বিপদ সঙ্কেতের অর্থ

বিপদ সঙ্কেতের অর্থ

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ ধেয়ে আসায় দেশের তিনটি সমুদ্রবন্দরে বিপদ সঙ্কেত জারি করা হয়েছে। ব্রিটিশ শাসনামলে তৈরি এই সঙ্কেত ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক আধুনিক সঙ্কেত ব্যবস্থা থেকে আলাদা। ঝড়ের গতি ও বিপদের সম্ভাব্য মাত্রা বিবেচনায় ১ থেকে ১১ নম্বর সঙ্কেত দিয়ে এখানে সতর্কতার মাত্রা বোঝানো হয়। সনাতনী এ সঙ্কেত ব্যবস্থা মূলত তৈরি করা হয়েছিল সমুদ্রগামী জাহাজ ও বন্দরের নিরাপত্তার জন্য। জনসাধারণের জন্য সতর্কবার্তার বিষয়টি সেখানে খুব একটা গুরুত্ব পায়নি তখন। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে সেই সনাতনী পদ্ধতিটি এখন বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।


১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সঙ্কেতের অর্থ বঙ্গোপসাগরের কোনো একটা অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া বইছে এবং সেখানে ঝড় সৃষ্টি হতে পারে। এর জন্য একটি লাল পতাকা ব্যবহার করা হয় সমুদ্রের কাছে।২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সঙ্কেতের সোজাসাপটা অর্থ সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে। 

৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেতের সহজ অর্থ বন্দর দমকা হাওয়ার সম্মুখীন। এ অবস্থায় সমুদ্রের তীরে দুটি লাল পতাকা উড়িয়ে দেওয়া হয়।

৪ নম্বর হুঁশিয়ারি সঙ্কেত বলতে বোঝায় বন্দর ঝড়ের সম্মুখীন হচ্ছে। তবে বিপদের আশঙ্কা এমন নয় যে, চরম নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৫ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের অর্থ হচ্ছে অল্প বা মাঝারি ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্দরের আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে এবং ঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষিণ দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। মোংলা বন্দরের বেলায় পূর্বদিক দিয়ে যায়।

৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত বলতে বোঝায় অল্প বা মাঝারি ধরনের ঝড় হবে এবং আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে। ঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের উত্তর দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। মোংলা বন্দরের বেলায় পশ্চিম দিক দিয়ে যাবে এই ঝড়।

৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের মানে অল্প অথবা মাঝারি ধরনের ঘূর্ণিঝড় হবে এবং এজন্য আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে। ঘূর্ণিঝড়টি সমুদ্রবন্দরের খুব কাছ দিয়ে অথবা ওপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এ সময় সমুদ্রের তীরে তিনটি লাল পতাকা ওড়াতে হয়।

৮ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেতের অর্থ প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় হবে এবং বন্দরের আবহাওয়া খুবই দুর্যোগপূর্ণ থাকবে। ঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষিণ দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। মোংলা বন্দরের বেলায় পূর্বদিক দিয়ে যায়।

৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত বলতে বোঝায় প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বন্দরের আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে। ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দরের উত্তর দিক দিয়ে উপকূল অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। মোংলা বন্দরের বেলায় পশ্চিম দিক দিয়ে যাবে।

১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেতের অর্থ প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বন্দরের আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকবে এবং ঘূর্ণিঝড়টি বন্দরের খুব কাছ দিয়ে অথবা ওপর দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

১১ নম্বরের অর্থ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার সঙ্কেত। এটি জারি করা হলে বুঝতে হবে ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সঙ্গে সব যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং স্থানীয় অধিকর্তার বিবেচনায় চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
 
নদীবন্দরের জন্য চারটি সঙ্কেত : সমুদ্রবন্দরের মতো নদীবন্দরগুলোর জন্যও কিছু বিপদ সংকেত রয়েছে। এগুলো দিয়েও ঝড়ের প্রচণ্ডতা বোঝা যায়।

১ নম্বর সতর্কতা সঙ্কেত : এর অর্থ নদীবন্দর এলাকা ঝড়ো আবহাওয়ার কবলে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিমি গতিবেগের কালবৈশাখীর ক্ষেত্রেও এই সঙ্কেত দেখানো হয়। এই সঙ্কেত আবহাওয়ার চলতি অবস্থার ওপর সতর্ক নজর রাখারও তাগিদ দেয়।
 
২ নম্বর হুঁশিয়ারি সঙ্কেত : নদীবন্দর এলাকা নিম্নচাপের সমতুল্য তীব্রতার একটি ঝড়, যার গতিবেগ ঘণ্টায় অনূর্ধ্ব ৬১ কিমি। ৬৫ ফুট বা তার কম দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট নৌযানকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে।
 
৩ নম্বর বিপদ সঙ্কেত : নদীবন্দর এলাকা ঝড়কবলিত। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ একটানা ৬২-৮৮ কিমি পর্যন্ত গতিবেগের একটি সামুদ্রিক ঝড় সহসাই বন্দর এলাকায় আঘাত হানতে পারে। সব নৌযানকে অবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।
 
৪ নম্বর বিপদ সঙ্কেত : এ সঙ্কেত বলতে বোঝায় বন্দর এলাকা একটি প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার সামুদ্রিক ঝড়কবলিত এবং সহসাই বন্দর এলাকায় আঘাত হানবে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিমি বা তার চেয়ে বেশি। সবধরনের নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।