সীতাকুণ্ডে পুরনো বাসে নতুন রঙের প্রলেপ, এবারও রাস্তায় নামছে ফিটনেসহীন গাড়ি

সীতাকুণ্ডে পুরনো বাসে নতুন রঙের প্রলেপ, এবারও রাস্তায় নামছে ফিটনেসহীন গাড়ি
সীতাকুণ্ডে পুরনো বাসে নতুন রঙের প্রলেপ, এবারও রাস্তায় নামছে ফিটনেসহীন গাড়ি

মেজবাহ খালেদ ।। 

ঈদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ ঘরমুখো মানুষের চাপ সামাল দেওয়া । আর এসব ঘরমুখো মানুষের বাড়তি চাহিদা সামাল দিতে শেষ মুহূর্তে বাস মালিকরা শতাধিক ফিটনেসহীন বাস সড়কে নামানোর পরিকল্পনা করছে ।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ঈদ সামনে রেখে পুরনো ইঞ্জিনযুক্ত বাসের বডি পরিবর্তন করে নজরকাড়া নানা রঙের প্রলেপ দিয়ে এসব বাস পুনরায় যাত্রী পরিবহনের উপযোগী করা করে তোলা হচ্ছে । কিন্তু এগুলোর একটিরও ফিটনেস সনদ নেই। যে কারণে এসব ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ঈদে ঘরমুখো মানুষের বিড়ম্বনার পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও অনেকাংশে বাড়িয়ে দেবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা। ফিটনেসহীন এসব বাস যাত্রাপথে বিকল হয়ে অপ্রত্যাশিত যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তা ছাড়া সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে রয়েছে এ বাসগুলো। এ নিয়ে ঘরমুখো যাত্রীরা দুশ্চিন্তায় থাকেন ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশে থাকা গ্যারেজগুলোয় পুরনো বাসগুলোর ইঞ্জিন মেরামত করে বডিতে নতুন রঙের প্রলেপ দেওয়ার কাজ চলছে। তা ছাড়া এসব এলাকায় থাকা গাড়ির গ্যারেজ কর্মীদের এখন চোখে ঘুম নেই। দিনরাত খেটে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার তিন দিন আগেই এসব বাসের মেরামত কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে তাদের। মেরামত শেষে এসব ফিটনেস সনদহীন গাড়ি সড়ক-মহাসড়কে নামানো হবে।

পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতা ও বিআরটিএর অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পরিবহন করে থাকে এসব গাড়ি। আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মঞ্জুরুল আলম বলেন, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীর অত্যধিক চাপ থাকে। চাহিদার তুলনায় গণপরিবহনের সঙ্কট থাকায় তুলনামূলক পুরনো যানবাহনও মেরামত করে সড়কে নামানো হয়। তবে এ ধরনের বাসগুলোর ক্ষেত্রে সময় একটু বেশি লাগলেও দুর্ঘটনার নজির তেমন বেশি নেই। সাধারণত দক্ষ চালকদের মাধ্যমেই এগুলো পরিচালনা করা হয়ে থাকে।

সরেজমিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের বেশ কয়েকটি ওয়ার্কশপে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে লক্কড়-ঝক্কড় বাস মেরামতের কাজ চলছে। ফিটনেসবিহীন ভাঙা গাড়িগুলো ঝালাই করে জোড়াতালি দেওয়া হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া গাড়ির ইঞ্জিন, ব্রেকে সমস্যা কিংবা ছেঁড়া-ফাটা সিট মেরামতের কাজ চলছে। গ্যারেজ মিস্ত্রিরা এসব পুরাতন গাড়ি মেরামতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন।

চলাচলকারী যাত্রীদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় দিনকে দিন বাড়ছে এসব গাড়ির সংখ্যা। সড়কে প্রাণহানি হয়ে দাঁড়িয়েছে নিয়মিত ঘটনা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিয়মিত চলাচল করা অনিক চৌধুরী বলেন, এসব ফিটনেসবিহীন গাড়ির কারণেই মহাসড়কে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে। আর তাতে যাত্রী চলাচলে ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণ।

গাড়ি মালিক আব্দুর জব্বার জানান, ঈদের আগে যাত্রীদের বাড়তি চাপ মাথায় রেখে ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো রাস্তায় নামানো হয়। তবে এ ক্ষেত্রে যাত্রীরা এই যানবাহনে কতটুকু নিরাপদ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। যদিও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব গাড়ি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ জানান, এসব ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে বহুগুণে। এতে করে দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধিরও আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য এসব ফিটনেসবিহীন বাস ওয়ার্কশপ থেকে মহাসড়কে ওঠার আগেই প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি ।

এই বিষয়ে বারো আউলিয়া হাইওয়ে থানার ওসি জাহাঙ্গীর বেলাল বলেন, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা ছাড়া যাত্রীদেরও এ বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;