দেশকে খাটো করবেন না বিদেশিদের কাছে নালিশ করে :বইমেলা উদ্বোধনে তথ্যমন্ত্রী

দেশকে খাটো করবেন না বিদেশিদের কাছে নালিশ করে :বইমেলা উদ্বোধনে তথ্যমন্ত্রী
দেশকে খাটো করবেন না বিদেশিদের কাছে নালিশ করে :তথ্যমন্ত্রী

পোস্টকার্ড প্রতিবেদক।।

বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত অমর একুশে বইমেলা নগরের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম চত্বরে শুরু হয়েছে। সোমবার (১০ ফেব্রূয়ারি) বিকেল ৫টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) আয়োজিত সম্মিলিত এ বইমেলার উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এ সময় পরিবেশন করা হয় জাতীয় সংগীত। বইমেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন চসিকের পতাকা উত্তোলন করেন।

এতে তথ্যমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী। ৭০ লাখের বেশি মানুষ। বইমেলার অভাব ছিলো। বিক্ষিপ্ত বইমেলা হতো। চসিক সম্মিলিত বইমেলা আয়োজন করেছে। যান্ত্রিকতার যুগ চলছে। মঙ্গলে মনুষ্যবিহীন যান পাঠাচ্ছে। সামনে রোবট পাঠাবে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের পাশাপাশি মানুষ যন্ত্রে রূপান্তরিত হচ্ছে। আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। মানুষ যাতে মানুষ থাকে, মানবিক গুণাবলী অক্ষুণ্ণ থাকে, সে জন্য বইয়ের বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, অনেক অভিভাবক বই না দিয়ে সন্তানকে স্মার্ট ফোন তুলে দেন। স্মার্ট ফ্যামিলি দেখানোর জন্য ১২ বছরের সন্তানের হাতেও স্মার্ট ফোন তুলে দিচ্ছে। আজকের পৃথিবীর বাস্তবতায় মানবিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য বই পড়ার বিকল্প নেই। আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৪১ সাল নাগাদ এমন রাষ্ট্র গড়তে চাই, যা অন্যরা অনুকরণ করবে। বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে নালিশ করে দেশ ও জাতিকে খাটো না করার জন্য বিএনপিকে অনুরোধ জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল বিকেলে নগরের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম চত্বরে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনকালে মন্ত্রী এ অনুরোধ জানান।

হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশ আরও বহুদূর এগিয়ে যেতে পারতো গত ১১ বছরে যদি নেতিবাচক রাজনীতি না থাকতো। দেখলাম বিএনপির পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি বিদেশি রাষ্ট্রদূত-কূটনীতিকদের সঙ্গে বসে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে তাদের কাছে নালিশ উপস্থাপন করেছে। ভোট দিলো বাংলাদেশের মানুষ। ভোট হলো ঢাকা শহরে। যদি কোনো নালিশ থাকে তাহলে ঢাকা শহরের ভোটারদের কাছে, বাংলাদেশের মানুষের কাছে নালিশ দিতে হবে। কথায় কথায় বিদেশিদের কাছে এই যে ধর্ণা দেওয়া এতে দেশ এবং জাতিকে অপমান করা হয়।

তিনি বলেন, বিদেশি দূতাবাসের কূটনীতিকদের ডেকে নালিশ উপস্থাপন করা এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি দূতাবাস বা রাষ্ট্রগুলো যাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে সেটির পথ তৈরি করে দেওয়া। এটি কখনো আমাদের জন্য সম্মানজনক নয়, এটি আমাদের জন্য অসম্মানজনক। যে কাজটি ক্রমাগতভাবে বিএনপি করছে।

এ সময় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামশুদ্দোহা, চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি শাহ আলম নিপু, সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন, কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক, হাসান মুরাদ বিপ্লব, চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মেলায় বাতিঘর, বলাকা, বাতিঘর প্রকাশনী, আবির প্রকাশন, কালধারা, প্রজ্ঞালোক, শৈলী প্রকাশন, অনুপম, কাকলী, জ্ঞানকোষ, গলুই, শালিক, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, বিশ্বসাহিত্য ভবন, একাত্তর প্রকাশনী, গাজী, হাওলাদার, শব্দশিল্প, সময়, সৃজনী, আদর্শ, ইত্যাদি, চারুলিপি, রাতুল, চর্চা, গ্রন্থপ্রকাশ, সাদার্ন ইউনিভার্সিটি প্রেস, সপ্তডিঙা, এশিয়া পাবলিকেশনস, পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স, বার্ড কপ্রিন্ট অ্যান্ড পাবলিকেশন, তাম্রলিপি, প্রতীক, পুঁথিনিলয়, প্রথমা, নালন্দা, ইউনিভার্সেল একাডেমি, চিলড্রেন্স পাবলিকেশন, কিডস পাবলিকেশন, রঙ পেন্সিল, ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, নন্দন বইঘর, আপন আলো, মম প্রকাশ, শিশু প্রকাশ, আদিগন্ত, রাদিয়া, প্রসিদ্ধ, সালফি, শিখা, অনন্যা, পঙ্খিরাজ, সাহিত্য বিচিত্রা, কথা বিচিত্রা, আলোকধারা, নলেজ মিডিয়া, মুক্তদেশ, জ্যোৎস্না, মূর্ধণ্য, চন্দ্রবিন্দু, রোদেলা, বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্র, বিজ্ঞান একাডেমি, ঝিনুক, পার্ল, কালিকলম, সুচয়নী, শামীম পাবলিশার্স, বঙ্গজ, শোভাপ্রকাশ, হরিৎপত্র, সাহিত্য বিকাশ, দাঁড়িকমা, কথন, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি, পেন্সিলসহ ঢাকা ও চট্টগ্রামের ২০৫টি স্টল রয়েছে।

এসব স্টলে মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বইয়ের পাশাপাশি প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ছড়া, কিশোর কবিতা, অনুবাদসহ রকমারি বই পাওয়া যাচ্ছে।

মেলায় রয়েছে এক টাকায় আহার, লিটলম্যাগ কর্নার, নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশন, চসিকের জরুরি মেডিক্যাল টিমসহ বেশ কিছু বিশেষায়িত স্টল এবং ফ্রি ওয়াইফাইসহ সেলফি কর্নার।

এবারের বইমেলায় নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন, আলোচনা, রবীন্দ্র, নজরুল, বসন্ত, কবিতা, ছড়া, তারুণ্য, আবৃত্তি, বিতর্ক ও শিশু উৎসব, আন্তর্জাতিক লেখক সম্মিলন ও পাঠক সমাবেশ, পেশাজীবী ও সাংবাদিক সমাবেশ, সাহিত্য আড্ডা, কুইজ ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ছাড়াও মঞ্চে থাকবে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান, লোক ও মরমি সঙ্গীত, নাটক মঞ্চায়ন, জাদু প্রদর্শন ইত্যাদি। কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য দেওয়া হবে একুশে স্মারক সম্মাননা ও সাহিত্য পুরস্কার। থাকবে শ্রেষ্ঠ প্রকাশক ও লেখকদের জন্য সম্মাননা পুরস্কার।

২৯ ফেব্রূয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা চলবে। ছুটির দিন বইমেলা শুরু হবে সকাল ১০টায়।