দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল গুলোর

দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল গুলোর

মামুনুর রশিদ ।।

বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবসহ চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত সকল প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়নসহ ইত্যাদি সমস্যা সমাধানের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর দেশের সকল বিভাগ ও সিভিল সার্জনদের চিঠি দিয়েছেন। আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে তা করতে হবে । চট্টগ্রাম বিভাগে মোট ৪৩৯টি বেসরকারি হাসপাতাল আছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলায় হাসপাতাল আছে ১৪৪টি ও ডায়াগনস্টিক কেন্দ্র আছে ১৭৩টি, কক্সবাজারে হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক কেন্দ্র আছে ৮৯টি, খাগড়াছড়িতে আছে ৩৯টি, লক্ষীপুরে আছে ৭৭টি, নোয়াখালীতে আছে ৭২টি ও রাঙামাটিতে আছে ১৮টি। চট্টগ্রাম জেলায় অনুমোদিত ১৫৪টি এর মধ্যে নগরীতে প্রায় ৯১টি উপজেলায় ৬৩টি হাসপাতাল রয়েছে এবং ল্যাব রয়েছে ৩৭৩টি । তবে নগরীর বাইরের মফস্বল এলাকায় ব্যাঙয়ের ছাতার মত গড়ে উঠেছে হাসপাতাল ও ল্যাব। গড়ে উঠা বেসরকারি হাসপাতাল গুলোর অধিকাংশে ডাক্তারের সাইনবোর্ড থাকলে ডাক্তার নেই।

অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের নাম সর্বস্ব ডাক্তারের সাইনবোর্ড দেখা যায়। বাস্তবক্ষেত্রে রোগী হাসপাতালে গেলে এইসব ডাক্তার উদ্বোধন পরবর্তী কখন এসেছিল হাসপাতাল কর্তৃকপক্ষও জানেনা। তাদের স্থলে যেনতেন ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে গলাকাটা বাণিজ্য করে যাচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু হাসপাতাল ব্যবসায়ী। এতে রোগীদের প্রাণহানি ঘটে অন্যান্য ডাক্তারের সুনাম ম্লান করে দেয়। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনেক টেকনেশিয়ান গুলো দেখতে দেখতে কোন মতে কাজ শেখা। আরা তারাই রোগ সংশ্লিষ্ট সকল পরিক্ষা-নিরিক্ষা করছেন। খেলা করছে মানুষের জীবন নিয়ে। তাদের দেওয়া রিপোর্টের উপর নির্ভর করছে রোগীর আসল চিকিৎসা। এর বাইরে নাম সর্বস্ব প্রশিক্ষণ বা কোন প্রশিক্ষণ ছাড়ায় অনেক নার্স নিয়োগ দিয়েছে অভিযুক্ত বেসরকারী হাসপাতাল ও ডায়াগনিস্টি গুলো। গায়ে শুধু সাদা রঙ্গের এ্যাপ্রান জড়িয়ে হয়ে যাচ্ছে নার্স। বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হাসপাতাল গুলোর মালিকানার চিত্রে প্রভাবশালীদের একটি যোগসাজেশ থাকায় তাদেরও সহজে কোন কিছু করা যাচ্ছেনা এমন অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসার অবহেলা বা ভুল চিকিৎসায় কোন রোগী মারা গেলে বিভিন্ন অদৃশ্য শক্তির জোরে ধামাচাপা পড়ে তাদের অপকর্ম। এরজন্য মানসম্মত হাসপাতাল ও ল্যাবগুলোর উপর থেকেও মানুষের আস্থা ক্রমান্বয়ে উঠে যায়। চট্টগ্রামে মানসম্মত ও সুনাম ধরে রাখা বেসরকারি হাসপাতাল গুলোর মালিকানার দায়িত্বে থাকা একাধিক ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন করার সাথে সাথে যে সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাব মানসম্মত না।

এইগুলোর লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। নগরীর বাইরে যত্রতত্র গড়ে উঠা বেসরকারী হাসপাতাল -ল্যাবের নেই কোন সংগঠন। তবে একাধিক মালিকের সাথে কথা হলে তারা কোন মতে তাদের অক্ষমতা অধক্ষতার কথা স্বীকার করতে রাজিনন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, আমারা প্রতিদিন পরিদর্শন করছি। আমাদের যে পরিমান জনবল আছে সে পরিমান তা নিয়ে কাজ করছি। যে গুলো সমস্যা আছে সে সব হাসপাতাল বন্ধ রেখেছি। এর মধ্যে অনেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডাক্তার ফজলে রাব্বী বলেন, নবায়নের তারিখ বাড়তে পারে। তিনটা ক্যাটাগরিতে আমরা কাজ করছি। অনুমোধন আছে নবায়ন নেই। অনুমোধন আছে কিন্তু নবায়নের জন্য আবেদন করেছে। অনুমোধন ও নবায়ন নেই। তবে অপেক্ষায় আছে। তাদের সমস্যা হবেনা। বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, মিনিমাম ক্যাটাগরি না থাকলে আমরা বন্ধ করে দিব। মানবিধিকার নেতারা বলছে , বেসরকারি হাপাতাল-ল্যাবের অনুমোদন ও লাইসেন্স নবায়ন এর চেয়ে একটি হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে জনবল যথাযথ থাকতে হবে। মানুষ মারাসহ সেবার নামে গলাকাটা বাণিজ্যে বন্ধ করতে হবে। প্রায়সব বেসরকারী হাসপাতালে রাতে চিত্র দেখলে মনে হয়। যেন আবাসিক হোটেল। যে যার মত ঘুমাতে থাকে। হাসপাতালের রিসপশনে চাকচিক্য হলেও ভিতরে নেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচাল হাসান শাহরিয়ার কবির সময় নিয়মিত পরিদর্শন করছেন। গত সোমবার ফিরোজ শাহ্ আরবান্ ডিসপেনসারি ভগ্নপ্রায় ভবনের স্থলে নতুনভাবে ভবন নির্মানের জন্য তাৎক্ষনিক ভাবে সিভিল সার্জন নির্বাহী প্রকৌশলী, স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ চট্টগ্রামের সাথে আলাপ করেন ও নির্দেশনা প্রদান করেন। গত ১৫ জুলাই বোয়ালখালী উপজেলার শাকপুরা চৌমুহনী বাজারে আজিজ মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় নিউ শেভরন নামের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিলগালা করেন নির্বহী ম্যাজিষ্ট্রেট । নগরীর একমাত্র মানসম্মত চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স হসপিটলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রাইভেট ক্লিনিক-ল্যাব ওনার্স এসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার লিয়াকত আলী বলেন, চট্টগ্রামে বলতে গেলে তেমন বেসরকারী হাসপাতাল নেই।

নগরীতে থাকা হাসপাতাল গুলোর চিকিৎসা ব্যবস্থা ও পরিবেশ খুবেই ভাল। নগরীর বাইরের হাসপাতাল গুলো তাদের মান ধরে রাখতে পারেনা। সকল হাসপাতালকে একটি নিয়মের মধ্যে আসতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগকে আমরা স্বাগতম জানায়।