেন্দ্র, চিকিৎসক, ওষুধপাতি।
দেখা যায়, মহাসড়ক জুড়ে তাদের মালবোঝাই লরি রাতভর দাঁড়িয়ে থাকে। বিশেষ করে রাত দশটা থেকে মহাসড়ক তাদের দখলে চলে যায়। তখন দেখা দেয় দীর্ঘ যানজট। কে কার কথা শুনে। 'ইউ টান' নেই বলে উল্টো লরিগুলো ধেয়ে এসে দূর্ঘনা ঘটিয়ে চলেছে।

লেখকঃ কবি ও গবেষক ।