সীতাকুণ্ডে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পাহাড় ধসের শঙ্কা 

সীতাকুণ্ডে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পাহাড় ধসের শঙ্কা 
সীতাকুণ্ডে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পাহাড় ধসের শঙ্কা 

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।। 

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন এলাকা ডুবে গেছে। অন্যদিকে অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধসের শঙ্কা জনমনে। প্রতি বছর অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে পাহাড় ধসে।

বুধবার রাত থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়। এতে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের শঙ্কা রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তারপরও পাহাড়জুড়ে অবাধে চলছে বসতি স্থাপন। পাহাড় ধসে মৃত্যুঝুঁকি থাকার পরও সরানো যাচ্ছে না এসব পরিবারকে। 

উপজেলার ভাটিয়ারী, জঙ্গল সলিমপুর, সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বারো আউলিয়া, কুমিরা, বড় দারোগারহাট, বাঁশবাড়িয়া, মধ্যম মহাদেবপুরসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় রয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড় ধসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও টনক নড়ছে না এখানকার বাসিন্দাদের। 

বর্ষা মৌসুমে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হলেও পরে আবার মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বসবাস শুরু করে তারা। আবার এসব পরিবারের জন্য সাবাড় হচ্ছে পাহাড়, ঘটছে পরিবেশ বিপর্যয়। জঙ্গল সলিমপুরে দুই দশকে পাহাড় ধসে প্রাণ গেছে ২২ জনের। এর মধ্যে ২০১৭ সালেই এখানে শিশুসহ ৫ জন মারা যায়। এখানে পাহাড়ে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার বাস করে বলে জানা গেছে।

এদিকে পাহাড় ধসের শঙ্কা রয়েছে সীতাকুণ্ডে বসবাসরত বিভিন্ন ত্রিপুরা পল্লীতেও। ত্রিপুরা পল্লীর সর্দার কাঞ্চন ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ে আর থাকতে ইচ্ছে করছে না। কোনো রকম মাটি ও টিনের ছোট ছোট ঘর তৈরি করে বসবাস করছি আমরা। 

মৃত্যুঝুঁকিতে থাকা এসব এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে যদি প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা না নেয় তা হলে আবারও যেকোনো সময় বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছে স্থানীয়রা।

অন্যদিকে সীতাকুণ্ডে বুধবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত টানা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে সীতাকুণ্ডের নিম্নাঞ্চল। বিভিন্ন গ্রাম এলাকায় প্রধান সড়ক ডুবে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সীতাকুণ্ডের লাখ লাখ মানুষ। জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছে অনেকে। এ ছাড়া সীতাকুণ্ডে বিভিন্ন ইউনিয়নে বিভিন্ন খাল সংস্কার না হওয়ায় এ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ড পৌরসভাধীন শিবপুর, ঈদিলপুর, নামার বাজার, নুনাছড়া, সৈয়দপুর, বটতলা, এয়াকুব নগর, ১ নং সৈয়দপুর ইউনিয়ন, ২ নং বারৈয়াঢালা ইউনিয়ন, ৪ নং মুরাদপুর ইউনিয়, বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন, কুমিরা, ভাটিয়ারীর বক্তারপাড়া, কলেজ রোড, সলিমপুরসহ উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে পাশের ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলও। এতে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুর্ভোগের যেন শেষ দেখছেন না প্লাবিত এলাকার মানুষ। একটু বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয় সীতাকুণ্ডের পৌরসভাসহ আশপাশের এলাকা। 

মহিউদ্দীন নামের সীতাকুণ্ড পৌরসভার এক বাসিন্দা জানান, আমাদের এই দুর্ভোগ আর কত দিন পোহাতে হবে জানি না। আমি এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনুরোধ করব, রাস্তাঘাটের উন্নয়নের চেয়ে বেশি জরুরি বৃষ্টির পানি যাওয়ার খাল-নালা সংস্কার করা। এই সমস্যাটি দূর করুন। 

অপরদিকে সীতাকুণ্ড পৌরসভাধীন শিবপুর, সৈয়দপুর ও ইদিলপুর গত কয়েক বছর ধরে পানিতে প্লাবিত হয়ে হাজার কৃষকের ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে। ফলে চরম দুর্ভোগে ও সীমাহীন কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করছে ওই এলাকার চাষিরা। স্থানীয় কৃষকদের মতে, শিবপুর ও সৈয়দপুরের মাঝ দিয়ে যে খালটি সমুদ্রে গেছে সেটি সংস্কার করা জরুরি। পাশাপাশি বশরতনগর এলাকায় অবস্থিত স্লুইস গেটটিরও সংস্কার প্রয়োজন।

এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড পৌর মেয়র আলহাজ বদিউল আলম বলেন, খাল ও স্লুইস গেট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্লুইস গেটটি আরও বড় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, পাশাপাশি সংস্কার করা হবে খালেরও। আশা করি শিগগিরই কাজ শুরু হবে। 

খালেদ / পোস্টকার্ড ;