সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক'র মাসিক সাহিত্য আসর অনুষ্ঠিত

সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক'র মাসিক সাহিত্য আসর অনুষ্ঠিত
সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক'র মাসিক সাহিত্য আসর অনুষ্ঠিত

পলি শাহীনা, নিউইয়র্ক ।।

জ্যাকসন হাইটসের একটি মিলনায়তনে গত ২৪ জুন শুক্রবার 'সাহিত্য একাডেমি, নিউইয়র্ক'র মাসিক সাহিত্য আসরটি অনুষ্ঠিত হয়। একইদিন বাংলাদেশের ইতিহাস তৈরি হয়, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয়। আনন্দ এবং বিষাদ যেন একে অপরের হাত ধরে চলে। সাহিত্য একাডেমির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকার এবং জনগনকে পদ্মা সেতুর জন্য অভিনন্দন জানানো হয় এবং প্রাণে প্রাণ মিলিয়ে বন্যা কবলিতদের পাশে দাঁড়ানোর কথাও বলা হয়। গোটা অনুষ্ঠানটি পরিচালনায় ছিলেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন।

আসরের শুরুতে গল্পপাঠ করেন রিমি রুম্মান, সোহানা নাজনীন ও পলি শাহীনা।

এবারের আসরে সাহিত্য আলোচনার পাশাপাশি সকলের পাঠেও ঘুরেফিরে দেশের দূর্যোগপীড়িতদের কথা উঠে এসেছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সাংবাদিক মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, এবারের আসরের গল্পপাঠ ভালো লেগেছে। সামনে প্রবন্ধ পাঠের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। লেখা পাঠের আগে আলোচনার সুবিধার্থে আলোচকদের কাছে লেখকদের লেখাগুলো পাঠিয়ে দেয়ার পরামর্শ দেন। কবিতার ছন্দ নিয়ে আলোচনা করা এবং কবিতা লেখার আগে ব্যাকরণ জেনে নেয়ার আবশ্যকতাও উল্লেখ করেন।

কবি তমিজ উদদীন লোদী বলেন, সাহিত্য একাডেমিতে আজ তিনটি গল্প শুনেছি। গল্পগুলোর উপর বিদগ্ধজনের আলোচনা জরুরি। এতে করে তরুণ গল্পকাররা একটা দিকনির্দেশনা পাবে, গল্প লেখার কৌশল আয়ত্ত করতে পারবে। তাঁর মতে, কবির চেয়েও কথাসাহিত্যিকের চোখ বেশি তীক্ষ্ণ হতে হয়। লেখকের তৃতীয় চোখ যতবেশি তীক্ষ্ণ হবে লেখা তত দৃঢ হবে। তিনি বলেন, সাহিত্য একাডেমির ছায়া বিস্তৃত হচ্ছে, এটি অত্যন্ত আনন্দের।

সৌউদ চৌধুরী বলেন, তাঁর গ্রামের বাড়ি, শহরের বাড়ি সব পানির তলে। কবি কাজী নজরুল ইসলামের ' হাসনাহেনা ফুটেছে, আমি প্রাণভরে তা উপভোগ করেছিলাম' লাইনটির উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, সুখ-দুঃখের দোলাচলে জীবন সদা বহমান।

চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক এবং শিল্পী মতলুব আলী ১৯৭১ সালের ১ আগষ্ট নিয়ে তাঁর একটি লেখা পাঠ করেন।

কবি কাজী আতীক বলেন, দেশের প্রায় অর্ধেকটা পানির নিচে। নদী ভাঙন দেখেছি আগে, কিন্তু বন্যার পানিতে পাহাড়ি ঢলে বালুর ঘরের মত বিল্ডিং ধসে পড়তে দেখি নি। এটি বড় দুঃখের। তিনি একটি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন।

নীরা কাদরী তাঁর সদ্য পড়া বইএর আলোচনা শেষে বন্যার্তদের সাহায্যে যার যার অবস্থান হতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন।

লেখক সোনিয়া কাদের বলেন, গত পঞ্চাশ বছর ধরে সিলেট শহরের উপশহরে বাস করছি। এখানে আগে কখনো পানি উঠেনি। স্বজনদের খোঁজ নেয়ার জন্য তিনি সকলের প্রতি অনুরোধ করেন।

লেখক সুরীত বড়ুয়া বলেন, সাহিত্য রচনা সহজ নয়, এটি নিমগ্ন সাধনার বিষয়। সাহিত্য চর্চার নির্মল পরিবেশ সাহিত্য একাডেমি হতে হয়ত একদিন আগামী দিনের গুরুত্বপূর্ণ কোন ডায়াসপোরা সাহিত্য সৃষ্টি হবে।

আবৃত্তিকার আনোয়ারুল হক লাভলু জানান, পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হওয়ার প্রথম দিকে তিনি সংযুক্ত ছিলেন। আজ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী দিনে সাহিত্য একাডেমির সকলের সঙ্গে এ আনন্দ ভাগাভাগি করতে পেরে তিনি খুশি।

লেখক ইশতিয়াক রুপু বলেন, গত শত বছরেও এমন প্রলয়ঙ্করী বন্যা হয় নি। সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার গ্রামগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কত লোক ভেসে গেছে, হিসেব নেই। তাঁদের জন্য সকলকে সাহায্যের অনুরোধ করেন। একটি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন তিনি।

আসরে আবৃত্তি করেন, পারভীন সুলতানা ও এম. এ সাদেক।

এবারের আসরে যাঁরা স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন, শামস আল মমীন, হোসাইন কবির, রানু ফেরদৌস, মাহফুজা শিলু, বেনজির শিকদার, তাহমিনা খান, জেবুন্নেসা জ্যোৎস্না, রওশন হাসান, শেলি জামান খান, মাইন উদ্দিন আহমেদ, সুলতানা ফেরদৌসী, মিনহাজ আহমেদ , আকবর হায়দার কিরণ, আনোয়ার সেলিম, আজিজুল হক মুন্না, সৈয়দ মামুনুর রশীদ, আবুল বাশার, লিউনা সারাহ প্রমুখ।

আসরে উপস্থিত ছিলেন, হাসান ফেরদৌস, আবেদীন কাদের, আহমাদ মাযহার, আবু সায়ীদ রতন, নাসির শিকদার, রাহাত কাজী শিউলি, তাহরিনা পারভীন প্রীতি, পারভীন পিয়া, মনজুর কাদের, খালেদ সরফুদ্দীন, মিশুক সেলিম, আমিরুল ইসলাম, আবেদ রহমান, সবিতা দাস, টমাস দুলু রয়, ভায়লা সালিনা, রুবাইয়া শবনম, শেলি তাসলিমা, রুবি, মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ আবুল হোসেন, মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন প্রমুখ।

সকলকে ধন্যবাদ এবং আগামী আসরের আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন মোশাররফ হোসেন।

খালেদ / পোস্টকার্ড ;