ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই আজকের স্বাধীনতা : প্রধানমন্ত্রী

ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই আজকের স্বাধীনতা : প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা যতটুকু করতে পেরেছি মহান আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই কিন্তু তা করতে পেরেছি। যেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব সময় বলতেন এবং তার লেখায়ও আছে যে মহান অর্জনের জন্য মহান আত্মত্যাগ দরকার। আর সেই আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই আজকে আমরা অর্জন করেছি আমাদের স্বাধীনতা, ভাষার অধিকার। মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার।’

রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে ‘একুশে পদক-২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে (ভার্চ্যুয়াল) প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‌আমাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কুতি যেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও বিকশিত হয়, সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে। সেই প্রচেষ্টায়ও আমরা সাফল্য অর্জন করব বলে আমি বিশ্বাস করি।

বাঙালির ভাষার অধিকা্র আদায়ের দিন একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আমরা স্বীকৃতি পেয়েছি। এটা আমাদের সকলকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু আমাদের না। যারা মাতৃভাষা ভালোবাসে এবং মাতৃভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছে এবং মাতৃভাষাকে সংরক্ষণ করা, হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষা খুঁজে বের করা এবং সেগুলো সংরক্ষিত করা, সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা। সেই প্রচেষ্টায় আমরা সফলকাম হয়েছি।”

বাহান্নর ভাষা শহীদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, শহীদের রক্ত বৃথা যায় না, বৃথা যেতে আমরা দেইনি, বৃথা যেতে আমরা দেব না। যা কিছু অর্জন আমরা করতে পেরেছি, মহান আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই কিন্তু তা করতে পেরেছি। যেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব সময় বলতেন এবং তার লেখায়ও আছে যে মহান অর্জনের জন্য মহান আত্মত্যাগ দরকার।

গুণীজনদের দেখানো পথে নতুন প্রজন্ম দেশের কল্যাণে কাজ করবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের এই গুণীজনরাই তো পথ দেখায়। আপনাদের যে অবদান বিভিন্ন ক্ষেত্রে যার জন্য আমাদের এই অগ্রযাত্রা সম্ভব। তাই আমি সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। সঙ্গে আপনাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমাদের নতুন প্রজন্ম তারাও যেন দেশের কল্যাণে কাজ করে সেটাই আমি চাই।’

একুশে পদক প্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমাদের সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন- গবেষণা, সংস্কৃতি চর্চা থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনে যারা অবদান রেখে গেছেন ও যাচ্ছেন সেই গুণীজনদের সকলকে আমরা সম্মান দিতে পারি না। তবু আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে যারা এক সময় অবদান রেখেছেন এবং অনেকে হয়তো হারিয়েও যাচ্ছিলেন আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি তাদেরও খুঁজে বের করতে এবং তাদের সম্মান করতে।’

বাঙালির প্রতিটি সংগ্রামে সাধারণ মানুষের অবদানের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিটি সংগ্রামে অবদান রয়েছে মানুষের। কেউ সরাসরি রাস্তায় নেমে আন্দোলন যেমন করেছেন, ঠিক পাশাপাশি ভাষা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে গান, নাটিকা, কবিতা, বিভিন্নভাবে এই সংগ্রামে সকলে সহযোগিতা করেছেন এবং তাদের অবদান সব সময় চির স্মরণীয়।’

তিনি বলেন, ‘আজকে যে কয়জন গুণীজন এখানে পুরস্কৃত হয়েছেন তার মধ্যে অনেকেই সে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে আমাদের সংগ্রাম- সেই ৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন ও একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামে অনেক অবদান রয়েছে। তাদের খুঁজে বের করা, তাদের সম্মানিত করা, সেই সঙ্গে আমাদের দেশের নতুন প্রজন্মের কাছে তাদের পরিচিত করে দেওয়া আমাদের কর্তব্য। সবার কত অবদান ছিল, কত ত্যাগ ছিল এবং যার মধ্যে আজকে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি সব জানাতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘হঠাৎ ঘোষণায় স্বাধীনতা আসে না। সেটা আসেনি। সেই সংগ্রামের পথ বেয়েই কিন্তু এই স্বাধীনতা এসেছে। আর সেই স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরুই করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তারই অবদান আজকে আমাদের স্বাধীন সত্তা, স্বাধীন জাতিসত্তা এবং বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।’

সত্যকে মুছে ফেলা যায় না উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘৭৫ এর পর থেকে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছিল। ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর যে অবদান সেটা মুছেই ফেলা হয়েছিল। আসলে সত্যকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না। ইতিহাস ঠিকই ফিরে আসে।’

করোনা মহামারির কারণে সশরীরে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে না পারায় আক্ষেপ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার সব থেকে কষ্ট লাগছে আমি নিজে উপস্থিত থাকতে পারলাম না। অনেক পুরনো মানুষের সঙ্গে দেখা হতো আজকে থাকতে পারলে।’

করোনাভাইরাস মহামারি প্রতিরোধে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এবং এখনো যারা টিকা নেননি তাদের দ্রুত টিকা নেওয়ার অনুরোধ করেন সরকার প্রধান।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২৪ বিশিষ্ট নাগরিককে ২০২২ সালে একুশে পদক প্রদান করা হয়। এ বছর ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য দুইজনকে মরণোত্তর, ভাষা-সাহিত্যে দুইজন, শিল্পকলায় সাতজন, মুক্তিযুদ্ধে চারজন, সাংবাদিকতায় একজন, গবেষণায় চারজন, শিক্ষায় একজন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে একজন ও সমাজসেবায় দুইজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে এই পদক প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বিশিষ্টজনদের হাতে একুশে পদক তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;