আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় আমল হচ্ছে রাতের ঘুম ত্যাগ করে নামাজে দাঁড়ানো, রাতের আমল  ও প্রার্থনা

আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় আমল হচ্ছে রাতের ঘুম ত্যাগ করে নামাজে দাঁড়ানো, রাতের আমল  ও প্রার্থনা

মাহমুদ আহমাদ ।।

আল্লাহর দরবারে খুবই পছন্দনীয় আমল হচ্ছে রাতে আরামের ঘুম ত্যাগ করে নামাজে দাঁড়ানো । মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের পর রোজাসমূহের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রোজা হলো পবিত্র মাসসমূহের রোজা। আর ফরজ নামাজসমূহের পর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নামাজ হলো কিয়ামুল লাইল তথা তাহাজ্জুদের নামাজ।’ (মুসলিম : ১১৬৩)। নবীজি (সা.) রাত জেগে দীর্ঘ তেলাওয়াত ও রুকু-সেজদাসহ আট-দশ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন। কখনও দুই রাকাত নামাজেই কাটিয়ে দিতেন পুরো রাত। তাহাজ্জুদ শেষে তিন রাকাত বিতরের নামাজ পড়তেন।

যাদের তাহাজ্জুদ নামাজের অভ্যাস গড়ে ওঠেনি, তারা শুরুতে সহজ সহজ সুরা কেরাত দিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়তে পারেন। তারপর ধীরে ধীরে দীর্ঘ কেরাত ও রুকু-সেজদার মাধ্যমে দীর্ঘ সময় আমল করতে পারেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ রাতের বেলা নামাজ পড়তে দাঁড়ায় তখন সে যেন তার নামাজ আয়াসহীন দুই রাকাত দিয়ে শুরু করে।’ (মুসলিম : ৭৬৪)

রাতের নামাজে নবীজি খুব কাকুতি-মিনতি সহকারে আল্লাহর দরবারে দোয়া করতেন। হাদিসে এমন কিছু দোয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। দোয়ায় নবীজি বলতেন ‘হে আল্লাহ! জিবরাঈল, ইসরাফিল ও মিকাঈলের প্রভু! নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের স্রষ্টা! দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী! তুমি তোমার বান্দাদের মাঝে বিভেদপূর্ণ বিষয়ে মীমাংসা করে থাক। তুমি আমাকে এ বিষয়ে সত্য পথ প্রদর্শন কর। নিশ্চয় তুমি যাকে চাও তাকে সরল সঠিক পথ দেখাও।’ (মুসলিম : ৭৭০)। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। আপনি নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যকার সব কিছুর নিয়ন্তা। আপনারই জন্য সকল প্রশংসা। নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যকার সব কিছুর আধিপত্য আপনার। আপনারই জন্য সকল প্রশংসা। আপনি নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যকার সব কিছুর আলো। আপনারই জন্য সকল প্রশংসা। আপনি নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের অধিপতি। আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। আপনি সত্য। আপনার প্রতিশ্রুতি সত্য। আপনার সাক্ষাৎ সত্য। আপনার বাণী সত্য। জান্নাত সত্য। জাহান্নাম সত্য। নবীগণ সত্য। মুহাম্মদ সত্য। কেয়ামত সত্য। হে আল্লাহ! আপনার সন্তুষ্টির নিমিত্তেই আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। আপনার প্রতি ঈমান আনয়ন করেছি। আপনার ওপর ভরসা করেছি। আপনারই কাছে প্রত্যাবর্তন করেছি। আপনার জন্যই বিতর্ক করেছি এবং আপনাকেই বিচারক নির্ধারণ করেছি। অতএব, হে আল্লাহ! আপনি আমার পূর্বাপরের প্রকাশ গোপন সব গুনাহ ক্ষমা করে দিন। আপনি অনাদি। আপনি অনন্ত। আপনার ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই।’ (বুখারি : ১১২০)

বান্দা যখন এভাবে কাকুতি-মিনতি সহকারে মহান রবের দরবারে দোয়া করতে থাকবে তখন আল্লাহ তার দোয়া অবশ্যই কবুল করবেন। আল্লাহ তো বান্দার এমন দোয়ার অপেক্ষায়ই থাকেন। এমনকি দুনিয়ার আসমানে চলে আসেন আর বান্দাকে দোয়া করার জন্য আহ্বান করতে থাকেন। হজরত আব হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক রজনীর শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের বরকত প্রদানকারী প্রভু দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন যে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। যে আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দান করব। যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’ (বুখারি : ১১৪৫; মুসলিম : ৭৫৮)