বদির সন্তান দাবি করে কক্সবাজারের সহকারী জজ আদালতে ইসহাকের মামলা

বদির সন্তান দাবি করে কক্সবাজারের সহকারী জজ আদালতে ইসহাকের মামলা
বদির সন্তান দাবি করে কক্সবাজারের সহকারী জজ আদালতে ইসহাকের মামলা

কক্সবাজার প্রতিনিধি ।।

আওয়ামী লীগের কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির সন্তান দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এক তরুণ মামলা করেছেন। ১০ ডিসেম্বর কক্সবাজারের সহকারী জজ আদালতে (টেকনাফ) মোহাম্মদ ইসহাক নামের তরুণ এই মামলা করেন। তাঁর দাবির সত্যতা প্রমাণের জন্য প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করারও আবেদন জানান তিনি। 

বাদীপক্ষের আইনজীবী আবদুল মান্নান গণমাধ্যমকে বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বিবাদীকে আদালতে হাজির হতে নোটিশ জারির নির্দেশ দিয়েছেন। 

মামলায় টেকনাফ পৌরসভার বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম, তরুণের মা সুফিয়া খাতুনসহ আরও সাতজনকে বিবাদী করা হয়েছে।

মামলার বাদী মোহাম্মদ ইসহাকের ভাষ্য, তিনি সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির সন্তান, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বদির চেহারার সঙ্গে তাঁর চেহারার প্রায় ৯০ শতাংশ মিল। যেকোনো মানুষ দুজনকে দেখলে বাবা-ছেলে বলে শনাক্ত করতে পারবেন। কিন্তু সামাজিক অবস্থান ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার ভয়ে বদি তাঁকে সন্তানের স্বীকৃতি দিচ্ছেন না। এ কারণে তিনি আদালতের আশ্রয় নিয়েছেন।

এই বিষয়ে আবদুর রহমান বদির ভাষ্য, মোহাম্মদ ইসহাক নামে তাঁর কোনো সন্তান নেই। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি জানতে পেরেছেন যে এক তরুণ তাঁকে বাবা দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন। তাঁকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য এটি মহলবিশেষের অপপ্রচার হতে পারে। আদালতেই তার সত্য-মিথ্যা প্রমাণ হবে। তবে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি আদালতের কোনো নোটিশ পাননি বলে দাবি করেন।

মোহাম্মদ ইসহাক কক্সবাজার সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির পরীক্ষার্থী। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে পরীক্ষা আটকে আছে। বর্তমানে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের বিসিক শিল্প এলাকার দক্ষিণ মুহুরীপাড়ায় মায়ের সঙ্গে তিনি থাকেন।

এজাহারে মোহাম্মদ ইসহাক দাবি করেছেন, ১৯৯২ সালে ৫ এপ্রিল কালেমা পড়ে তাঁর মা সুফিয়া খাতুনকে বিয়ে করেন আবদুর রহমান বদি। তাঁদের বিয়ে পড়ান বদির পারিবারিক আবাসিক হোটেল নিরিবিলিতে ওই সময় কর্মরত মৌলভি আবদুস সালাম। বিয়ের সাক্ষী ছিলেন হোটেলের দারোয়ান এখলাছ। ১৯৯৪ সালের মার্চের দিকে সুফিয়া তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা জানার পর গর্ভপাতের জন্য চাপ দেওয়া হয়। পরে ৪ এপ্রিল সুফিয়া বেগমকে বদির বাবা এজাহার মিয়া তাঁর বাড়ির মিস্ত্রি মোহাম্মদ ইসলামের সঙ্গে বিয়ে দেন। আগের মৌলভিই এই বিয়ে পড়ান। বিয়ের প্রায় পাঁচ মাসের মাথায় ১৯৯৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ইসহাকের জন্ম হয় বলে এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন। তাঁর দাবি, মায়ের সঙ্গে তিনি কয়েকবার বদির সঙ্গে দেখা করেছেন। বদি তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করেছেন।

​​​​​​​এজাহারে ইসহাক আরও অভিযোগ করেন, ছেলে ইসহাকের জন্মসনদ তুলতে মা সুফিয়া খাতুন টেকনাফ পৌরসভায় গেলে পৌরসভার মেয়র হাজি মোহাম্মদ ইসলাম (বদির চাচা) বাবার নামের জায়গায় আবদুর রহমান বদির নাম লিখতে অস্বীকৃতি জানান। সেখানে তিনি মায়ের দ্বিতীয় স্বামী মোহাম্মদ ইসলামের নাম লিখে দেন। এরপর থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ এসএসসি, এইচএসসি, সম্মান পরীক্ষার সনদে ইসহাকের বাবার নাম মোহাম্মদ ইসলাম রয়ে গেছে। তিনি চান, এখন সবকিছু সংশোধন করা হোক। তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদে বাবার নামের জায়গায় আবদুর রহমান বদির নাম লিপিবদ্ধ করার আদেশের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেন।

এ কারণে মামলায় টেকনাফ পৌরসভার মেয়র হাজি মোহাম্মদ ইসলামকে মূল বিবাদী করা হয়েছে বলে দাবি করেন মোহাম্মদ ইসহাক। এ ছাড়া তিনি মা সুফিয়া খাতুন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান, একই বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে বিবাদী করেছেন।