দিনরাত মোবাইল গেমসে কাটে সীতাকুন্ডের গ্রামাঞ্চলের শিশুদের সময়

দিনরাত মোবাইল গেমসে কাটে সীতাকুন্ডের গ্রামাঞ্চলের শিশুদের সময়
দিনরাত মোবাইল গেমসে কাটে সীতাকুন্ডের গ্রামাঞ্চলের শিশুদের সময়

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।। 

বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে গত ১৪ মাস দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এমন সময়ে সীতাকুন্ডের ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার স্কুল-কলেজের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা দিনরাতের বেশীরভাগ সময় কাটাচ্ছে মুঠোফোনে ভিডিও গেমস খেলে। এমনকি অনলাইন ক্লাসের অযুহাতে অসচ্ছ্বল পরিবারের শিশুরাও দামি স্মার্টফোন কিনে গেমস খেলছে।

সীতাকুন্ড উপজেলার পৌরসভা, বারৈয়ারঢালা, বাডবকুন্ড, বাঁশবাড়ীয়া, কুমিরা, বারআওলিয়া, ফৌজদার হাট, সলিমপুর , ভাটিয়ারীসহ বিভিন্ন গ্রাম ও পাড়া মহল্লায় দেখা যায়, রাস্তার মোড়ে, গাছের নিচে, খোলা কোন জায়গায়, স্কুল মাঠে, নির্জন স্থানে দলবেঁধে বসে শিশু ও কিশোররা ফোর্টনাইট, তিন পাত্তি, লুডু, জান্ডিমুন্ডা প্রি ফায়ার-পাবজি গেমসগুলো খেলছে। যে স্থানে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক কানেকশন আছে সেখানে গোপনে পাসওয়ার্ড নম্বর নিয়ে জটলা বেধে ৩০- ৪০ জনকেও একসাথে বসে গেম খেলতে দেখা যায়। গেমসের পাশাপাশি এই সব শিশু কিশোররা অধিকাংশরাই মোবাইলে অর্থের বিনিময়ে জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। যেসব শিশুর মোবাইল নেই তারা অন্যদের পেছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছে।

সীতাকুন্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের রুহুল আমিন নামের এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ‘এখন শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্তু তারা শুধু মোবাইলে গেমস খেলছে। এতে শিশু-কিশোরদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। নিষেধ করলেই বাবা-মার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে তারা। 

বাঁশবাডিয়ার মোহাম্মদ আলাউদ্দীন বলেন, বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা ক্ষেত্রে ডিজিটাল ও তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। অথচ তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে শিক্ষার্থীরা জড়িয়ে পড়ছে গেমসের নেশায়। এসব থেকে নিজেদের ছেলেমেয়েকে ফিরিয়ে আনতে না পারলে বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।'

ফৌজদারহাট কে এম হাইস্কুলের ছাত্র রাফি জানায়, ‘মোবাইল গেমস প্রথমে তার কাছে ভালো লাগত না। কিন্তু কিছুদিন বন্ধুদের খেলা দেখতে দেখতে সেও আসক্ত হয়ে গেছে। এখন গেমস না খেললে ভালো লাগে না।'

এ বিষয়ে ইন্টারনেট ক্যাবল নেটওয়ার্ক পরিচালক সাকিল জানান, গত এক বছরে আমার ইন্টারনেট সংযোগ বেড়েছে ৫০ গুনের বেশি। বছরখানেক আগে হাতেগোনা কয়েকজন নেট কানেকশন নিতেন। আর এখন প্রতিটি পাড়ায় ও ঘরে ঘরে সংযোগ দিতে হচ্ছে। নেট সংযোগ দিতেই হিমসিম খাচ্ছি।'

ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যাল্যের প্রধান শিক্ষক  বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতি  সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এস এম গোলাম খালেক বলেন, ‘অনলাইন ক্লাসের অজুহাতে অসচ্ছল পরিবারের সন্তানরাও অনেক দামি মোবাইল ফোন কিনছে। ছেলে-মেয়ের শিক্ষার বিষয় চিন্তা করে অভিভাবকরাও ধার-দেনা করে ফোন কেনার টাকা যোগান দিচ্ছেন। এখন বিকেল হলে শিশু-কিশোরদের স্কুলমাঠে খেলতেও দেখা যায় না। 

এ বিষয়ে লতিফপুর আলহাজ্ব আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাস্টার জহুরুল আলম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভয়াবহ এই মোবাইল গেমসের নেশা থেকে সড়িয়ে আনতে হলে প্রথমে অভিভাকদের সচেতন হতে হবে। এলাকার মুরব্বি জনপ্রতিনিধি সবাইকে সচেতন হতে হবে। এছাড়াও ইমাম মসজিদে এ ভয়ানক গেমস খেলা থেকে বিরত রাখার বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন। তাছাড়া আমি সকল শিক্ষককে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের গেমসের ভয়াবহতার বিষয়ে সচেতন করতে অনুরোধ জানাচ্ছি ।