ভূমি নিয়ে প্রতারণায় ৭ বছরের জেল, ফসলি জমির বালু উত্তোলন আইনের খসড়া চূড়ান্ত

ভূমি নিয়ে প্রতারণায় ৭ বছরের জেল, ফসলি জমির বালু উত্তোলন আইনের খসড়া চূড়ান্ত
ভূমি নিয়ে প্রতারণায় ৭ বছরের জেল, ফসলি জমির বালু উত্তোলন আইনের খসড়া চূড়ান্ত

বিশেষ প্রতিবেদক।। 

সর্বোচ্চ ৭ বছর ও সর্বনিম্ন ২ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে ভূমি নিয়ে প্রতারণায় ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন’র খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এ ছাড়া ফসলি জমি থেকে বালু তোলা বন্ধ করতে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন এবং হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। 

বৈঠক শেষে বিকালে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, খসড়া আইনে ভূমির কতগুলো অপরাধকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেসব অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, যাতে করে নাগরিকরা নিজ নিজ মালিকানাধীন ভূমির নিরবচ্ছিন্ন ভোগদখল প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করতে পারেন। তিনি বলেন, ভূমি বিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্রগুলো সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং প্রতিরোধ, দমন ও প্রয়োজনে প্রতিকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি এবং সর্বসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি সম্পর্কিত অপরাধগুলো প্রতিরোধ ও দমনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ভূমি সম্পর্কিত বিরোধ আদালতের বাইরে সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার সুযোগ আইনে রাখা হয়েছে।

নতুন আইনে শাস্তির বিষয়ে তিনি বলেন, অন্যের মালিকানাধীন ভূমি নিজের মালিকানাধীন ভূমি হিসেবে প্রকাশ করা, কোনো ভূমি সম্পর্কে ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য গোপন করে তা অন্য ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর বা সমর্পণ, নিজ মালিকানাধীন ভূমির অতিরিক্ত ভূমি বা অন্যের মালিকানাধীন ভূমি জেনেশুনে অন্য ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর বা সমর্পণ, কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তি বলে ভান করে বা জ্ঞাতসারে এক ব্যক্তিকে অপর ব্যক্তিরূপে প্রতিস্থাপিত করে কিংবা কোনো ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে যে ব্যক্তি সেই ব্যক্তি থেকে ভিন্ন কোনো ব্যক্তি বলে পরিচয় দিয়ে সম্পত্তি হস্তান্তর বা সমর্পণ- এসব কাজ করলে ৭ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।

জালিয়াতি সংক্রান্ত বিষয়ে বলা আছে, কোনো ব্যক্তির ক্ষতি বা অনিষ্টসাধন করার বা অন্য কোনো দাবি বা অধিকার সমর্থন করার বা অন্য কোনো ব্যক্তিকে কোনো সম্পত্তি পরিত্যাগ করতে বা চুক্তি সম্পাদন করতে বাধ্য করার ইচ্ছায় কিংবা প্রতারণা করা যেতে পারে এ রকম মিথ্যা দলিল বা কোনো মিথ্যা দলিলের অংশবিশেষ প্রস্তুতকরণ, কোনো দলিল সম্পাদিত হওয়ার পর আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া অসাধু বা প্রতারণামূলকভাবে কর্তন করে বা অন্য কোনোভাবে তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরিবর্তন করা ইত্যাদির জন্য সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড হতে পারে। এসব অপরাধে সর্বনিম্ন ২ বছর কারাদণ্ড হবে। ভূমি অবৈধ দখল করলে দুই বছর এবং সরকারি স্বার্থযুক্ত এবং জনসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি অবৈধভাবে ভরাট, শ্রেণি পরিবর্তন ইত্যাদি করলে ২ বছর কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান আইনে রাখা হয়েছে বলেও জানান মাহবুব হোসেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনানুগ কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে কোনো আইন প্রয়োগে বাধা দিলে সেখানে ২ বছর, অপরাধ সংগঠন বা সহায়তা করা বা প্ররোচনা করলে তা হলে একই পরিমাণ সাজা তারা পাবেন। ভূমি সংক্রান্ত নানা অপরাধের ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা জড়িত থাকে। এ বিষয়ে আইনে কিছু বলা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই জন্যই ওই অংশটুকু যোগ করা হয়েছে। যদি সহযোগী হিসেবে কাউকে পাওয়া যায় একই পরিমাণ শাস্তি তিনিও পাবেন। এখানে আলাদা করা হয়নি কাউকে। এখানে বলা হয়নি সরকারি কর্মকর্তা হলে তিনি শাস্তি পাবেন না। বলা হচ্ছে এ কাজ যদি কারও সহযোগিতা নিয়ে করা হয় সেখানে যদি তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তা হলে তিনিও ওই একই অপরাধে দণ্ডিত হবেন একই মাত্রায়। 

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন, ২০২৩-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনায় ২০১০ সালের একটি আইন আছে। ২০১১ সালে এ সংক্রান্ত একটি বিধিমালাও করা হয়। আগের আইনের কিছু সংশোধন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, যেসব এলাকা থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ ছিল, সেখানে ফসলি জমি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এখন ফসলি জমি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কোনো ফসলি জমি থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ৩ ফসলি জমি ও টপ সয়েল (জমির উপরিভাগের মাটি) নষ্ট হতে পারে, এমন সম্ভাবনা থাকলে বালু তোলা যাবে না। অভ্যন্তরীণ নদী পথের নাব্য বিনষ্ট করতে পারে, এমন হুমকি থাকলে সেখানকার বালু বা মাটিও তোলা যাবে না। 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগে শুধু বিআইডব্লিউটিএর হাইড্রোগ্রাফিক জরিপকেই ভিত্তি ধরা হতো। এখন আইন সংশোধন করে বলা হচ্ছে, বিআইডব্লিউটিএর হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ ছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যদি কোনো জরিপ থাকে, সেটাকেও বিবেচনায় নেওয়া হবে। বর্তমান আইন অনুযায়ী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বালু উত্তোলন বন্ধ করতে গিয়ে যন্ত্রপাতি জব্দ করতে পারতেন না। আইন সংশোধন করে ম্যাজিস্ট্রেটরা যাতে যন্ত্রপাতি জব্দ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। আইন সংশোধন হওয়ার পর বালুর ইজারা কার্যক্রম অনলাইনে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো কারণে ইজারা দেওয়া না গেলে খাস আদায়ের মাধ্যমেও এটি করা যাবে। বালু পরিবহনের কারণে রাস্তার বা স্থাপনার ক্ষতি হলে সেটি ইজারাদারকে পরিশোধ করতে হবে। বালু উত্তোলন নিয়ে আগের আইনে যেসব শাস্তির বিধান ছিল, সেগুলো অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ২০২১ সালের ৩১ মে আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর এখন চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। তিনি বলেন, আমাদের একটি হোমিওপ্যাথিক বোর্ড আছে। সেটি প্রতিস্থাপন করে একটা কাউন্সিল গঠন করা হবে। সেই কাউন্সিল পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এ কাউন্সিল হোমিওপ্যাথিক সংক্রান্ত চিকিৎসা সেবা ও ওষুধের ব্যাপারে তদারকি করবে। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনার জন্য এ আইন করা হয়েছে।

আদালত বলেছেন যে, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা নামের আগে ‘ডাক্তার’ লিখতে পারবেন না, এ বিষয়ে আইনে কিছু আছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সেটা কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেবে।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;