তামিম না পারলে সরে যাবেন

তামিম না পারলে সরে যাবেন
তামিম না পারলে সরে যাবেন

ক্রীড়া প্রতিবেদক।।

বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের কদিন আগেই অধিনায়কত্ব পেয়েছেন তামিম ইকবাল। দেশের ইতিহাসে সব থেকে সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পর কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি, মাঠে তামিমের অধিনায়কত্ব অধ্যায়ের শুরুটা তাই এখনও হয়নি।

এর আগে অবশ্য অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশসেরা ওপেনার। তবে অভিজ্ঞতাটা সুখকর নয়। মুশফিকুর রহিম ইনজুরিতে পড়ায় ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে একটি টেস্টে অধিনায়কত্ব করেছিলেন, বাজেভাবে হেরেছিল দল। গত বছর বিশ্বকাপ শেষে মাশরাফি ইনজুরিতে পড়ায় শ্রীলঙ্কা সফরের তিনটি ওয়ানডে বাংলাদেশ খেলেছিল তামিমের অধীনে।  তিনটি ম্যাচই হেরে যায় টাইগাররা। সব ম্যাচেই তামিমের ব্যাটিং ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। নেতৃত্বের চাপে কেমন যেন চুপসে গিয়েছিলেন। তার ব্যাটিংয়ে ভবিষ্যতেও যদি এমনটা হয়, ব্যর্থ হয় দল, কী করবেন তামিম? সরল ভাষায় এই বাঁহাতি জানিয়ে দিলেন, সরে যাবেন দায়িত্ব থেকে।

সাম্প্রতিক অতীতে ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রায় নিয়মিতই অধিনায়কত্ব করতে দেখা যায় তামিমকে। তবে তার অভিজ্ঞতার ঝুলি যে খুব বেশি সমৃদ্ধ, এমন নয়। তামিম নিজেও মানছেন এটা। শনিবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বললেন, ‘আমি অনেক জায়গায় অধিনায়কত্ব করেছি। তবে সত্যি কথা বলতে, আমি খুব বেশি অভিজ্ঞ অধিনায়ক না। আমার প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে। আমাকে কিছুটা সময় দিতে হবে।’ অধিনায়কত্বের চাপ যে ক্ষেত্রবিশেষে ব্যাটিং পারফরম্যান্সেও প্রভাব ফেলে, তামিম সেটাও স্বীকার করে নিলেন, ‘একটা কথা আসে সাধারণত কেউ অধিনায়কত্ব নিলে ব্যাটিং পারফরম্যান্স খারাপ হয়ে যায়। আমি নিজেও জানি না ছয় মাস পর, এক বছর পর আমি কীভাবে পারফর্ম করব। আমার জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমাকে কিছুটা সময় দিতে হবে।’

সময় পাওয়ার পরও যদি কিছু করে দেখাতে না পারেন, নিজে থেকেই নেতৃত্ব ছেড়ে দেবেন তামিম। দেশের ক্রিকেটে সব থেকে সফল ব্যাটসম্যান পরিষ্কার করেই বলে দিলেন কথাটা, ‘আমি আপাতত এটাই সবাইকে বলতে পারি, আমার ক্ষেত্রে একটু ধৈর্য রাখেন। নিজের ব্যাটিংয়ে এক সিরিজ, দুই সিরিজ বা পাঁচটা ব্যর্থতা এটা হতেই পারে। আশা করি হবে না। অধৈর্য হব না, আপনারাও হবেন না। দর্শকদেরও একই অনুরোধ করব। চেষ্টা করব যেন তাড়াতাড়ি সব ঠিক হয়ে যায়। যদি ছয় মাসে, এক বছর বা দেড় বছরে কোনো কিছু ঠিক না হয় বা আমার যদি মনে হয় দলের প্রতি আমি সুবিচার করতে পারছি না, তাহলে আমিই হব প্রথম ব্যক্তি, যে সরে দাঁড়ানোর কথা বলবে। আমিই সবার আগে হাত তুলে বলব দুঃখিত।’

পূর্বসূরি মাশরাফির পদাঙ্ক অনুসরণ করে তামিম নেতৃত্ব চান লম্বা সময়ের জন্য। যদি চাওয়াটা পূরণ হয়, তামিমের বিশ্বাস কিছু একটা করে দেখাতে পারবেন, ‘অধিনায়কত্ব ব্যাপারটা একটা সম্মিলিত প্রক্রিয়া। অধিনায়কত্ব নেওয়ার পেছনে আমার একটা কারণ ছিল, আমি চাচ্ছিলাম লম্বা সময়ের জন্য। লম্বা সময় পেলে দলে আমি একটা ব্যবধান গড়তে পারব।’ ভবিষ্যতের জন্য দলকে গড়ে তুলতে, খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসী করতে যত দ্রুত সম্ভব বড় দলের বিপক্ষে জিততে চান তামিম, ‘আমার মনে হয়, ওয়ানডে দল হিসেবে আমাদের একটা বড় ম্যাচ জেতা খুব জরুরি। সেটা এই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে আমরা আবার জিনিসগুলো ভালো করতে পারি। এটাই আমাদের লক্ষ্য থাকবে। যত দ্রুত আমরা একটা বড় ম্যাচ জিততে পারি, যা দলের জন্য ভালো হবে।’

২০২৩ বিশ্বকাপকে ভাবনায় রেখেই তামিমের কাঁধে নেতৃত্বভার তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই আসরের এখনও অনেক দেরি। আপাতত তামিম তাই অতদূর ভাবছেন না। তিনি ধাপে ধাপে এগোতে চান, ‘ভালো ব্যাপার যে, লম্বা সময়ের জন্য বোর্ড (অধিনায়কত্ব) দিয়েছে। আমি আমার সবকিছু দিয়ে চেষ্টা করে দেখব। সাম্ভাব্য সবকিছুই করব, যেন বাংলাদেশের ক্রিকেট সঠিক পথে এগিয়ে যায়। দল ভালো করলে, আমি ভালো করলে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ২০২৩ বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবা শুরু করব। এই মুহূর্তে আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো, কিছু ব্যাপার ঠিকঠাক করা। পাকিস্তানে যদি যাই, সেটির দিকে আগে নজর দেওয়া।’