বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত বর্জ্য নিয়ে আসা ‘জে নাট’ জাহাজটি চট্টগ্রামে ভিড়তে নিষেধাজ্ঞা

বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত বর্জ্য নিয়ে আসা ‘জে নাট’ জাহাজটি চট্টগ্রামে ভিড়তে নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

চট্টগ্রাম উপকূলে আগামী বৃহস্পতিবার আসার কথা ছিল বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত বর্জ্য নিয়ে এক জাহাজ। যার নাম ‘জে নাট’ । তবে চট্টগ্রামের কাছাকাছি আসার আগেই ‘জে নাট’ (J. NAT) নামের ওই জাহাজ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিল শিল্প মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের আইনেও এ ধরনের জাহাজ আমদানিতে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। বিষাক্ত ওই জাহাজ চট্টগ্রামে এলে পরিবেশ তো বটেই, শ্রমিকদেরও পড়তে হতো ঝুঁকির মুখে। তবে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা সহজে আসেনি। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোই ছিল সবচেয়ে সোচ্চার।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আবুল খায়ের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘জে নাট এক্স জেসলাইন নাটুনা জাহাজটি বিষাক্ত। বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত বর্জ্যসহ সেটি ইন্দোনেশিয়া থেকে বাংলাদেশের দিকে রওনা হয়েছে। এমতাবস্থায় বিএসবিআরের সদস্যদের সতর্কতা অবলম্বন করে নির্দেশনা প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

এর আগে বিষাক্ত জাহাজটি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। শুক্রবার (১ মে) সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান ও সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জাহাজটি ইন্দোনেশিয়া থেকে বাংলাদেশে আসছে। জে-নাট নামের বিষাক্ত এই জাহাজটিতে ১৫০০ টন পারদ-দূষিত বর্জ্য, ৬০ টন স্ল্যাজ অয়েল, ১০০০ টন ঝাল তেল এবং ৫০০ টন তৈলাক্ত জল রয়েছে। বিপজ্জনক এই জাহাজটি আমদানি হলে তা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠবে। আর এই জাহাজ যদি ভাঙা হয়, তা শ্রমিকদের জন্যও হবে চরম ঝুঁকিপূর্ণ।’

পিএইচপি শিপব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিএসবিআরের নির্বাহী সদস্য জহিরুল ইসলাম রিংকু বলেন, ‘আমরা ১০ থেকে ১২ দিন আগে বিষয়টি জানার পর জাহাজটি না কেনার ব্যাপারে সমিতির সকল সদস্যকে জানিয়েছি। কারণ এ ধরনের জাহাজ ক্রয়ের মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। তাছাড়া এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকেও আমদানি না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রতিবছর ৩০ লাখ টনের স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করে গত বছর শীর্ষস্থান দখল করে। মাত্র ১৫ হাজার টনের এ জাহাজ কেন আমদানি করতে যাবে ব্যবসায়ীরা? আগেও এ ধরনের জাহাজ কিনে অনেকে বিশাল অংকের ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছে।’

জানা গেছে, জে নাট নামের ভাসমান স্টোরেজ এবং অফলোডিং (এফএসও) জাহাজটি মেয়াদোত্তীর্ণ। অফশোর তেল ও গ্যাস সংস্থাগুলো তেল সংরক্ষণের জন্য এটি ব্যবহার করত।

জাহাজটি আগে জেসলাইএন নাটুনা নামে পরিচিত ছিল। ইন্দোনেশিয়ান কোম্পানি গ্লোবাল নায়াগা বেরসমা পিটির মালিকানাধীন জাহাজটি নাটুনা গ্যাস ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো। সম্প্রতি এর মালিকানা বিশ্বব্যাপী স্ক্র্যাপ জাহাজ কেনাবেচার স্বীকৃত সংস্থা সোম্যাপ ইন্টারন্যাশনালের কাছে হস্তান্তরিত হওয়ার পর নাম পরিবর্তন করে ‘জে নাট’ রাখা হয়।

জানা গেছে, জে নাট গত ১৮ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়া থেকে ছেড়ে যায়। তার আগেই স্থানীয় কর্মীরা জাহাজের বিপজ্জনক বিষয়গুলো সম্পর্কে ইন্দোনেশীয় সরকারকে সতর্ক করে। ট্যাংকারটিতে ১৫০০ টনেরও বেশি বিপজ্জনক বর্জ্য রয়েছে। এর মধ্যে ১০০০ টন স্লপ অয়েল, ৫০০ টন তৈলাক্ত পানি (অয়েলি ওয়াটার) ও ৬০ টন স্ল্যাজ অয়েল রয়েছে। প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে ভাগ করা একটি স্ল্যাজ নমুনার ল্যাব পরীক্ষায় ৩৯৫ এমজি/কেজি মারকারি পাওয়া গেছে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে জাহাজটিতে উচ্চমাত্রার মারকারি ও বালাস্ট ওয়াটার থাকতে পারে।