বিদেশগামীদের করোনার নমুনা পরীক্ষায় ভোগান্তি,​​​​​​​দীর্ঘ লাইন

বিদেশগামীদের করোনার নমুনা পরীক্ষায় ভোগান্তি,​​​​​​​দীর্ঘ লাইন
বিদেশগামীদের করোনার নমুনা পরীক্ষায় ভোগান্তি,​​​​​​​দীর্ঘ লাইন

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

আকাশপথে বাংলাদেশ থেকে বিদেশ যেতে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষার ‘নেগেটিভ’ সনদ বাধ্যতামূলক করেছে সরকার এবং তা চট্টগ্রামে শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠানকে প্রদানের অনুমতি দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে শুরু হয়েছে মানুষের ভোগান্তি।

সোমবার প্রথম দিনেই চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ২৯৪ জন মানুষ করোনা পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন। এদের সবার নমুনা সংগ্রহ করা হবে জেনারেল হাসপাতালের একটি বুথে। যেখান থেকে নমুনা যাবে ফৌজদারহাট বিআইটিআইডিতে। সরকারি ওই ল্যাবকে শুধু বিদেশগামীদের নমুনা পরীক্ষায় ব্যস্ত থাকতে হবে। এতে শুধু বিদেশগামীদের হয়রানিই নয়, চট্টগ্রামে কোভিড-১৯ রোগীদের নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

প্রবাসী, ব্যবসা বাণিজ্য, চিকিৎসা কিংবা পর্যটন যেকোনো কাজেই বিদেশ যেতে কোভিড পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ লাগবে। বিদেশ যাত্রার আগের ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই এই সনদ সংগ্রহ করতে হবে। আগামী ২৩ তারিখ থেকে বিদেশ ভ্রমণে এই সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটি নিতে হবে দেশের সুনির্দিষ্ট ১৬টি ল্যাব থেকে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য ল্যাব নির্দিষ্ট করা হয়েছে ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি। ওই ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হলেও নমুনা সংগ্রহ করা হবে জেনারেল হাসপাতালের একটি বুথে। নমুনা দেয়ার আগে সিভিল সার্জন অফিসেই টিকেট, ভিসা এবং পাসপোর্ট দেখিয়ে রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য শুধুমাত্র একটি ল্যাব পরীক্ষা, একটি বুথে নমুনা সংগ্রহ এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একটি পয়েন্টে রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম করায় শত শত মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠার আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। 

সোমবার সকাল থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষকে বৃষ্টিতে ভিজে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে নাম রেজিস্ট্রেশন করাতে দেখা গেছে। এর মধ্যে তাদের হাতে ছিল পাসপোর্ট ভিসা এবং বিমানের টিকেটের মতো জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ২৯৪ জন মানুষ রেজিস্ট্রেশন করতে সক্ষম হন। কেউ কেউ ফিরেও গেছেন। ভয়াবহ এক অবস্থা সৃষ্টি হয় সিভিল সার্জন এবং জেনারেল হাসপাতালে।

সোমবার রেজিস্ট্রেশন শুরুর পর কিছু মানুষের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এক পর্যায়ে নুমনা সংগ্রহ বন্ধ করে দেয়া হয়। ঢাকা থেকে বলা হয়, নমুনা সংগ্রহ করতে হবে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে। ২৩ তারিখ থেকে সনদ লাগবে। তাই ২১ তারিখেই নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। এতে করে গতকাল যারা রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নমুনা পরীক্ষা করতে এসেছিলেন আজ তাদের আবারো এসে নমুনা দিয়ে যেতে হবে। ২৩ তারিখে ট্রাভেল করবেন এমন বিদেশগামীদের আজ নমুনা নেয়া হবে। এখন থেকে প্রতিদিনই ৭২ ঘণ্টা সময় হিসেব করেই রেজিস্ট্রেশন এবং নমুনা সংগ্রহের কাজ করে তা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

গতকাল ২৯৪ জন রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন। তাদের নমুনা নিয়ে আজ ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) পাঠানো হবে। আজ আরো কিছু মানুষ রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন। যদি এই সংখ্যা সাড়ে তিনশ’ ছাড়িয়ে যায় তাহলে ফৌজদারহাটস্থ বিআইটিআইডি শুধুমাত্র বিদেশগামীদেরই নমুনা পরীক্ষা করে শেষ করতে পারবে না। সাধারণ কোভিড রোগীদের নমুনা আর পরীক্ষার কোনো সুযোগই এই ল্যাবে থাকবে না। বিষয়টি চট্টগ্রামের কোভিড পরীক্ষায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে সূত্র জানিয়েছে। বিআইটিআইডিতে দুটি পিসিআর মেশিন রয়েছে। এই দুইটি মেশিন দুই শিফটে কাজ করলেও সর্বোচ্চ আড়াইশ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করতে পারে। এখন গতকালই রেজিস্ট্রেশন হয়েছে ২৯৪ জনের। এই সংখ্যাও বিআইটিআইডি একদিনে শেষ করতে পারবে না। আজ যদি আরো কিছু বিদেশগামী সিভিল সার্জন অফিসে রেজিস্ট্রেশন করেন তাহলে পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেয়া হবে তা নিয়ে ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা দরকার বলেও সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন, বিআইটিআইডি ছাড়াও চট্টগ্রাম ভ্যাটেরিনারী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের মধ্যে ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল এবং শেভরণ হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরীসহ গ্রামেগঞ্জে বিভিন্ন স্থানে নমুনা সংগ্রহের বুথও আছে। বুথ এবং পরীক্ষার সুযোগ বিকেন্দ্রীকরণ করা না হলে বিদেশগামীই শুধু নয় সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও চরমে উঠবে বলে মন্তব্য করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাক্তার শেখ ফজলে রাব্বির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেভাবে আমরা কাজ করছি। আজ আমরা রেজিস্ট্রেশন করিয়েছি। কাল নমুনা নিয়ে বিআইটিআইডিতে পাঠাব। মানুষের কষ্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, মানুষের কষ্টের ব্যাপারটি নিয়ে সরকার নিশ্চয় চিন্তাভাবনা করবে।

অপরদিকে জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বির কার্যালয় থেকে প্রদত্ত এক নির্দেশনায় বিদেশ যাত্রার ৭২ ঘণ্টা আগে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে স্থাপিত বিশেষ বুথে নমুনা প্রদান করা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়। নমুনা প্রদানের আগে সিভিল সার্জনের কার্যালয় সংলগ্ন ইপিআই ভবনের নীচ তলায় স্বশরীরে এসে ৩ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে রশীদ সংগ্রহ করতে হবে এবং অঙ্গীকার করতে হবে, নমুনা দেওয়ার পর থেকে বিদেশ যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আইসোলেশনে থাকবেন এবং স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলবেন।

রশিদ সংগ্রহ করার সময় বিমানের টিকিট, পাসপোর্ট কপি উপস্থাপন করতে হবে। নমুনা দেয়ার দিনকে প্রথম দিন হিসাব করে এর তিনদিন পর নমুনা পরীক্ষার ফলাফলের সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে। নমুনা প্রদান, পরীক্ষা, সার্টিফিকেটসহ যেকোনো তথ্যের জন্য সিভিল সার্জন কার্যালয়ে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমের হটলাইন (০৩১-৬৩৪৮৪৩, ০১৮৯৩৩৮৯৩৪৪) যোগাযোগ করা যাবে বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।