২০২০ সালে ধর্ষণের শিকার ৬২৬ শিশু,অধিকাংশই পরিচিতদের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়েছে : এমজেএফ

৬০ শতাংশ বেড়েছে বাল্যবিবাহ

২০২০ সালে ধর্ষণের শিকার ৬২৬ শিশু,অধিকাংশই পরিচিতদের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়েছে : এমজেএফ
২০২০ সালে ধর্ষণের শিকার ৬২৬ শিশু,অধিকাংশই পরিচিতদের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়েছে : এমজেএফ

পোস্টকার্ড ডেস্ক ।।

প্রাণঘাতী মহামারি করোনাকালে সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও শিশুদের জনসমাগমের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর সময়ে ৬২৬টি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)। এসময়ে বাল্যবিয়ে বেড়েছে ৬০ শতাংশ।

শনিবার সকালে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২০’ শিরোনামে শিশু অধিকার-বিষয়ক সংবাদের আধেয়-বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপস্থাপন করে এমজেএফ।

এতে দেখা যায়, গতবছর ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা, হত্যা, অপহরণ, নিখোঁজ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছে ১৪৫ শিশু। করোনাকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার সময় ৭ জন মেয়ে নির্যাতনের শিকার হয়, যাদের মধ্যে তিন জন মারা যায়।

পরিসংখ্যানে আরও উঠে এসেছে, আলোচ্য সময়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ১৯২ শিশু নিহত হয়েছে, যার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫৮ শিশু প্রাণ হারিয়েছে ও পানিতে ডুবে মারা গেছে ১৬৫ শিশু।

২০২০ সালে নিখোঁজ ও অপহরণের শিকার হয়েছে ২৯ শিশু। বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে ১০১ শিশু।

দেশের পাঁচটি জাতীয় বাংলা দৈনিক- প্রথম আলো, যুগান্তর, সমকাল, ইত্তেফাক, কালের কণ্ঠ এবং তিনটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার, নিউ এজ এবং ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত শিশু অধিকার বিষয়ক সংবাদ পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানায় এমজেএফ।

সংস্থাটির পর্যালোচনা অনুযায়ী অবনতিশীল শিশু অধিকার পরিস্থিতি থেকে এটি সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে বাংলাদেশের শিশুরা তাদের ঘরেই নিরাপদ নয়, কারণ অধিকাংশ শিশু-ধর্ষণ পারিবারিক পরিমণ্ডলে পরিচিতদের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়েছে।

২০২০ সালে ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুরাই ধর্ষণের শিকার হয়েছে বেশি। এরপর রয়েছে ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশু। শিশুদের চকলেট বা খাবারের লোভ দেখিয়ে, ভয় দেখিয়ে, মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে এবং ঘরে একা পেয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। এমনকি করোনাকালীন সময়ে ত্রাণ দেয়ার কথা বলেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।

এছাড়াও ২০২০ সালে হত্যা ও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ১৪৫ শিশুকে। ১৩ থেকে ১৮ বছরের শিশুরাই বেশি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদে হত্যার কারণ হিসেবে পারিবারিক কলহ, সম্পদ বন্টণজনিত জটিলতা, প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান, মেয়ে হয়ে জন্মানো, অন্যায়ের প্রতিবাদ, মানসিক চাপ এবং ধর্ষণে ব্যর্থ হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানায় এমজেএফ।

এমজেএফের বিশ্লেষণে ২০২০ সালে ১২ ধরনের ইতিবাচকের সংবাদের সংখ্যা ৩৩০টি এবং ২৬ ধরনের নেতিবাচক ঘটনায় ১৩৬১টি সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।

এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, এমজেএফের বিশ্লেষণ অনুযায়ী শিশুরা নিজের বাসায় নিরাপদ নয়।

শিশুরক্ষায় নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠানের সবাইকে আরো বেশি দায়িত্ববান হওয়ার পাশাপাশি শিশু অধিকার রক্ষায় সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের শিশু-অধিকার বিষয়ক ককাসের সদস্য অ্যারোমা দত্ত এম.পি। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মুহিবুজ্জান।

মুহিবুজ্জামান বলেন, শিশু নিরাপত্তা সংকট উদ্বেগজনক। তিনি আইনি কার্যক্রমের পাশাপাশি সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে সমস্যা মোকাবিলার পরামর্শ দেন।

এমজেএফের পরিচালনা বোর্ডের সদস্য ফাতেমা ইউসুফসহ এমজেএফের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২০’ এর সার্বিকচিত্র উপস্থাপন করেন এমজেএফের শিশু সুরক্ষা বিভাগের সমন্বয়ক রাফেজা শাহী ।