আনোয়ারায় নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধে ধ্বস , কাজের মান নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগ

এম. নুরুল ইসলাম,আনোয়ারা ।।

আনোয়ারায় নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধে ধ্বস , কাজের মান নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগ
আনোয়ারায় নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধে ধ্বস , কাজের মান নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগ

আনোয়ারা উপকূলীয় রায়পুর ইউনিয়নের বাইগ্যার ঘাট এলাকায় নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধ ধসে সাগরে বিলীন হওয়ায় আবারো কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেন স্থানীয়রা। গত শনিবার এলাকাবাসী এ ব্যাপারে ভূমি মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করলে তিনি তাৎক্ষণিক পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বাঁধ সংস্কারের কঠোর নির্দেশনা দেন। বর্তমানে ভাঙনে পরুয়াপাড়া বাতিঘর, ছিপাতলী ঘাট, গহিরা বাইগ্যার ঘাট, বারআউলিয়ার মাজার, ফকির হাট, সরেঙ্গা এলাকায় বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশে ভাঙন ধরেছে। ফলে জোয়ারের পানিতে উপকূলের অর্ধ লক্ষ মানুষ ক্ষোভ ও হতাশায় মানবেতর জীবন যাপন করছে।
সরেজমিনে উপকূলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গহিরা বাইগ্যার ঘাট এলাকায় প্রায় দুইশ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। যার ফলে স্থানীয় বার আউলিয়া জামে মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান, বসত ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হুমকির মুখে পড়ে। শুধু তাই নয় রায়পুর ইউনিয়নের পরুয়াপাড়া বাতিঘর, ছিপাতলী ঘাট, গহিরা বারআউলিয়া,ফকির হাট ও সরেঙ্গা এলাকার বিভিন্ন অংশের বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বারআউলিয়া এলাকায় খোলা বেড়িবাঁধ দিয়ে প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানি উঠানামা করছে। বর্তমানে ভাঙনের কবলে পড়ে ১৬ ফুট প্রস্থের বেড়িবাঁধ ৪-৫ ফুটে চলে আসছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণের সময় বাঁধের থেকে মাটিকাটা, সিডিউল অনুযায়ী বাঁধ তৈরী না করা, বাঁধের মাটি না চাপানো, মাটির সাথে ৭০ শতাংশ বালি দেয়ায় বাঁধ নির্মাণের বছর পার না হতেই বাঁধের বিভিন্ন অংশে ধস ও ভাঙন দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় বাইগ্যার ঘাট এলাকার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ(৫৫) জানায়, স্থানীয় কিছু নেতার জোগসাজশে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে বেড়িবাঁধের কাজ করার কারণে নির্মাণের পাঁচমাস যেতে না যেতেই বাঁধ ভেঙে পড়ে স্থানীয় মসজিদ,মাদ্রাসা, কবরস্থান, বসত বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এব্যাপারে গত শনিবার এলাকাবাসী ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপিকে অবহিত করলে তিনি তাৎক্ষনিকভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বেড়িবাঁধ মেরামতের নির্দেশনা দেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়,গত অর্থবছরে রায়পুর ইউনিয়নের বাইগ্যার ঘাট থেকে ছিপাতলী ঘাট পর্যন্ত ১৯৪২ মিটার বেড়িবাঁধের ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাহের এন্ড ব্রাদার্স। গত জুন মাসে কাজের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো সিডিউল কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে কাজের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সময় চেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানে আলম জানান,রায়পুর ইউনিয়নের আলোচিত এক নেতার আশ্রয় প্রশ্রয়ে বেড়িবাঁধের মাটি কাটা ও ব্লক নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই নানা অনিয়ম চলে আসছে। যার ফলে এলাকার হাজার হাজার মানুষের মাঝে ক্ষোভ আছে। শুধু তাই নয় দুই একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজের মান ভাল করলেও বাকী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গুলো কার্যাদেশ মোতাবেক ও যথাসময়ে কাজ না করায় উপকূলের হাজার হাজার মানুষ জোয়ারের পানির কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী অলি আফাজ চৌধুরী জানান, বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দেয়ার ঘটনায় গত শনিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রতিনিধি দল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে একটি ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন তৈরী করেছে। বেড়িবাঁধের অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রাথমিক ভাবে মাটি কাটার কাজ কার্যাদেশ অনুযায়ী না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।