সংকটের মোকাবিলায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে একসঙ্গে লড়তে হবে:প্রধানমন্ত্রী 

সংকটের মোকাবিলায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে একসঙ্গে লড়তে হবে:প্রধানমন্ত্রী 
সংকটের মোকাবিলায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে একসঙ্গে লড়তে হবে:প্রধানমন্ত্রী 

পোস্টকার্ড প্রতিবেদক।।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট সংকটে সমন্বিত দায়িত্বশীলতা এবং অংশীদারত্বমূলক মনোভাবের ওপর গুরুত্বারোপ করে বিশ্ব সম্প্রদায়কে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবাইকে একসঙ্গে সংকটের মোকাবিলা করতে হবে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার বিষয়ক এক ভার্চুয়াল সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি। এনহ্যান্সিং রিজিওনাল কো-অপারেশন ইন সাউথ এশিয়া টু কমব্যাট কোভিড-১৯ রিলেটেড ইমপ্যাক্ট অন ইটস ইকোনমিকস’ শীর্ষক এ ভার্চুয়াল সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)।

বিশ^ সম্প্রদায়ের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব সম্ভবত গত একশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকটের মুখোমুখি। সুতরাং সবাই একসঙ্গে সংকটের মোকাবিলা করা দরকার। প্রতিটি সমাজ থেকে সমন্বিত দায়িত্বশীলতা এবং অংশীদারত্বমূলক মনোভাব প্রয়োজন।

বিচ্ছিন্নতার নীতি বাস্তবমুখী নয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়াই করছে। এখন করোনা ভাইরাস আমাদের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করছে। বিশ্বায়নের বর্তমান পর্যায়ে একটি দেশকে পুরো বিশ^ থেকে আলাদা রাখা সম্ভব নয়। এখানে বিচ্ছিন্নতার নীতি আর কাজ করবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জানি না এই মহামারি কত দিন থাকবে। এটি ইতোমধ্যে অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। অর্থনীতি, ব্যবসা ও সমাজের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে, ভয় এবং ট্রমা কাটাতে জনগণকে সহযোগিতা করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ^ একটি সংকটময় পরিস্থিতি অতিক্রম করছে। এই সংকট মোকাবিলায় আমাদের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সময় বিশ্বের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় পাঁচটি বিষয়ে সবাইকে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এগুলো হচ্ছে- প্রথমত, সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে দারিদ্র্য এবং বৈষম্য দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। গেল এক দশকে আমরা আমাদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্ধেক দারিদ্র্যসীমা থেকে বের করে এনেছিলাম। তাদের অনেকে এখন আবার পূর্বের অবস্থানে ফিরে যেতে পারে। সুতরাং বিশ্বকে মানবকল্যাণ, বৈষম্য দূরীকরণ, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা ও কোভিড-১৯ এর পূর্বের অর্থনৈতিক অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে নতুন করে ভাবতে হবে।

দ্বিতীয়ত, আমাদের প্রয়োজন জি-৭, জি-২০ এবং ওইসিডির মতো সংগঠনগুলো হতে দৃঢ় ও পরিকল্পিত বৈশি^ক নেতৃত্ব। জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাকেও এগিয়ে আসা উচিত। আমি অধ্যাপক সোয়াব এর (বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা) প্রশংসা করছি। কারণ তিনি সংক্রামক রোগগুলোকে ২০২০-এর বৈশ্বিক ঝুঁকি সম্পর্কিত প্রতিবেদনে অন্যতম মুখ্য ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সুতরাং ফোরাম এবং জাতিসংঘের উচিত সরকার ও বিশ^ ব্যবসাকে এ বিষয়ে একত্রিত করা এবং নেতৃত্ব দেয়া। তৃতীয়ত, আমরা ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা, কাজ এবং উৎপাদনে পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করেছি। কোভিড পরবর্তী সময়ে নতুন নীতি, স্ট্যান্ডার্ড ও পদ্ধতি দেখব। ইতোমধ্যে আমরা দেখছি সরবরাহ চেইনে থাকা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড যথাযথ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছে না। সুতরাং আমাদের এমন কৌশল ও বাস্তবমুখী সহায়তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যেন বাংলাদেশের মতো দেশগুলো টিকে থাকতে পারে।

চতুর্থত, অভিবাসী কর্মীরা বেকারত্বসহ অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতি পার করছেন। এটি দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। বোঝা ও দায়িত্ব শেয়ার করার মতো আমাদের এমন একটি অর্থপূর্ণ বৈশ্বিক কৌশল ও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

পঞ্চম, এই মহামারির সময়ে আমরা কার্যকরীভাবে বেশ কিছু ডিজিটাল প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার করেছি। যেমন- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সংক্রমণ চিহ্নিত করা। ভবিষ্যতের প্রস্তুতির জন্য আমরা বিভিন্ন সেক্টরে এ রকম উদ্ভাবনীমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে।

এ সময় করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ সংকটের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মহামারির প্রাদুর্ভাবের কারণে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরবরাহ ও চাহিদা দ্বিমুখী সংকটের সম্মুখীন। এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন খাতে ১১.৬০ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ ঘোষণার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্যাকেজটির মূল সুবিধা ভোগ করবে উৎপাদন ও সেবা খাত, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষামূলক খাতগুলো। এই সহায়তা প্যাকেজটি আমাদের জিডিপির ৩.৩ শতাংশের সমান। সংকট লম্বা হলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত রয়েছে। তবে সংকট প্রলম্বিত হলে দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ হিসেবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে বিবেচিত হবে। কৃষি খাত প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন ডলার প্রণোদনা দেয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

সামাজিক সুরক্ষায় সহায়তার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ৫ কোটি লোককে সরাসরি নগদ অর্থ সহায়তা দিচ্ছি। ৬ শত হাজার টন খাদ্যশস্য ইতোমধ্যে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষদের সরবরাহের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১.১ মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীর বিষয়টিও সরকারের সার্বিক পরিকল্পনায় রয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।

ভার্চুয়াল এ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) সভাপতি বরজ ব্রেন্ডে, করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি ও সংকট থেকে উত্তরণের উপায় তুলে ধরেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পুনম ক্ষেত্রপাল সিং এবং ডব্লিউইএফের স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যসেবার ভবিষ্যৎ কর্মসূচির প্রধান আর্নোড বার্নায়েট।