লাগাতার বর্ষণে সীতাকুণ্ডে পাহাড় ধসে বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা

লাগাতার বর্ষণে সীতাকুণ্ডে পাহাড় ধসে বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা

বিশেষ প্রতিবেদক ।। 

সীতাকুণ্ডের পাহাড়ি এলাকায় গত তিনদিন ধরে টানা বর্ষণে ছোট ছোট পাহাড় ধসের আশংকা প্রকাশ করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ভারি বর্ষণ আরো দুইদিন অব্যাহত থাকলে সীতাকুণ্ড পাহাড় ধস হতে পারে। এ আশংকায় সীতাকুণ্ডে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য বার বার নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন। উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়।

সীতাকুণ্ড পাহাড়ের ছোট ছোট টিলায় ও ঢালুতে প্রায় ২০হাজার মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে। এরা বিভিন্ন সময়ে লোকজন পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন করেছে। এখন এদের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে। মধ্য আষাঢ়ের ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। টানা বর্ষণে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোর মাটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। দিনরাত থেমে থেমে চলা হালকা থেকে মাঝারি ধরনের এ বৃষ্টিপাতে দুর্বল হয়ে পড়া পাহাড়গুলোতে এখন বড় ধরনের ধসের আশংকা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সেই সাথে শুরু হয়েছে পাহাড়ে অবৈধভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বসবাসকারী পরিবারগুলোর উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। যেকোনো মুহূর্তে পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

জানা যায়, জঙ্গল সলিমপুর, সোনাউছড়ি, কুমিরা, বাঁশবাড়িয়া, বারৈয়াঢালা, লতিফপুর, ছোট দারোগারহাট ও বাড়বকুণ্ড আশ্রয়ন প্রকল্প, সীতাকুরু সদর এলাকায় পাহাড়ের টিলায় ও ঢালুতে বসতি স্থাপন করে বসবাস করছেন লোকজন। এদের অধিকাংশই দিনমজুর, রিক্সাচালক, স্থানীয় জুটমিল-টেক্সটাইল মিলগুলোতে চাকরি এবং ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবনযাপন করছে। একইভাবে সীতাকুণ্ড পার্বত্য এলাকায় প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক আদিবাসী পরিবার। প্রতিনিয়ত তারা মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে আসছে। তবে ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাসরত বাসিন্দারা সেখান থেকে উঠতে চাই না। পাহাড় ছেড়ে তারা কোথায় যাবে? প্রশাসনের সে ব্যাপারে কোন মাথা ব্যথা নেই।

বারৈয়াঢালা, সীতাকুণ্ড পৌর সদর, কুমিরা, সলিমপুর, সোনাইছড়ি এলাকায় ১৬ হাজার ২৪৪ একর বনভূমি রয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজার একর জায়গা বেদখলে। অবৈধ দখল হওয়া জায়গার ওপর প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের ২০হাজার লোকজন ঘরবাড়ি তৈরি করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন।

সীতাকুণ্ড পৌর মেয়র বদিউল আলম জানান, টানা বর্ষণের কারনে সীতাকুণ্ড পাহাড় ধসের ঝুঁকি বেড়েছে। পাহাড়ের বসবাসকারী বাসিন্দাদের এ বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় জানান, ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পাহাড় ধসের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। চারদিন আগেই এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। কিন্তু কেউ বসতঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে আসতে চাইছে না। তবে পাহাড়ি অঞ্চলের লোকজন এই মুহুর্তে সরে যাওয়া উচিত। টানা বর্ষণে পাহাড়ের টিলাগুলো যে কোন সময় ভেঙে পড়তে পারে।