বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে বাড়িতে যাওয়ার কথা থাকলেও গেল লাশ হয়ে , হোসাইনের দাফন সম্পন্ন

বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে বাড়িতে যাওয়ার কথা থাকলেও গেল লাশ হয়ে , হোসাইনের দাফন সম্পন্ন
বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে বাড়িতে যাওয়ার কথা থাকলেও গেল লাশ হয়ে , হোসাইনের দাফন সম্পন্ন

শেখ রাসেল, টেকনাফ (কক্সবাজার) ।। 

দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেও মায়ের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলছিলেন মো হোসাইন।বিয়ে করতে মেয়ে দেখার জন্য বাড়িতে আসার কথা ছিল তার।কিন্তু শেষ পর্যন্ত লাশ হয়ে ঘরে ফিরলেন।

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে ট্রেনের ধাক্কায় ৩ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।রোববার দুপুরে সীতাকুণ্ড থানা–পুলিশের একটি টহল দল সলিমপুর ইউনিয়নের উত্তর ফকিরহাট রেলগেট এলাকায় রেললাইন পার হওয়ার সময় হঠাৎ পুলিশের গাড়িটি থেমে যায়।এসময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রেনটি পুলিশের গাড়িটির পেছনের অংশে ধাক্কা দেয়।সংঘর্ষে নিহত হন সীতাকুণ্ড থানার কনস্টেবল মিজানুর রহমান(৩৫)।পরে আহত আরও দুই পুলিশ সদস্যের মো হোসাইন (৩৫) ও এসকান্দার আলী মোল্লা(৪০) মারা যান।

দুর্ঘটনায় নিহত পুলিশ সদস্য মো হোসাইনের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার গ্রামে।তার বাবার নাম ফরিদ আহমদ,মা রাজিয়া বেগম।তাদের সংসারে চার ছেলে ও তিন মেয়ে।এরমধ্যে মো হোসাইন ৩নং ছেলে।

তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।তার পাঠানো টাকায়ই চলতো মধ্যবিত্ত বাবার এ সংসার।ঘরে তার মা-বাবা ও দুই ভাই।তবে তাদের পরিবারে বড় ছেলে মো ছৈয়দ বিয়ে করে আলাদা হয়ে যান।মেঝছেলে আবু ছৈয়দ, মোহাম্মদ হাসান,তিন বোন ছমিরা আক্তার, সলিমা আক্তার ও ছোট বোন নাছিমা আক্তার।মেয়ে দেখতে বাড়িতে আসার কথা ছিল হোসাইনের।এর আগেই দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হযেছে।

সোমবার সকালে উপজেলার হ্নীলার মৌলভীবাজারে তার বাড়িতে গেলে মো. হোসাইনের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তিনি সীতাকুণ্ড থানা পুলিশের কনষ্টেবলপদে কমরত ছিলেন।আগামী ১ সেপ্টেম্বর আনোয়ারা থানায় যোগদান করার কথা ছিল। 

পরিবার ও স্থানীয় লোকজন জানান,একসময় তার বাবা  ফরিদ আহমদ সৌদি আবর ছিলেন।বয়স বেশি হওয়াই এখন তিনি কোনো কাজ-কম করে না।হোসাইনের পাঠানো টাকায় আয়-রোজগারের টাকায় সংসার চলতো তাদের।অভাব-অনটনের সংসারে বড় ছেলে মোহাম্মদ ছৈয়দ বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে।মেঝ ও ছোট দুইভাই ও মা-বাবাকে নিয়ে অন্যতম ভরসা ছিলেন হোসাইন।

রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম থেকে ফোন তার চাচাত ভাইয়ের মাধ্যমে হোসাইনের মৃত্যুর খবর পান।মৃত্যু খবর পেয়ে মা-বাবাসহ স্বজনরা ভেঙে পড়েছেন।

বাবা ফরিদ আহমদ ও মা রাজিয়া বেগম দুজনই দুপুরে ছেলে হাসানকে নিয়ে চট্টগ্রোমের ছুঁটে যান।

নিহতের মা রাজিয়া জানান, তার বাবা কয়েকবছর ধরে সৌদি আবর ছিলেন।হোসাইন পুলিশের চাকুরী পাওয়ার পর আর বিদেশে যেতে দেননি।তিন বোন ছমিরা,সলিমা ও নাছিমাকে বিয়ে দেন এবং তিন ভাই মিলেমিশেই ছিলেন।টিনশেড একটি ঘরে তাদের বসবাস ছিল।২০১২সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন।প্রায় সময় বিয়ের জন্য বলা হলে সে মেয়ে দেখতে বলেন।তখন বলেছিলেন, কিছুদিনের মধ্যে বাড়িতে আসবেন।কিন্তু তার আর জীবিত আসা হলো না।

চাচা মো কালু বলেন,কোলে-পিঠে করে তাকে মানুষ করেছিলাম।আর মেঝচাচা বলে ডাকবে না।কখনো তার পথ চেয়ে থাকতে হবে না।বড় ভাই ও ভাবী গিয়ে নতুন সাদা কাপড় পরিয়ে হোসাইনের লাশ নিয়ে আসার জন্য।ভোররাতে মরদেহ নিয়ে আসে।শেষবারের মতো মোহাম্মদ হোসাইনকে বিদায় জানাতে বসে আছি।বাড়িতে হোসাইনের মরদেহ পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

এদিকে,সকালে মৌলভীবাজার জমিরিয়া মাদ্রাসার মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।এসময় তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।জানাজায় ইমামতি করেন মাওলানা মৌলভী ফরিদ আহমদ।জানাযা শেষে নাইক্ষ্যংখালী বড় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। 

বাবা ফরিদ আহমদ বলেন,জীবিত ছেলেটিকে কবরে দিয়ে এলাম।এখন কিভাবে আমি আর কার মুখ দেখে বেঁচে থাকব।কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। 

সলিমার স্বামী মোঃ সাদেক বলেন,কানজরপাড়া এলাকা থেকে একটি মেয়ে দেখা হয়েছিল বিয়ের জন্য।বাড়িতে এসে মেয়েটি দেখতে যাওযার কথা ছিল।তবে গতকাল ছিল সীতাকুন্ড থানায় তার শেষ কর্ম দিবস।ওইদিনই তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে।

বন্ধু মাইনুল ইসলাম বলেন, ছেলে হিসাবে হোসাইন ছিল খুবই ভালো ।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন।তার অকাল মৃত্যু কোনভাবে মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

টেকনাফ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত)মো নাছির উদ্দিন মজুমদার বলেন,হোসাইনের বাড়িতে আমিসহ পুলিশের একটি দল এসেছে।রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জানাজার শেষ করে দাফনের ব্যবস্থা নেওয়ার হয়েছে।

খালেদ / পোস্টকার্ড;