শুধু ‘পানির’ কারণে ২৪ বছর আগে বরাদ্দ আবাসিকের প্লটগুলো যেমন ছিল তেমনই আছে

শুধু ‘পানির’ কারণে ২৪ বছর আগে বরাদ্দ আবাসিকের প্লটগুলো যেমন ছিল তেমনই আছে

২৪ বছর আগে বরাদ্দ করা কর্ণফুলী আবাসিকের প্লটগুলো যেমন ছিল তেমনই আছে। আবাসিক এলাকার ভেতরকার ব্রিকসলিন রাস্তাগুলোর চরিত্র বদল হয়নি। শুধু দু’ধারে লাগানো গাছগুলোর বয়স বেড়েছে। ৫১৭ প্লটের একটিতেও ভবন হয়নি।

শুধু ‘পানির’ জন্য অপেক্ষা দীর্ঘ দুই যুগ! দীর্ঘদিনের পানি সমস্যার কারণে প্লটের মালিকানা বদলও হয়নি অধিকাংশ ক্ষেত্রে। তবে বোয়ালখালীতে দৈনিক ৬ কোটি লিটার পানির উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সম্পন্ন চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্প স্বপ্ন দেখাচ্ছে প্লট প্রাপ্তদের। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানান, শুধুমাত্র সুপেয় পানির অভাবে এখানে আবাসন গড়ে উঠেনি। পানির সংস্থানের জন্য চউকের পক্ষ থেকে গভীর নলকূপ স্থাপনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ১১শ’ ফুট গভীরে গিয়েও সুপেয় পানি মিলেনি। অতিরিক্ত আয়রন ও লবণাক্ত হওয়ায় এ পানি ব্যবহার উপযোগী ছিল না। এসব কারণে পানি সমস্যার সমাধান আর হয়ে উঠেনি।
তথ্য মতে, পরিকল্পিত আবাসন নিশ্চিত করার জন্য চিটাগাং ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (সিডিএ) বিগত ৬ দশক ধরে কাজ করছে। এরই অংশ হিসেবে চউক ১১টি আবাসিক এলাকা প্রতিষ্ঠা করেছে। আবাসিক প্রকল্পের কোনটাতে প্লট বরাদ্দ অবশিষ্ট নেই। কিন্তু ভবন গড়ে উঠার ক্ষেত্রেই যত বাধা বিপত্তি। ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) বিগত ৬০ বছরে সর্বমোট ১১টি আবাসিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ১৯৬৩ সালে কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকায় ৫৮টি প্লট বরাদ্দের মাধ্যমে শুরু হয় নগরীতে আবাসন সমস্যা সমাধানে চউকের কর্মযজ্ঞ।
এদিকে পানি-সংযোগের অভাবে ২৪ বছরেও আবাসন গড়ে ওঠেনি কর্ণফুলী আবাসিক এলাকায়। এ কারণে চউকের অন্যতম বৃহৎ এ প্রকল্প প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর (শাহ আমানত সেতু) দক্ষিণ পাড়ে ৫০ একর জায়গায় এ প্রকল্প অবস্থিত। নগরীর আবাসন-সংকট ও যানজট সমস্যা নিরসনে ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে এ প্রকল্প হাতে নেয় চউক। ৯ম পৃষ্ঠার ১ম কলাম
তখন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
প্রকল্প এলাকায় প্রথম প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৯৯৪ সালে। বাস্তবায়ন করা হয় পরের বছর। তিন ও চার কাঠা আয়তনের মোট ৫১৭টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রথম দফায় প্রতি কাঠার দাম ছিল ৮০ হাজার টাকা। পরে কাঠা প্রতি দাম ছিল দেড় লাখ টাকা। বর্তমানে কাঠা প্রতি মূল্য দাঁড়ায় (চউকের) ১৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ মালিকানা হস্তান্তর করতে গেলে কাঠা প্রতি মূল্য ১৩ লাখ টাকার ১০ শতাংশ হারে চউককে দিতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী, আবাসিক প্রকল্পে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিফোন-সংযোগের প্রধান লাইন স্থাপনের দায়িত্ব চউকের। বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের সুরাহা হলেও অন্যগুলোর সুরাহা হয়নি।
মাঝখানে ২০০৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকল্প এলাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনে ‘এঙপ্ল্যানেশন অব ইন্টারেস্ট’ দরপত্র প্রকাশ করে চউক। সমাধান আসেনি। এ বিষয়ে সিডিএ কর্ণফুলী আবাসিক প্লট মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, চউকের পক্ষ থেকে পানির সংযোগ দেওয়ার জন্য এতদিন আমরা শুধু আশ্বাসের পর আশ্বাস পেয়েছি। কিন্তু পানি আসেনি। তাই প্রকল্প এলাকায় বাড়ি নির্মাণ করতে পারছেন না প্লট মালিকরা। বর্তমান চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ নিযুক্ত হওয়ার পর আমরা উনার সাথে দেখা করেছি।
এ বিষয়ে সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান জানান, বোয়ালখালীতে বাস্তবায়নাধীন চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুরি প্রকল্পের পানি দক্ষিণ চট্টগ্রামে যাবে। এ পানির মাধ্যমেই কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্পে পানির সমস্যার সমাধান খোঁজা হচ্ছে।
এদিকে এ পানি প্রকল্পের ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, কর্ণফুলী নদীর ওপারে বোয়ালখালীতে ‘ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পটি’ বাস্তবায়নের পর ওয়াসার পানি উৎপাদন বাড়বে দৈনিক আরো ৬ কোটি লিটার। দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া, আনোয়ারা, কর্ণফুলী ও বোয়ালখালী উপজেলায় পানি সরবরাহ করতে চট্টগ্রাম ওয়াসা এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এ ব্যাপারে মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের মাধ্যমে এখানে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা হতে পারে।