বিএনপি ক্ষমতার সুখস্বপ্নে বিভোর , জাপার ট্রায়াল ও জামায়াতের পুরনো খেলা

বিএনপি ক্ষমতার সুখস্বপ্নে বিভোর , জাপার ট্রায়াল ও জামায়াতের পুরনো খেলা
বিএনপি ক্ষমতার সুখস্বপ্নে বিভোর , জাপার ট্রায়াল ও জামায়াতের পুরনো খেলা

রাজনৈতিক ডেস্ক ।।

জাতীয় পার্টি এগোচ্ছে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে দরাদরির খেলায়। আগের মতো একেক সময় একেক কথা এবং লাস্ট রাউন্ডেইউটার্নে ক্ষমতার ভাগ নেওয়ার কৌশলে সামনেও আশাবাদ দেখছে দলটি। পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত এরশাদের মতো বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরও এ কাজে পারঙ্গম বলে বিশ্বাস তার ঘনিষ্ঠদের। বরং তার স্টাইলে ভিন্নতা আছে, মার্জিত ইমেজও আছে। বড় ভাই এরশাদের মতো তিনি চোখের ওপর পল্টি দেন না। জাতীয় পার্টির এ খেলা বুঝতে পেরে বিএনপি আপাতত আর পেছনে তাকাচ্ছে না। ভাবছে না কে পাশে থাকবে বা আসবে? আর জামায়াত এগোচ্ছে নাম বদলের পুরোনো খেলায়।

নিজেদের ভ্যালু বাড়াতে বেশ কিছুদিন ধরে গরম গরম কথা বলছে জাতীয় পার্টি। বারবার শোনাচ্ছে ‘তারা সরকারের সঙ্গে নেই’। এর মধ্যেই সংসদ থেকে পদত্যাগের হুমকি দিয়ে এক দিনের ব্যবধানেই আবার সংসদে ফিরে গেছে। রোববার জানিয়েছিল, রওশন এরশাদের পরিবর্তে জি এম কাদেরকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা করতে স্পিকারের সিদ্ধান্ত চায়। এ দাবি না মানা পর্যন্ত আর সংসদে যাবে না। পরদিন সোমবারই সেই সিদ্ধান্ত পাল্টে সদস্যদের নিয়ে অধিবেশনে গিয়ে হাজির হন জি এম কাদের। রওশন এরশাদকে সরিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত করতে গত ৩ সেপ্টেম্বর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছিল জাতীয় পার্টির সংসদীয় দল। সাধারণত দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য কোনো সিদ্ধান্ত নিলে স্পিকার সেটি অনুমোদন করেন। কিন্তু প্রায় দুই মাস হতে চললেও জাপার চিঠির বিষয়ে স্পিকার কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। বিএনপির মতো রাজপথে শোডাউনের অবস্থা জাপার নেই। জাপার এ ভূমিকাকে হালকাচ্ছলে নিয়ে সরকারি দল থেকে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এ ধরনের আরো কত কিছুই হবে। পদ্মা-মেঘনা-যমুনার পানি কত দিকেই গড়াবে।

একাদশ জাতীয় সংসদের শুরু থেকে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করছেন জাপার ‘প্রধান পৃষ্ঠপোষক’ পদে থাকা রওশন এরশাদ। কিন্তু ব্যাংককে চিকিৎসাধীন রওশন হঠাৎ ৩০ আগস্ট দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন আহ্বান করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠান। বিজ্ঞপ্তি পাঠানোর পরদিনই জাপার সংসদীয় দলের সদস্যরা বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে রওশনকে সরিয়ে এই পদে জি এম কাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। দলের ২৬ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে রওশন এরশাদ ও তার ছেলে শাদ এরশাদ ছাড়া বাকি ২৪ জনই এই সিদ্ধান্তে একমত হন। বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্পিকারকে জানায় জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর নেতৃত্বে দলের একটি প্রতিনিধিদল। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর বিরোধী দলের চিফ হুইপ ও জাপার সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা এ বিষয়ে লিখিত আবেদন স্পিকারের কার্যালয়ে জমা দেন।

