সীতাকুণ্ড পৌর আ. লীগের সম্মেলন কাল, কাউন্সিলরদের দুয়ারে প্রার্থীদের ধর্ণা

সীতাকুণ্ড পৌর আ. লীগের সম্মেলন কাল, কাউন্সিলরদের দুয়ারে প্রার্থীদের ধর্ণা

কাল ১৩ নভেম্বর, বুধবার সীতাকুণ্ডস্থ জেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে পৌরসভা আওয়ামী লীগের বহুল প্রতীক্ষিত সম্মেলন । ত্রিবার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে তৃণমূল পর্যায়ে চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। কারা সভাপতি-সম্পাদক হচ্ছেন, তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। সভাপতি-সম্পাদক পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন। কাউন্সিলরদের গোপন ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের সিদ্ধান্তে প্রার্থীদের তৎপরতা এখন চোখে পড়ার মতো। প্রার্থিতা ঘোষণা নিয়ে সরগরম প্রার্থী ও সমর্থকদের ফেসবুক। বিশেষ করে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ফেসবুকে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন। তবে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। কাউন্সিল নিয়ে সহিংসতা হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন অনেকে।
পৌর আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে পৌর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে পৌর মেয়র বদিউল আলমকে সভাপতি ও এ জে হোসেন লিটনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে উপজেলা রাজনীতি বর্তমান এমপি দিদারুল আলম, উপজেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া এবং উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন তিনধারায় বিভক্ত থাকায় এর প্রভাব পড়ে পৌর রাজনীতিতেও। গত তিন বছর ধরে তাদের নেতৃত্বে দলের বিভিন্ন কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করা হচ্ছিল। তবে পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগে সাধারণ সম্পাদক এ জে হোসেন লিটনকে দল থেকে অব্যাহতি দিয়ে ইঞ্জিনিয়ার জাহাঙ্গীর আলমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে বলা হয়। তবে এখন সম্মেলনের আগে পৌর আ. লীগের সভাপতি পদে একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। সভাপতি পদে পৌরসভা আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি ও মেয়র আলহাজ্ব বদিউল আলম, পৌর কাউন্সিলর মাইমুন উদ্দিন মামুন, উপজেলা আ. লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, আ. লীগ নেতা ও ব্যবসায়ী এম কামাল উল্লাহ, পৌরসভা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ জে হোসেন লিটন, পৌরসভা যুবলীগের সভাপতি শাহ কামাল চৌধুরী, সাবেক ছাত্রনেতা আমিনুল ইসলাম বাহারের নাম শোনা যাচ্ছে।

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে সাবেক ছাত্রনেতা ও সীতাকুন্ড প্রেসক্লাবের সদ্য বিদায়ী সভাপতি সাংবাদিক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী মিঠু, পৌর কাউন্সিলর জুলফিকার আলী শামীম, কাউন্সিলর সফিউল আলম চৌধুরী মুরাদ, পৌর আ.লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহাঙ্গীর, উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম জসিম, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাহেদ চৌধুরী ফারুক, সীতাকুণ্ড কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোফাখারুল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. আব্দুস সামাদ, ছাত্রনেতা দুলাল চন্দ্র দে, যুবলীগ নেতা আব্দুল হান্নানের নাম শোনা যাচ্ছে।
জানা যায়, তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মতামতকে মূল্যায়ন করতে কাউন্সিলরদের গোপন ভোটে নেতা নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে গোপন ভোটে ওয়ার্ড কমিটি নির্বাচিত করা হয়েছে। এরপরই ওয়ার্ড পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গা ভাব দেখা দেয়। সম্ভাব্য সভাপতি ও সম্পাদক প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সমর্থন আদায়ে তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
পৌর আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাউন্সিলরদের গোপন ভোটে কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়ায় দলীয় পদ-পদবি প্রত্যাশীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কর্মী-সমর্থকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অতীতে দলীয় কর্মকাণ্ডে কে কী ভূমিকা রেখেছেন, তা তুলে ধরে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন। পদ-পদবী নিজেদের দখলে নিতে স্থানীয় নেতারা উপজেলা ও জেলার নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূলের কাউন্সিলারদের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি তৎপর দেখা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে সরব সমর্থকরা। পদপদবী দাবী করে ছবি দিয়ে দলীয় ফোরামের দৃষ্টি আর্কষণ করছেন কেউ কেউ এবং কিছু কিছু জায়গায় ইতিমধ্যে সম্মেলন সম্পর্কিত ব্যানার-ফেস্টুনও টানানো হয়েছে। ওয়ার্ড পর্যায়ের কয়েকজন কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক প্রার্থী কাউন্সিলরদের অর্থের লোভ দেখিয়ে পদ পেতে চান। এটাকে পরিহার করে তারা নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলের দুর্দিনে পাশে থাকতে পারবেন এবং অতীতে দলের জন্য নিবেদিত ছিলেন এমন যোগ্য নেতা নির্বাচন করতে চান তারা। সন্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সমন্বয়ক এডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরী জানান, অক্টোবরে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড কমিটি কাউন্সিলরদের গোপন ভোটের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে। ১৩ নভেম্বর পৌরসভা কমিটিও ২৫১জন কাউন্সিলরের গোপন ভোটের মাধ্যমে গঠন করা হবে।