টুংটাং শব্দে মুখর চট্টগ্রামের কামার পাড়া

টুংটাং শব্দে মুখর চট্টগ্রামের কামার পাড়া

নিজস্ব প্রতিনিধি ।।

প্রাণঘাতী করোনাকালে সামনের পবিত্র ঈদুল আযহাকে ঘিরে মহা ব্যস্ত চট্টগ্রাম নগরীর কামারপাড়া।  সারা বছর কাজ খুব একটা না থাকলেও কোরবানী উপলক্ষে তাদের কর্মব্যস্থতা বেড়ে যায় অনেকগুন।  কর্মচাঞ্চল্য হয়ে উঠে কামারপাড়া।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নগরীর বিভিন্ন কামারপল্লীতে সর্বত্র কামারদের ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে এখন।  কয়লার দগদগে আগুনে লোহাকে পুড়িয়ে পিটিয়ে তৈরি করছেন তারা দা, ছুরি, চাকু, কুড়াল, কাঠারি, বটিসহ ধারালো কর্তন সামগ্রী বানিয়ে চলেছে ওরা।  কেউবা অর্ডারকৃত আর কেউবা নিজের লোহা দিয়েই তৈরি করে পাইকারি দরে বিক্রি করছেন।

তবে এসব তৈরিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি কামারের দোকানগুলোতে।  পুরানো নিয়মেই চলছে আগুনে পুড়ে লোহা হতে ধারালো কর্তন সামগ্রী তৈরির কাজ।

কামাররা জানায়, এ পেশায় অধিক পরিশ্রম।  আর শ্রম অনুযায়ী তারা এর যথাযথ মূল্য পান না।  কারণ লোহার বাজার দর বেশি।  পাশাপাশি খাদ্য দ্রব্যের মূল্যের সাথে ভারসাম্য রেখে যদি কামাররা তাদের লোহার ধারালো কর্তন সামগ্রী তৈরি করত তাহলে এ পেশাজীবীরাও মূল্যায়ন পেত বলে তারা মনে করেন।  জীবিকা নির্বাহে কষ্ট হলেও শুধু পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ পেশাটিকে তারা এখনও আঁকড়ে আছেন।  সারাবছর পরিবারে ও কৃষি জমিতে ব্যবহারের প্রয়োজনে অনেকে কাছে এসে তা তৈরি করে নিয়ে যাচ্ছে।  তবে কোরবানির পশুর জন্য বেশি প্রয়োজন মনে হওয়ায় সকলেই এখন ছুটছেন কামারদের কাছে।  আর এতেই এই মাসে জমজমাট হয়ে উঠে কামার পাড়া।

আকবরশাহ এলাকার কামার প্রদীপ কর্মকার বলেন, আসছে ঈদ পর্যন্ত আশা করছি একেক জন কামার খরচ বাদে এখন দৈনিক ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা আয় করবেন।

তারা আরও জানান, একটি বড় দা ৫ কেজির লোহা দিয়ে তৈরি করে মজুরিসহ ৭শ’ টাকা, কুড়াল ১ কেজির ২০০ থেকে ২২০ টাকা, বাশিলা ২১০ থেকে ২৩০ টাকা, বড় ছোরা ওজন মতে ৩ থেকে সাড়ে ৬শ’ টাকা, পশু কুড়াল ৩ থেকে ৪শ’ টাকা দরে বিক্রি করছেন।  তবে লোহা গ্রাহকের হলে সেক্ষেত্রে শুধু তৈরি ও শান বাবদ এসব সামগ্রীর প্রতি পিস ১০০ থেকে ১৫০ টাকা গ্রহণ করা হয়।

কামারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদে যে বেচাকেনা হয় তা আর অন্য সময় হয় না।  তাই ঈদের আগে এ পেশাজীবীদের সচ্ছল হওয়ার মোক্ষম সময়।  এ কারণে অনেকে মজুদ করে ঈদকে ঘিরে বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করছেন।  তাই অনেকে জীর্ণশীর্ণ শরীর নিয়েও একটু সুখের আশায় কাজ করে যাচ্ছেন অবিরত।  ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে বিক্রি ততো বেশী হবে বলে জানান তারা।  ঈদুল আযহার অন্যতম ওয়াজিব পশু জবাই করা।  আর জবাই করার অন্যতম উপাদান এসব পন্য।  সারা বছর তৈরীকৃত এসব পন্য যত বিক্রি হয়না তার চেয়ে বেশি বিক্রি হয় ঈদ মৌসুমে।  সারা বছর তৈরীকৃত এসব পন্য যত বিক্রি হয়না তার চেয়ে বেশি বিক্রি হয় ঈদ মৌসুমে তাই সামান্য লাভে বিক্রি করছি। 

পাহাড়তলীর কামার  কমল কর্মকার বলেন, সারা বছর আমাদের তৈরি জিনিসের চাহিদা থাকে।  কিন্তু ঈদে অনেকেই পশু কোরবানির জন্য নতুন ছুরি, চাপাতি, ধামা, চাকু কিনতে আসেন।  আমরা লোহার এসব জিনিসের চাহিদা কথা মাথায় রেখে আগে থেকেই বেশ কিছু জিনিস বানিয়ে রাখি।  অনেকে আবার কোরবানির জন্য এসব ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি বাড়ি ও কৃষিকাজে ব্যবহৃত কুড়াল, কাস্তে, কাঁচি, সাবল কিনে ফেলে।

ষোলশহরের জয়ন্ত কর্মকার বলেন, লোহার নানান পশুজবাই অস্ত্রেও এখন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রতিদিন ১৫০০ টাকা আয় হয়।  হাতে অতিরিক্ত কাজ থাকার কারণে নতুন কাজ নেয়া বন্ধ করে দিয়েছি।  তিনি আরো বলেন, কামারিদের এই ব্যস্ততা চলবে ঈদের আগদিন পর্যন্ত।