মিথ্যায় ধ্বংস সত্যে মুক্তি

মিথ্যায় ধ্বংস সত্যে মুক্তি
মিথ্যায় ধ্বংস সত্যে মুক্তি

সত্য কথা যারা বলেন, তাদের মর্যাদা অনেক। সত্যবাদিতা আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান হওয়ার অন্যতম মাধ্যম। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘নবী, সত্যবাদী, শহীদ ও সৎ ব্যক্তিবর্গ আল্লাহ এদেরকে নেয়ামত দান করেছেন।’ (সুরা নিসা : ৬৯)। আল্লাহ তায়ালার কাছে সত্যবাদীদের বিশেষ মর্যাদা এই আয়াত থেকেই স্পষ্ট হয়। এখানে চার শ্রেণির মর্যাদান মানুষের ভেতর দ্বিতীয় স্তরে উল্লেখ করেছেন সত্যবাদীদের কথা।
সত্যবাদিতা সব নবী ও রাসুলদের গুণ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আপনি এই কিতাবে ইবরাহিমের কথা বলুন, নিশ্চয় তিনি ছিলেন সত্যবাদী নবী।’ (সুরা মারয়াম : ৪১)।
আরও বলেছেন, ‘এই কিতাবে ইসমাঈলের কথা বলুন, নিশ্চয় তিনি ছিলেন প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী এবং তিনি ছিলেন রাসুল ও নবী।’ (সুরা মারয়াম : ৫৪)। আরও বলেন, ‘এই কিতাবে ইদরিসের আলোচনা করুন, নিশ্চয় তিনি ছিলেন সত্যবাদী নবী।’ (সুরা মারিয়াম : ৫৬)। আল্লাহ এরকম আরও অনেক নবী ও প্রিয় বান্দার বিশেষ গুণ হিসেবে সত্যবাদিতার কথা আলোচনা করেছেন। আল্লাহ প্রিয় বান্দা হতে কে না চায়! সুতরাং মিথ্যা ছেড়ে সত্যবাদিতার চর্চা করা চাই সবসময়।
রাসুল (সা.)-এর সবচেয়ে প্রিয় সাহাবি হজরত আবু বকর (রা.)-এর গুণ ছিল সত্যবাদিতা। এই জন্য তার নাম হয়ে যায় ‘সিদ্দিক’ অর্থাৎ সত্যবাদী। যে ব্যক্তি সদা সত্য বলবে আল্লাহর রাসুল (সা.) স্বয়ং তার জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত উবাদা ইবনে সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আমার নিকট ছয়টি বিষয়ের জিম্মাদার হও, আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হব।
ছয়টি বিষয় হচ্ছেÑ ১. যখন তোমরা কথা বলবে, সত্য বলবে। ২. অঙ্গীকার করলে তা পূরণ করবে। ৩. আমানত যথাযথ আদায় করবে। ৪. তোমাদের লজ্জাস্থান হেফাজত করবে। ৫. তোমাদের দৃষ্টি নিম্নগামী রাখবে এবং ৬. অন্যায় কাজ থেকে তোমাদের হাত ফিরিয়ে রাখবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ২২৮০৯)
মানুষ চায় তার যেন কোনো ক্ষতি না হয়। নবীজি সত্যবাদিতার সঙ্গে এর নিশ্চয়তা দিয়েছেন। এমনকি সত্য বলার কারণে অনেক সময় বাহ্যত ক্ষতি ও বিপদের শঙ্কা দেখা দিলেও মূলত এতেই রয়েছে পূর্ণ ও চ‚ড়ান্ত নিরাপত্তা। হাদিসে এসেছে, হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমার মাঝে চারটি স্বভাব পাওয়া যায়, তবে দুনিয়ার সব কিছু ধ্বংস হলেও তোমার কোনো ক্ষতি হবে না।
তা হচ্ছে ১. আমানত রক্ষা করা। ২. সত্যবাদী হওয়া। ৩. সচ্চরিত্রবান হওয়া এবং ৪. হালাল খাবার খাওয়া।’ (মুসনাদে আহমদ : ৬৬৫২)। অন্য একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সর্বাত্মকভাবে সত্য অবলম্বন কর। যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে সত্য বলার মধ্যে ধ্বংস দেখতে পাও। অর্থাৎ পরিস্থিতি এমন যে, তোমাদের কাছে দৃশ্যত মনে হচ্ছে, সত্য বললে বিপদে পড়বে। তবুও সত্য বল। কেননা, আল্লাহ সত্যের মধ্যে মুক্তি রেখেছেন।’ (ফাইজুল কাদির : ৩২৫২)। অপর হাদিসে এসেছে ‘সত্য মুক্তি দেয়, মিথ্যা ধ্বংস করে।’ (বোখারি : ৮/৩০)