বান্দরবান শিশু পার্কের নির্মাণ কাজ আড়াই বছরেও শেষ হয়নি

বান্দরবান শিশু পার্কের নির্মাণ কাজ আড়াই বছরেও শেষ হয়নি
শিশু পার্কের নির্মাণ কাজ আড়াই বছরেও শেষ হয়নি

আলাউদ্দিন শাহরিয়ার, বান্দরবান ।।

বান্দরবান জেলায় শিশুদের বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই । ধীর গতিতে এগুচ্ছে বান্দরবান আধুনিক শিশু পার্ক তৈরির কাজও। দুই বছর আট মাস পরও শিশু পার্কটি নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। পাহাড়ের ঢাল কেটে সমান করা, মাটি ফেলে ঢালু জমি ভরাট করা, মাটি রক্ষায় প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ, গেইট নির্মাণ এবং চারপাশের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণে সময় চলে গেছে আড়াই বছরেরও বেশি সময়। ২০১৭ সালে শিশু পার্কের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছিলেন পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। ইতিমধ্যে শিশু পার্কটি নির্মাণের পৃথক তিনটি টেন্ডারে ব্যয় হয়েছে দেড় কোটি টাকা। ঠিকাদার কাজের সম্পূর্ণ অর্থ উত্তোলন করে নিলেও দরপত্রে উল্লেখ থাকা অনেকগুলো কাজ এখনো অসমাপ্ত রয়ে গেছে। শিশু পার্কের রাইড এবং অবকাঠামো তৈরির জন্য আরও ৫০ লাখ টাকার টেন্ডারও আহ্বান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল বিভাগ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শিশু পার্কের প্রবেশমুখে বন্য প্রাণীর ২টি ভাস্কর্য তৈরির কাজ এখনো চলমান রয়েছে। মাটি ফিলিং করে পার্কের জায়গাটি সমান করার কাজও অসমাপ্ত রয়ে গেছে। শিশু পার্কের প্রধান গেট নির্মাণের কাজও পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। পার্কের ভিতরে ধাপে ধাপে মাটি আটকে রাখতে ছোট ছোট গাইড ওয়াল নির্মাণের কাজও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। গাইড ওয়ালের পেছনে বালির বস্তা দিয়ে ফিলিং করার কথা থাকলেও কয়েকটি মাটির বস্তা দিয়ে দায় এড়িয়েছেন। নির্মাণ কাজে ত্রুটি এবং নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগও পাওয়া গেছে। ঠিকাদার এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ শিশু পার্ক নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে বলে দাবি করলেও শিশু পার্কে গিয়ে কোনো নির্মাণ শ্রমিককে পাওয়া যায়নি। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের আনাগোনায় সপ্তাহ খানেক ধরে একজন রাজমিস্ত্রি এবং দুজন সহকারী শ্রমিককে ড্রেনের নির্মাণ কাজ করতে দেখা গেছে। শিশু পার্কের গেটের মুখে নিম্নমানের ইটের কংক্রিটের দুটি স্টোকের মজুদ দেখা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে শিশু পার্কটির নির্মাণ কাজও বন্ধ ছিল বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের তৎপরতায় নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে শিশু পার্কের।

রাজমিস্ত্রি মোহাম্মদ নাঈম বলেন, ড্রেনের গাঁথুনি এবং ঢালাইয়ের কাজ করা হচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে সে এবং তার দুজন সহকারী শিশু পার্কের উন্নয়ন কাজ করছেন। এতদিন তারা অন্য সাইটে কাজ করেছেন।

ঠিকাদার খোরশেদ আলম বলেন, শিশু পার্ক তৈরির পুরো কাজটি আমিই করছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বরাদ্দের টাকা সঠিক সময়ে ছাড় না করায় নির্মাণ কাজ এগুচ্ছে না। নির্মাণ কাজ কিছুদিন বন্ধ ছিল কথাটিও সত্য। দরপত্রের থাকা কাজগুলো এখনো শেষ হয়নি, অনেকটা কাজ এখনো চলমান রয়েছে। কাজের সবগুলো বিল উত্তোলন করিনি। এক কোটি ২০ লাখের মতো টাকা বিল পেয়েছি। তিনি বলেন, কাজের নিম্নমানের কোনো সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে না। পার্কের প্রবেশমুখে থাকা নিম্নমানের কংক্রিটগুলোও আমার নয়। পার্শ্ববর্তী সেনাবাহিনীর বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ কাজের। কংক্রিটের কোনো কাজ আমার নেই।
প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে সাঙ্গু নদীর পাড় ঘেঁষে বান্দরবানের বালাঘাটা সড়কে দেড় একর জমিতে একটি আধুনিক শিশু পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের মে মাসে শিশু পার্কটি নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। প্রাথমিকভাবে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে শিশু পার্কটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও প্রকল্পটির পরিসর আরও বাড়াতে হবে। পরিকল্পিত আধুনিক সুযোগ সুবিধা সমৃদ্ধ একটি শিশুদের বিনোদন কেন্দ্র তৈরি করতে আরও অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে শিশু পার্কে ৮টি রাইড তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে রাইড নির্মাণের জন্য ঢাকা থেকে কয়েকজন অভিজ্ঞ মিস্ত্রির সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। কয়েকজন এসে জায়গাও দেখে গেছে।

এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইয়াছির আরাফাত বলেন, শিশু পার্ক তৈরির কাজটি ধীরগতিতে এগুচ্ছে, কথাটি মিথ্যা নয়। সীমাবদ্ধার কারণে কয়েকটি ভাগে টেন্ডারে কাজটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। কাজের গুণগত মানে কোনো ছাড় দেয়া হচ্ছে না। কাজের বিপরীতে ঠিকাদার দেড় কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। রাইড এবং অবকাঠামোর উন্নয়নে আরও ৫০ লাখ টাকার টেন্ডার দেয়া হয়েছে। তবে একটি আধুনিক মানসম্মত সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ শিশু পার্ক তৈরিতে আরও অর্থের প্রয়োজন।