বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি থেকে বাঁচার উপায়

বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি থেকে বাঁচার উপায়
বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি থেকে বাঁচার উপায়

শাহ মাহমুদ হাসান।।

সুস্বাস্থ্য দিয়েছেন মহান আল্লাহ মানুষকে এবং স্বাস্থ্যরক্ষার প্রয়োজনীয় সব উপায়-উপকরণও দান করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর দুটি বিশেষ নেয়ামত সম্পর্কে খুবই উদাসীন। একটি হলো স্বাস্থ্য। আর অপরটি হলো অবসর।’(বুখারি : ৬০৪৯)।
মূলত সুস্বাস্থ্য মহান আল্লাহর দেওয়া একটি বড় নেয়ামত। রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বয়ং এই নেয়ামতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন এবং সাহাবিদেরকে দোয়া করতে বলতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রায়ই দোয়ার মাঝে বলতেন, ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে স্বাস্থ্য, সুস্থতা, শান্তি, নিরাপত্তা প্রার্থনা করি। (শুয়াবুল ইমান : ১৯২)। একবার ফজল ইবনে আব্বাস (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমাকে এমন একটি দোয়া শিখিয়ে দেন যা দিয়ে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করব। তিনি বললেন, ‘হে আব্বাস! হে রাসুলের চাচা! আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের সুস্থতা ও শান্তি কামনা করুন।’ (তিরমিজি : ৩৫১৪)। কোরআন ও হাদিসে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত নির্দেশনা; যা মেনে চললে সুস্থতা সুনিশ্চিত করা সম্ভব। ইসলামের সব বিধিবিধান স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য এক অনন্য ব্যবস্থাপত্র।
রোগ প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা
ইসলাম সব উপকারী ও পুষ্টিকর খাদ্য বৈধ করেছে এবং অপবিত্র ও ক্ষতিকর পণ্যসামগ্রী হারাম বা নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। ইসলামে ঘোষিত সব হালাল খাদ্য স্বাস্থ্য উপযোগী এবং সব হারাম খাদ্য স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ইসলাম রোগ প্রতিরোধের প্রতি জোর তাগিদ দিয়েছে। তাই যে জিনিসগুলোর কারণে মানুষের অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ইসলাম আগেই সেগুলোকে নিষিদ্ধ বা হারাম করে দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়, যা কণ্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যায়, যা শিংয়ের আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে।’ (সুরা মায়েদা : ৩)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।’ (সুরা মায়েদা : ৯০)। বস্তুত শূকরের মাংস, নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ ও মৃতপ্রাণী ইত্যাদি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। নেশাজাতীয় দ্রব্য পরিহার করে মানুষ হৃদরোগ ও ক্যানসারের মতো ভয়াবহ রোগ থেকে বেঁচে থাকতে পারে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরিচ্ছন্নতা
স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হলে শরীরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা অত্যন্ত জরুরি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা পরিচ্ছন্নতার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের।’ (সুরা বাকারা : ২২২)। আর হাদিসের মধ্যে পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলা হয়েছে, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অর্ধেক।’ (মুসলিম :২২৩)। উল্লেখ্য মুখ, নাক, কান ও চোখ অপরিষ্কার থাকলে বিভিন্ন প্রকারের রোগব্যাধি সংক্রমণ হতে পারে। এ কারণে ইসলামে এ সব অঙ্গ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিধান দিয়েছে। ওজুর মধ্যমে হাত-পা, মুখ, নাক, কান ও চোখ দৈনিক পাঁচবার পরিষ্কার করা হয়ে থাকে। এর ফলে এ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে কোনো প্রকার রোগ জীবাণু লেগে থাকতে পারে না।
পাপাচার থেকে আত্মরক্ষা গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা না করলে আল্লাহর গজব থেকে বাঁচা যাবে না। আল্লাহ তায়ালা তা পরিষ্কারভাবে মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘যে মন্দ কাজ করবে, তাকে সেই কাজের শাস্তি ভোগ করতে হবে।’ (সুরা নিসা : ১২৩)। পাপের কারণে দুনিয়াতেই বিভিন্ন বিপদাপদ ও বিপর্যয় দেখা দেয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘জলে ও স্থলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সুরা রোম : ৪১) এখানে বিপর্যয় বলে দুর্ভিক্ষ, মহামারী, অগ্নিকান্ড, বন্যা, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি আপদ-বিপদ বোঝানো হয়েছে। মানুষ যখন পাপচারের সব সীমা ছাড়িয়ে যাবে এবং অশ্লীলতার শ্রোতে গা ভাসিয়ে দিবে তখন তাদের মধ্যে দূরারোগ্যব্যাধির সংক্রমণ ঘটবে বলে হাদিসের মাঝে হুঁশিয়ারি রয়েছে ‘যখন কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে অশ্লীলতা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়বে যে তারা প্রকাশ্যে অশ্লীলতায় লিপ্ত হতে থাকে, তখন তাদের মাঝে এমন সব দূরারোগ্যব্যাধির সংক্রমণ হবে, যা তাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে ছিল না।’ (ইবনে মাজা : ৪০১৯)।
মহামারী থেকে বাঁচার উপায়

মহামারী থেকে বাঁচতে হলে ইসলামের নির্দেশনা সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। মহামারী মূলত আল্লাহর গজব। মহামারী প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এটি আল্লাহর গজব বা শাস্তি বনি ইসরাঈলের এক গোষ্ঠীর ওপর এসেছিল, তার বাকি অংশই হচ্ছে মহামারী। অতএব, কোথাও মহামারী দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না। (তিরমিজি : ১০৬৫)। চিকিৎসাক্ষেত্রে ইসলামের সকল নির্দেশনা যে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক, তা আজা প্রমাণিত। যেমন একটা সময় ছিল, যদি কারও জ্বর হতো তাহলে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করতে চিকিৎসা বিজ্ঞান নিষেধ করত। কিন্তু বর্তমান আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে জ্বর কমানোর জন্য ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর ধুয়ে ফেলা কিংবা ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর মুছে ফেলার কথা বলা হয়েছে। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) বহু আগেই বলেছেন, ‘জ্বর জাহান্নামের উত্তাপ থেকে সৃষ্ট, তাই পানি দিয়ে তা ঠান্ডা কর।’ (তাবারানি : ১৯৮১৩)। চিকিৎসা বিজ্ঞানের যতই অগ্রগতি হচ্ছে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ইসলামের অবদান ততই স্পষ্ট হচ্ছে।মহামারী থেকে বাঁচার দোয়া মহামারী থেকে আত্মরক্ষার্থে দোয়া করতে হবে। রাসুল (সা.) নিজেও দোয়া করতেন। এবং দোয়ায় বলতেন, হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় কামনা করছি তোমার কাছে শে^তকুষ্ঠ, মানসিক রোগ, কুষ্ঠরোগ ও সকল প্রকার মহামারী  হতে। (আবু দাউদ : ১৫৫৬)। রাসুল (সা.) উম্মতকে দোয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে বলতেন, ‘যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিনবার বলবে, বিসমিল্লা হিল্লাজী লা ইয়াদ্বুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিস সামা-ই, ওয়াহুয়াস সামীউল আলীম, অর্থ : আল্লাহর নামে যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী; সকাল হওয়া পর্যন্ত তার প্রতি কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না। আর যে তা সকালে তিনবার বলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওপর কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না।’ (আবু দাউদ : ৫০৮৮)।