‘সাংবাদিক’ কারা? বুঝা দায়!

‘সাংবাদিক’ কারা? বুঝা দায়!

পাঠক ডেস্ক।।

আমাদের বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের মানুষ হিসেবে যদি কেউ পেশাজীবি হিসেবে পরিচয় দিতে চান তবে সার্টিফিকেশন বা শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই পরিচয় দিতে পারবেন এমন একটি পেশার নাম সাংবাদিকতা। এ কথা লিখার কারণ হল, সরকার স্বীকৃত যেকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এর মাঝে গণমাধ্যম অন্যতম।

ইদানীংকালে এ পেশায় যে কেউ হুট করেই চলে আসছে। ১০/২০ বছর আগে একটা সময় ছিল যখন গণমাধ্যম এতো ব্যাপক হারে প্রসারিত ছিল না।

এখনকার সময়ে প্রযুক্তিগত কারণে যেমন গণমাধ্যম বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে সাংবাদিক। ১০/১৫ বছর আগে সময়গত কারণে হয়ত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি তেমন একটা গুরুত্ব দেয়া হত না। লিখতে জানলেই হত। তখনকার সময়ে দেখা যেত একজন এসএসসি পাস করা ব্যক্তি লিখতে লিখতে অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। দশক হিসেবে ধরলে তারা ৭০, ৮০, ৯০ দশকের। যাদের অনেকেই আজকের প্রবীণ সাংবাদিক। তারা এখনকার সাংবাদিকদের মত ছিলেন না। সংবাদ বা সাংবাদিকতায় অনেক শ্রম দিয়েছেন,  অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের বিষয়টা না হয় বাদই দিলাম। কারণ তারা যদি না থাকতেন তবে হয়ত আজকের বাংলাদেশে গণমাধ্যম এতোটা প্রসারিত হত না।

প্রশ্ন হচ্ছে, ২০০০ সালের কিছু আগে কিংবা পর থেকে যারা সাংবাদিক হচ্ছেন তাদের নিয়ে। তাদের কি গুণ বা যোগ্যতা দরকার। কোন মানের লোকজন এখনকার সময়ে এ পেশায় আসছে।

ইদানীংকালে এমনও দেখা যায়, নামেমাত্র সাংবাদিকতা করে অন্যকে দিয়ে ডামি সাংবাদিকতা করে অনেকে সাংবাদিক নেতা হয়ে গেছেন। শুধুমাত্র অর্থের দাপটে, ক্ষমতার দাপটে। তারা আবার বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাও ভোগ করছেন। আর এখানেই মার খাচ্ছে পেশাদার সাংবাদিকরা।

বঞ্চিত হচ্ছে ন্যায্য অধিকার থেকে। আর এ কারণেই বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই এ পেশায় আসার আগে কয়েকবার ভাবছে। অনেকে এ পেশা বদল করছে।

বর্তমান প্রজন্মের অনেক সাংবাদিক এখন রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসা, বাণিজ্য থেকে শুরু করে অন্যপেশায় আছে। সাংবাদিকতা করছে পাওয়ার দেখানোর জন্য। আর এটি কেবল সম্ভব হচ্ছে সাংবাদিকতার শিক্ষা ব্যবস্থা আর ভালমানের বেতন ভাতা নেই বলে।

মফস্বল সাংবাদিক মানে হল, যারা জেলা আর উপজেলায় থাকেন তাদের করুণ অবস্থা।

মফস্বল সাংবাদিকতার গুরুত্ব বাড়লেও এর ভালোমন্দ বা নীতি আদর্শ দেখার কেউ নেই। চলছে যে যার মত। তবে আছে প্রেসক্লাব, ফোরাম, ইউনিটি আর কত সংগঠন ‘ঘটি ডোবে না, নামে তালপুকুর’ এর মত করে। জেলার অধিকাংশ সংবাদপত্র বেতন ভাতা দেন না।

এদের আয়ের একমাত্র উৎস বিভিন্ন সরকারি, ব্যক্তিমালিকানাধীন অফিস আর জনগণকে ব্ল্যাকমেইল করা। হাসপাতাল ছাড়াও ইদানীংকালে আদালত পাড়া হল এদের ধান্ধাবাজির জায়গা।

সময় এসেছে এসবের পরিবর্তনের।

একটা সময় ছিল যখন ডিগ্রি পাশ করলেই ছেলেকে উকালতির জন্য পাঠানো হত। বাড়তি কোনও সনদের প্রয়োজন ছিল না। শুধু প্রয়োজন ছিল কোনও জেলা আদালতে গিয়ে কোনও উকিলের সঙ্গে থেকে তার কাজ করে দেওয়া আর বিভিন্ন এজলাসে তার কাছ থেকে কাজকর্ম শেখা। এখনও হয়তো সে আমলের ডিগ্রি পাশ উকিল পাওয়া যাবে যারা উকালতির সনদ ছাড়াই এ কাজে সফলতা লাভ করেছেন।

কিন্তু দিন বদলেছে, সময় বদলেছে, বদলেছে অপরাধের ধরন। এই জামানা্য় কেউ যদি এ কাজটা করতে যান মনে হয় না অবৈধ উপায় ছাড়া তিনি সফলতা অর্জন করতে পারবেন।

ইদানিংকালে ফেসবুকে পোষ্টকারী বা লাইভকারীদেফ সাংবাদিকদের কাতারে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। যা হলুদ সাংবাদিকতার চেয়েও ভয়াবহ।

পুলিশ, সাংবাদিক, ডাক্তার- এ সব মহান পেশা। বাইরের দেশগুলোতে সে রকম শ্রদ্ধার দৃষ্টিতেই দেখা হয় এবং তাদের কাজ বিশেষভাবে মনিটরিং করা হয়। সে সব কাজে যারা যুক্ত তারা এই বিষয়ে প্রচন্ড দক্ষ।

কিন্তু এদেশে… সবকিছু নষ্ট এবং মেধাহীনরাই নিয়ন্ত্রণ করে!

সাংবাদিকতা পেশায় সাংবাদিক কারা? এখন বুঝা মুশকিল। সময় এসেছে তা চিহ্নিত করতে হবে। সনদ না হয় নাইবা লাগল, কিন্তু নুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা বেঁধে দেয়া উচিত, যেমন ইন্টারমিডিয়েট কিংবা স্নাতক পাস, সাথে সিনিয়রদের সাথে থেকে শিক্ষানবীশ এর অভিজ্ঞতা।  আর যারা কোন দিন সাংবাদিকতা করে জীবিকা নির্বাহ করেননি, এমন ব্যক্তিদের উচিত এ পেশা ত্যাগ করা, নতুবা অদুর ভবিষ্যৎকালে প্রকৃত সাংবাদিক কারা বাতি দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

লেখক : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক