আওয়ামী লীগকে কেউ ভাঙতে পারেনি আদর্শ ছিল বলেই : শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগকে কেউ ভাঙতে পারেনি আদর্শ ছিল বলেই : শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আদর্শ ছিল বলেই পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে বারবার চেষ্টা সত্ত্বেও কেউ আওয়ামী লীগকে ভাঙতে পারেনি । তিনি বলেন, বারবার আঘাতের পরও ভেঙে যায়নি আওয়ামী লীগ।

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের দুই দিনের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

বিকাল ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় দুই দিনের সম্মেলন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে আজ সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। আজ ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে কাউন্সিল অধিবেশন। সেখানে ঐতিহ্যবাহী দলটির আগামী তিন বছর কারা নেতৃত্ব দেবে তা বাছাই করা হবে।

আওয়ামী লীগের সংগ্রামী অতীতের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ওপর আঘাত এসেছে বারবার। জাতির পিতাকেও কতবার হত্যাচেষ্টা হয়েছে! তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। ফাঁসিতে ঝোলানোর ষড়যন্ত্র হয়েছে। তবে সফল হয়নি। আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণভাবে শেষ করে দেওয়ার অনেক চেষ্টা অনেকবার হয়েছে। ইয়াহিয়া, আইয়ুব থেকে শুরু করে জিয়া, এরশাদ, খালেদা সবাই প্রথম আঘাত করেছে আওয়ামী লীগকে। তবে আদর্শ সংগঠন বলেই কেউ আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করতে পারেনি।

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ক্ষমতায় কিংবা বাইরে যেখানেই থাকুক দলটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে। নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি জনগণ থেকে দূরে সরে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবশেষ জাতীয় নির্বাচনেও আন্তরিকভাবে কাজ না করে বিএনপি মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বাধীনতার পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের অবদানের কথা তুলে ধরে উন্নয়ন ও আদর্শের ধারা অব্যাহত রাখতে দলীয় নেতাকর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, একজন মিলিটারি ডিক্টেটর ক্ষমতা দখল করে সেই ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দল গঠন করেছিল সেই জাতীয় দল হলো বিএনপি। তারা দেশের জন্য কোনো কল্যাণ করতে পারে নাই।

তিনি বলেন, এক দশক আমরা ক্ষমতায়। এই এক দশকে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। দারিদ্র্যের হার আমরা ২০ দশমিক পাঁচ ভাগে নামিয়ে এনেছি। আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হয়েছি। এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে। আমাদের লক্ষ্য সামনে আরও অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া।

সারা দেশ থেকে আসা দলের কাউন্সিলরদের বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শের ওপর অবিচল থেকে রাজনীতি করার তাগিদ দেন দলীয় সভাপতি। দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করতে নির্দেশ দেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৯৮১ সালে দল আমাকে আমার অনুপস্থিতিতে সভাপতি নির্বাচিত করে। রাজনীতি আমার জন্য নতুন নয়। স্কুলজীবন থেকে মিছিলে গিয়েছি দেওয়াল টপকে। কলেজজীবনে সরাসরি রাজনীতি করেছি। কলেজে কলেজে ঘুরে সংগঠন করেছি। কলেজে ভিপি নির্বাচিত হয়েছি। তবে চিন্তাও করিনি আওয়ামী লীগের মতো দলের ভার নিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরে নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পর ছয়টি বছর দেশে আসতে পারিনি। রেহানার পাসপোর্টটি পর্যন্ত রিনিউ করতে পারিনি। জিয়া আমাদের দেশে আসতে দেয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত করেছিল বলেই জনগণের সাড়া মিলে। পরে একরকম জোর করেই দেশে ফিরি।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করা হয়। বিচারের পথ বন্ধ করা হয়। খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়। খুনিদের দল করার সুযোগ দেওয়া হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে তাদের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত করা হয়। সেই বৈরী পরিবেশে ফিরে এসে দলের হাল ধরেছি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আওয়ামী লীগকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করার চেষ্টা হয়েছে। আমাদের নিজেদের মধ্যে ভাঙন হয়েছে একবার-দুবার। দলকে সংগঠিত করতে সারা দেশে ঘুরেছি। এই সংগঠনকে ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছি। আজ আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে বড় এবং শক্তিশালী সংগঠন।

বিএনপির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা দেশের জন্য কোনো কল্যাণ করতে পারে না। দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মানি লন্ডারিং, অস্ত্র চোরাকারবারি, গ্রেনেড হামলা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার করেছে তারা। তিনি আরও বলেন, এক দশক আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এই সময়ে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্যের হার কমেছে। জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছেন তা এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উপনীত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এত অল্প সময়ে কোনো দেশ যুদ্ধে ভয়াবহতা কাটিয়ে এগিয়ে যেতে পারে, যা একমাত্র বাংলাদেশেই জাতির পিতা তাঁর নেতৃত্বে সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।

উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা, সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু একটা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশটাকে গড়ে তুলেছেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন উক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতার জন্য নীতি আদর্শ সবচেয়ে বড়। যিনি প্রস্তুত থাকতে পারেন, ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন তিনি সফল হতে পারেন। আর আওয়ামী লীগ সেই সংগঠন যার নেতাকর্মীরা আত্মত্যাগ করেছেন এবং তারই ফসল বাংলাদেশের জনগণ আজ পেয়েছে। বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নত সমৃদ্ধির পথে। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছেন, সেটাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, তাদেরও এই চিন্তাচেতনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা, জাতীয় চার নেতা ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীসহ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ ছাড়া বক্তব্য শেষে গতকালের মতো সম্মেলন মুলতবি ঘোষণা করেন।