ফেল করা পরিক্ষার্থী জি পি এ ৫ পেল,শিক্ষার্থীরা মাশুল গুনছে পরীক্ষকের অবহেলার কারণে

ফেল করা পরিক্ষার্থী জি পি এ ৫ পেল,শিক্ষার্থীরা মাশুল গুনছে পরীক্ষকের অবহেলার কারণে

এম মামুন হোসেন।।

শিক্ষার্থীরা মাশুল গুনছে পরীক্ষকের অবহেলার কারণে।  খাতা দেখায় নানা গলদ এবং স্বল্পসময়ে পরীক্ষার লাখ লাখ খাতা মূল্যায়নে নানা ভুল হচ্ছে। মেধাবী শিক্ষার্থীর খাতা সঠিক মূল্যায়ন না হওয়ায় অনেকেই মানিসকভাবে বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। পরীক্ষকের ভুলে ফল বিপর্যয়ে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। কয়েক বছর ধরেই খাতা মূল্যায়নের গলদ নিয়ে সমালোচনা চলছে। এ জন্য প্রতিবছর পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরেই পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করে কয়েক লাখ শিক্ষার্থী। ২০১৯ সালের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ফল নিয়েও ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড ও একটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে কয়েক লাখ শিক্ষার্থী খাতা মূল্যায়নের আবেদন করেছে।বুধবার জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ফল পুনঃনিরীক্ষণে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে ফেল করা ১৯০ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে। ফেল করা দুই শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩১৩ জন। ফেল করা শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫ প্রাপ্তি নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ। ফেল করা শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। শিক্ষকের গাফলতিতে মেধাবী শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনে বড় রকমের ধাক্কা খাচ্ছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে জেএসসি পরীক্ষায় এবার পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ৭২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৮ হাজার ৯৫৩ জন শিক্ষার্থী। এই বোর্ডে ৩৯ হাজার ৫০৩ জন পরীক্ষার্থী ৫৪ হাজার ৬২৯টি খাতা চ্যালেঞ্জ করেছিল। 

অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জেডিসিতে ফেল থেকে পাস করেছে ১৭০ জন শিক্ষার্থী। নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪০ শিক্ষর্থী। আর জিপিএ পরিবর্তন হয়েছে ১০৬ জনের বলে জানিয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কামাল উদ্দিন। তিনি জানান, মাদ্রাসা বোর্ডে ৭ হাজার ২৯ জন শিক্ষার্থী ১০ হাজার ৪৫টি খাতার ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে শিক্ষা বোর্ডের অবহেলা এবং শিক্ষকদের উদাসীনতার শিকার হচ্ছে জেএসসি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের অনেক পরীক্ষার্থী। এদের কারণে প্রতিবছরই হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভুল ফল মূল্যায়নের শিকার হচ্ছে। প্রথম দফায় অনেকে ফেল বা কম জিপিএ পাচ্ছে। পরে ফল পুনঃনিরীক্ষায় ফেল থেকে পাস করছে, জিপিএ-৫ পাচ্ছে এমন নজির আছে।

অভিযোগ উঠেছে, এ ধরনের প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে শিক্ষা বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তা এবং কিছু শিক্ষক জড়িত। পরীক্ষা শেষে খাতা বণ্টনের সময় অনেক ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে থাকেন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তারা। কম যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষককে অধিক পরিমাণে খাতা দেওয়া হয়। যোগ্য শিক্ষকদের অনেকেই বোর্ডের পরীক্ষক হতে পারেন না। উত্তরপত্র (পরীক্ষার খাতা) মূল্যায়নের জন্য সময় দেওয়া হয় মাত্র দুই সপ্তাহ। এ সময়ের মধ্যে তিনশ খাতা ভালোভাবে দেখা সম্ভব। কিন্তু দেওয়া হয় ছয়শ থেকে সাতশ খাতা। সময় স্বল্পতার অজুহাতে পরীক্ষকরা ছাত্র বা পরিবারের সদস্যদের দিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করিয়ে থাকেন। নম্বর যোগ করার সময় মনোযোগ দেওয়া হয় না। এতে পরিসংখ্যানগত ভুল বাড়ছে। ফলে পাল্টে যাচ্ছে ফলাফল।

অমনোযোগিতার কারণে কোনো বিষয়ে প্রাপ্ত ৮৬ নম্বর, ৬৮ হিসেবে শিটে উঠছে। এতে অনেক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আবার ৮২ পাওয়া শিক্ষার্থীর নম্বর রেজাল্ট শিটে ওঠে ২৮। ফলে এ ধরনের শিক্ষার্থীর রেজাল্ট আসে ফেল। ফল পুনঃনিরীক্ষায় গিয়ে এসব ভুল ধরা পড়ছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে দীর্ঘদিন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে শিক্ষকদের যে সময় দেওয়া হয় তা পর্যাপ্ত। কিন্তু তারা খাতা নিয়ে ফেলে রাখেন। এমনকি অনেকেই বোর্ড থেকে তাগিদ দেওয়ার পর খাতা মূল্যায়নে বসেন। সুতরাং ভুলের দায় পরীক্ষকদের।

এ প্রসঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, পরীক্ষার সঙ্গে একজন শিক্ষার্থীর সারাজীবনের সুখ-দুঃখ জড়িত। অবহেলা বা উদাসীনতার সঙ্গে পরীক্ষা সংশ্লিষ্টদের কাজ করা ঘোরতর অন্যায়। অনেক ভুলকে ‘মানবিক’ হিসেবে দেখা যায়। কিন্তু কিছু ভুল ক্ষমার অযোগ্য। কঠিন ভুলের ক্ষেত্রে শিক্ষা বোর্ডগুলো কঠোর হয়ে থাকে বলে তিনি জানান।