পরে রাঙ্গা তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন এবং স্পিকারকে পাল্টা চিঠি দিয়ে জাপার সংসদীয় দলের নেওয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চান। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মশিউরকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের পদ থেকে অব্যাহতি দেয় জাপা। এমনকি দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়। জাতীয় পার্টিতে এ ধরনের খেলা নতুন নয়। কেবল রাঙ্গা নন, রওশন এরশাদ বা জি এম কাদেরও দলটি থেকে বহিষ্কারের শিকার হয়েছেন একাধিকবার। পরে আবার তারা মিলে যান। এসব কারণে সরকারি দলের মতো বিএনপিও ভাবে না জাপাকে নিয়ে। এলে সঙ্গী করবে, না এলে ভাববেও না। বিএনপির ধারণা, এবার আর তাদের রোখা যাবে না। নিজ গরজেই অনেকে তাদের সঙ্গী হবে। বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে জনসমাগম এবং সরকারের তটস্থ হয়ে বাধাদান বিএনপির নেতাকর্মীদের বেশ আশাবাদী করে তুলেছে। প্রকাশ্যে আদালত প্রাঙ্গণে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলা আদালতে নয়, রাজপথে সমাধান করবে, এমনকি আগামী নির্বাচনে তিনি অংশ নেবেন মর্মে রাজনৈতিক ঘোষণা দিয়েছেন তার এক আইনজীবী। আদালত প্রাঙ্গণে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না। সরকারের শীর্ষ পর্যায়কে ভাবিয়ে তুলেছে বিএনপির এই স্পর্ধা।

এই বিতর্কের আগেই আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়াকে আর জেলে নেবে না সরকার। তবে বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচন-বিষয়ক কোনো মন্তব্য আসেনি আইনমন্ত্রী বা সরকারের তরফে। গত কয়েক দিন ধরে বিনা সেন্সরেই নানান কথার ঝড় দুদিকে। কথার দৌড়ে কেউ কম যাচ্ছেন না। কেউ কাউকে ছাড়ছেন না। জনগণ অচিরেই একাত্তরের মতো তেতে ওঠে সরকারকে ফেলে দেবে বলে অহরহ হুমকি দিচ্ছেন বিএনপির নেতারা। বিশ্ব পরিস্থিতি যেখানে গেছে, সেখানে দেশ বাঁচাতে শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো ভরসা নেই বলে দাবি ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের। আওয়ামী লীগ তথা সরকারের ডিসঅর্ডার হয়ে যাওয়া বিএনপিকে আনন্দ দিচ্ছে। এতে ক্ষমতার আগাম তৃপ্তির ঢেকুর উঠছে দলটিতে। শোনা যাচ্ছে, আগাম মন্ত্রিসভাও নাকি গঠন করে রেখেছে বিএনপি। গদিতে বসার আগেই ক্ষমতার সুখটানও দিতে শুরু করেছেন অতি উৎসাহী কেউ কেউ। হাবভাব এমন, ক্ষমতাটা এখন কেবল সময়ের ব্যাপার! এমন মোক্ষম সময়ে হাই উঠছে জামায়াতে ইসলামীতে। আবারো কেবলা বদলে নতুন নামে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের ধরনা দিতে শুরু করেছে জামায়াত। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ রাজনীতির নানা বাঁকে বেশ কবার বল-বোল দুটোই পাল্টিয়েছে দলটি। দলের নামও বদল হয়েছে বার কয়েক। নিষিদ্ধ হয়েছে আগে আরো অন্তত দুবার।

নাম পাল্টানো, নিষিদ্ধ হওয়া, পরে আবার নানান কেবলায় নিপাতনে সিদ্ধ হওয়া জামায়াতের ইতিহাস। এবারের প্রেক্ষিত ও প্রেক্ষাপট কিঞ্চিৎ ভিন্ন। এরা নির্বাচনে নিষিদ্ধ, কিন্তু রাজনীতিতে নিষিদ্ধ নয়। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের বিশেষ কয়েক পর্যায়ে যোগাযোগ করে জামায়াত বা ইসলাম ধরনের কোনো শব্দ ব্যবহার না করে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) নামে আবেদন করেছে ইসিতে। এর আগে ২০২০ সালের ২ মে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের একটি গ্রুপ নিজেদের সংস্কারপন্থী ও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি দাবি করে ইংরেজি নাম এবি পার্টির (আমার বাংলাদেশ পার্টি) ব্যানারে। তারাও নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করে রেখেছে। এবি পার্টিকে সরকারি মহল থেকে মাঠে নামানোর গুঞ্জন ছিল মাঠে। বিডিপি নিয়েও রয়েছে নানান কথা। বিডিপির সঙ্গে সম্পৃক্ততা স্বীকার করছে না জামায়াত। আবার বিডিপির নেতারাও জামায়াতের নাম মুখে নেন না। যদিও ঘোষিত দলটির প্রায় সব শীর্ষ নেতাই শিবির-জামায়াত সম্পৃক্ত।

আন্দোলনের মাঠে দীর্ঘ বিচরণের জেরে জামায়াতও বড় দুই দলের পথঘাট চেনে। রাজনীতির প্রতিটি বক্রপথের সুযোগ নিয়েছে জামায়াত। জেনে-বুঝে তারা ব্যবহৃত হয়। নিজের লাভ বুঝে ক্ষমতার শয্যা পাতে। আর চাতুরী করে মন ইচ্ছামতো। এবারও সেই ধারা গতিময়ভাবে চলমান।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;