সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপো অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিপুরণ পায়নি অনেক আহত-নিহত পরিবার!

সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপো অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিপুরণ পায়নি অনেক আহত-নিহত পরিবার!
সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপো অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিপুরণ পায়নি অনেক আহত-নিহত পরিবার

বিশেষ প্রতিবেদক ।।

বিএম ডিপোতে ক্রেন অপারেটরের কাজ করতেন সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের ফকিরহাট ফকিরপাড়া এলাকার মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান (প্রকাশ - শাহজাহান) এর ছেলে আব্দুল মনির হোসেন। দুর্ঘটনার সময় তিনি বিএম ডিপোতে কর্মরত ছিলেন। বিস্ফোরণের ঠিক আগ মূহুর্ত্বে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করা একটি ছবিতে তাকে দেখা যায়। কিন্তু দুর্ঘটনার পর থেকে আজ অবধি তার পরিবার আব্দুল মনির হোসেনের কোন খোঁজ পাননি। মর্গে থাকা লাশের মাঝে আব্দুল মনির হোসেনের লাশ রয়েছে কিনা তা জানেনা। যদিও এর মধ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে ডিএনএ নমুনা দেওয়া হয়েছে। নিখোঁজ আব্দুল মনির হোসেনের ভাই আলমগির জানান, বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পরিবারে কোন খোঁজ খবর কেউ নেয়নি এবং কোন অর্থ সহায়তা তাদের করা হয়নি। 

সীতাকুণ্ড উপজেলার কেদারখীল এলাকার ট্রাক ড্রাইভার নুরুল আবসার সেদিন মাল আনলোডিং এর কাজ করছিলেন বিএম ডিপোতে, বিস্ফোরণে মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি করার ১৬ দিন চিকিৎসার পর বাসায় ফিরেছেন কয়েকদিন আগে। তিনি জানান, ডিপো কর্তৃপক্ষ ৫ হাজার টাকা মেডিকেলে অর্থসাহয়তা প্রদান করে কিন্তু এর পর থেকে তাদরের সাথে কোন যোগাযোগ করেনি কেউ ।

শুধু তাই নয় এই দুর্ঘটনায় সীতাকুণ্ডের ৭ জন ব্যক্তি গুরত্বর আহত হন, নিহত হন এক জন, এখনো নিখোঁজ রয়েছেন আরো এক জন। নিহত আফজাল হোসেনের বাড়ি সীতাকুন্ড পৌরসভায়। তিনি বিএম ডিপোতে ওয়েল্ডারের কাজ করতেন। নিহত আফজাল হোসেনের ছোট ভাই ইমাম হোসেন জানান, তার ভাই ডিপোতে কর্মরত অবস্থায় নিহত হলেও ডিপো কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে আজ পর্যন্ত যোগাযোগ করেনি। তাদের কোন আর্থিক সহায়তা ও প্রদান করেনি। উপজেলার জোড়ামতল এলাকার রিয়াজ উদ্দিন বিএম ডিপোতে কর্মরত ছিলেন বিস্ফোরণের একদিন পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। গত মঙ্গলবার তাকে ছাড়পত্র দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রিয়াজ উদ্দিনের মা আয়েশা খাতুন জানান, সরকারি সহায়তায় তার ছেলের চিকিৎসা করানো হয়েছে। তার ছেলে বর্তমানে সুস্থ আছেন কিন্তু বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ এখনো তাদের সাথে কোন যোগাযোগ করেনি এবং কোন অর্থ সহায়তাও করেনি।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষের অর্থ সহায়তায় সংবাদ জানার পর তাদের সাথে যোগাযোগ করেন নুরুল আবসার। ডিপো কর্তৃপক্ষ তার সমস্ত কাগজ জমা দেওয়ার অনুরোধ করেছে বলে জানান তিনি। সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী এলাকার মোহাম্মদ ফারুক আহত হন তিনি ও গতকাল হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পান। তিনিও কোন অর্থসহায়তা পাননি। এছাড়া আহতদের মধ্যে রয়েছে সলিমপুর ইউনিয়নের নুর উদ্দিন ও তোফাজ্জল হক, সৈয়দপুরের সাঈদ হোসেন রিফাত ও ইয়াসিন হোসেন, কুমিরার ট্রাক ড্রাইভার আবুল হাসেম ও সীতাকুণ্ডের সামাদ।

এব্যপারে জানতে চাইলে বিএম ডিপোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল বলেন, আমরা যেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষতিপুরণ প্রদান করছি তাই শুধু ২/১ জনের জন্য এমন অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারিনা, যাচাই বাছাই করছি যারা ক্ষতিপুরণ পায়নি তাদের তালিকা করা হচ্ছে তালিকা সম্পন্ন করে দিন তারিখ ঠিক করে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থদেরও কাছে সহায়তার অর্থ তুলে দেওয়া হবে। আর যেহেতু টাকার অংকটাও ছোট নয় তাই ক্ষতিগ্রস্থরা যাতে টাকাটা পায় সেজন্য আমরা প্রপার ব্যক্তিও নির্বাচন করছি।

উল্লেখ্য গত ৫ জুন রাত সাড়ে ৯টয় সীতাকুণ্ডের শীতলপুর এলাকায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আগুন লাগার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ভয়ংকর এক বিস্ফোরণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে ডিপোটির বিভিন্ন জায়গায়। এ ঘটনায় দমকলকর্মীসহ ৪৯ জন মারা যান। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;