পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে সীতাকুন্ডে নির্বাচনী আগাম হাওয়া দিচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীরা

পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে সীতাকুন্ডে নির্বাচনী আগাম হাওয়া দিচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীরা

বিশেষ প্রতিবেদক ।। 

পৌর নির্বাচনের বার্তা পাওয়ার সাথে ঘুম চলে গেছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। আর একাধিক প্রত্যাশীর ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে সীতাকুন্ড পৌরসভা। দলীয় প্রতিক পেতে উঠে-পড়ে লেগেছে সবাই। ব্যাক্তিগত ইমেজের সাথে দলীয় কর্মকান্ডকে পুজি করে সবাই চাইছে দলীয় প্রতিক আয়ত্বে করতে। কারন দলের হাই কমান্ড যার হাতে প্রতিক দিবে সে হবে দলীয় নৌকার মাঝি।

চলতি বছরে নয়তো নতুন বছরের শুরুতে অনুষ্টিত হওয়ার সম্ভবনা শতভাগ। তাই প্রতিকের দৌড়ে নতুন মুখের সাথে বর্তমান ক্ষমতায় অধিষ্টিতদের বেড়েছে দৌঁড়ঝাপ। কেউ কেউ সংবাদ মাধ্যমে উপস্থিত হয়ে জানান দিচ্ছেন প্রার্থীতার। আবার কেউ কেউ চলছেন নিরবে নিভৃতে নানা কৌশলে প্রতিক ছিনিয়ে নেয়া।

এবার বয়োজেষ্টদের পাশপাশী উদীয়মান তরুনরাও ভীড় করছে নির্বাচনী সম্ভাব্য প্রার্থীর কাতারে। তাই একটু জটিল আকার ধারন করেছে নির্বাচনী সমীকরন। এরপরও ছাড় দিবে না কেউ কাউকে। সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় মেতে উঠেছে প্রার্থীরা সবাই।

গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-বাজারে, অফিস পাড়াতে নিজেদের প্রার্থীতা জানান দিতে পার করছে ব্যস্ত সময়। সে সাথে নৌকার মাঝি কে হচ্ছে তা নিয়ে চলছে দলের ভেতরে- বাইরে ঝল্পনা-কল্পনা। তবে যার ইমেজ ভাল সে হবে নৌকার মাঝি। এবার যথাযথ লোক বাচায় করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়। 

দলের সিনিয়র নেতারা বলেন,‘ অতীত ও বর্তমান কর্মকান্ড বিবেচনা করে সীদ্ধান্ত নিবে দল। অতীতে অপকর্মকারীদের হাতে যাবে না দলীয় প্রতিক। প্রয়োজনে তরুন উদীয়মান নেতৃত্ব বাচায় করে প্রতিক দেয়া হবে। কারন ইতিপূর্বে দলের নাম ব্যবহার করে ক্ষমতায় বসে অনেকে আখের গুছিয়েছেন বলে জানান তারা।

এদিকে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় বিএনপির কোনো প্রার্থীকে এখনো মাঠে নামতে দেখা যায়নি। তবে দল নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিলে একাধিক প্রার্থী নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত বলে জানা গেছে।

১৯৯৮ সালে ১ এপ্রিল ২৮ বর্গমাইল আয়তনের সীতাকুণ্ড পৌরসভা গঠিত হয়। এ পৌরসভায় ভোটার রয়েছেন প্রায় ২৮ হাজার। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান মেয়র ও সীতাকুণ্ড পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম, সীতাকুণ্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম রব্বানী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ ইসহাক, পৌরসভার কাউন্সিলর মাইমুন উদ্দিন মামুন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রোটারিয়ান মোহাম্মদ ইউসুফ, পৌর কাউন্সিলর সফিউল আলম চৌধুরী মুরাদ, পৌর কাউন্সিলর জুলফিকার আলী শামিম, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আব্দুস সামাদ, আওয়ামী লীগের নেতা মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক ছাত্রনেতা ভুঁইয়া সামি আল মুজতবা, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহেদ চৌধুরী ফারুক ও পৌর যুবলীগের সভাপতি শাহ কামাল চৌধুরী।

বর্তমান মেয়র মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম বলেন, আমি গত ৫ বছর ধরে দলীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি হিসাবে এলাকার উন্নয়নে কাজ করছি। আমি মনে করি দল এবারও আমার কাজের মূল্যায়ন করবে।

এবার মেয়র পদে মনোনয়ন চাইবেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাম রব্বানী। তিনি বলেন, গতবারও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। দলের কথা ভেবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। এবার মানসিকভাবে প্রস্তুত আছি। আমি মনে করি দলে আমার ত্যাগের কথা বিবেচনা করে এবার মনোনয়ন দিবে।

মেয়র পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ ইসহাক দলীয় মনোনয়নের জন্য শীর্ষ নেতাদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে।

বর্তমান পৌর কাউন্সিলর মাইমুন উদ্দিন মামুন এবার মেয়র পদে নির্বাচন করতে চান। তিনি জানান, আমি পরপর দুবারের কাউন্সিলর। গত ১০ বছর ধরে এলাকায় কাজ করছি। দল এবার আমাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

আধুনিক সীতাকুণ্ড গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে এবার মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আব্দুস সামাদ। যুব সমাজের কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় বলে দাবি করেন।

মেয়র পদে তরুণ প্রার্থী ভুঁইয়া সামী আল মুজতবা নির্বাচন করতে চান। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল বাকের ভুঁইয়ার ছেলে। দলীয় মনোনয়ন পেতে তিনি জোর লবিং করছেন বলে জানা গেছে।

মেয়র পদে মনোনয়ন চান বর্তমান পৌর কাউন্সিলর সফিউল আলম চৌধুরী মুরাদ। তিনি পৌরসভার পরপর দুইবারের কাউন্সিলর। এলাকায় জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি আশা করছেন মেয়র পদে দলীয় নেতারা তাকে মনোনয়ন দেবেন।

কাউন্সিলর জুলফিকার আলী শামীমও এবার মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চান। তিনি বলেন, আমিও দুবারের কাউন্সিলর। প্রথম ৫ বছর আমি প্যানেল মেয়র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছি। এলাকায় আমার জনপ্রিয়তা রয়েছে। এবার আমি মেয়র পদে দল থেকে মনোনয়ন চাইব।

অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রত্যাশা নিয়ে মেয়র পদে মনোনয়ন চান উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। ইতোমধ্যে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে মেয়র পদে নিজের প্রার্থিতার কথা ঘোষণা করেছেন।

মেয়র পদে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী রোটারিয়ান মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, স্বৈরাচার ও সামপ্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে অপরিসীম ত্যাগ ও গৌরবোজ্জ্বল অবদান রেখেছি। পৌরসভার উন্নয়নেও অবদান রাখতে চাই।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহেদ চৌধুরী ফারুক বলেন, স্কুল ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে আজ অবধি দলের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছি। বিনিময়ে কোনো কিছু চাইনি। আসন্ন সীতাকুণ্ড পৌরসভা নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন চাইব।

উপজেলা অওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল বাকের ভুঁইয়া বলেন, বড় রাজনৈতিক দল থেকে একাধিক নেতা সমর্থন লাভের প্রত্যাশা করে। তবে এলাকার উন্নয়নে নিবেদিত ব্যক্তিকেই মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে।