আল্লাহর নেয়ামত ও ইবাদত ' বিয়ে'

আল্লাহর নেয়ামত ও ইবাদত ' বিয়ে'
আল্লাহর নেয়ামত ও ইবাদত ' বিয়ে'

মুফতি আহসান শরিফ।।

বিয়ে আল্লাহ তায়ালার মহান এক নেয়ামত এবং গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। দুনিয়া ও পরকাল উভয় দিকে থেকেই এতে কল্যাণ ও উপকারিতা রয়েছে। কোরআন-হাদিসে বিয়ের উদ্দেশ্য ও উপকারিতা সম্পর্কে অনেক বর্ণনা এসেছে। বিয়ে মানুষের পবিত্রতা, সতীত্ব, খোদাভীতি এবং বংশ বৃদ্ধির মাধ্যম। বিয়ের মাধ্যমে মানুষ গুনাহ থেকে বাঁচতে পারে। অন্তর হয় পবিত্র। বিবেক হয় স্থির এবং ব্যক্তিত্ব হয় মর্যাদাশীল। ইবাদতে মজা আসে। ইসলামের ওপর চলা সহজ হয়। সর্বোপরি বিয়ে অসংখ্য সওয়াব ও উপকারিতার কারণ। স্বামী-স্ত্রীর সৌহার্দপূর্ণ আচরণ, ভালোবাসার রিনিঝিনি, মন ভোলানো খোশগল্প, হাসি, কৌতুক এ সবই ইবাদত। (হাশিয়াতু ইবনে আবিদীন : ৩/৬)

বিয়ে মুমিনের উত্তম বৈশিষ্ট্য
বিয়ে নবীজির সুন্নত। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিয়ে আমার সুন্নত। (ইবনে মাজা : ১৮৩৬)। বিয়ে কখনও ওয়াজিব। আবার কখনও ফরজ। স্বাভাবিক অবস্থায় শরীর সুস্থ থাকলে, কামভাব নিয়ন্ত্রণে থাকলে, স্ত্রীর মহর ও ভরণপোষণ দিতে সক্ষম হলে, বিয়ে করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। কামভাব নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে গুনাহে লিপ্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা হলে বিয়ে করা ওয়াজিব। গুনাহে লিপ্ত হওয়া নিশ্চিত হলে, বিয়ে করা ফরজ। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থায় অর্থনৈতিক অবস্থা না থাকলে, অর্থাৎ স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে সক্ষম না হলে বিয়ে না করে রোজা রাখার বিধান রয়েছে। সামর্থ্য হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধারণে কথা বলে শরিয়ত। (হাশিয়াতু ইবনে আবিদীন : ৩/৬)

সতী স্ত্রী দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ
পৃথিবীকে আল্লাহ তায়ালা মানুষের কল্যাণে সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীর সব কিছু মানুষের সেবায় নিবেদিত। মানুষ হবে কেবলই আল্লাহর ইবাদতে নিবেদিত। কোনো কিছুরই অভাব থাকবে না। চারপাশ তার সহায়ক হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘পৃথিবী সবটাই আরাম-আয়েশ ও ভোগের মাধ্যম। আর পৃথিবীর ভোগ ও কল্যাণের সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম হলো নেককার ও সতী স্ত্রী।’ (মুসলিম : ১৪৬৭)। এ জন্য স্ত্রীকে মূল্যায়ন করা চাই। কোনোভাবেই অবহেলা বা অবমূল্যায়ন করা যাবে না।

চারটি জিনিস সৌভাগ্যের নিদর্শন
হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘চারটি জিনিস মানুষের পার্থিব জীবনের সৌভাগ্যের নিদর্শন। যথা ১. পুণ্যবতী স্ত্রী। ২. প্রশস্ত গৃহ। ৩. সৎ প্রতিবেশী ও ৪. আরামদায়ক বাহন।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২৪৪৫; ইবনে হিব্বান : ৪০৩২; সহিহুল জামে : ৮৮৭)। নবীজি (সা.) এ হাদিসের মাধ্যমে ইঙ্গিত করেছেন, স্বামী-স্ত্রী নির্বাচন করা এবং স্ত্রী স্বামীকে পছন্দ করতে গিয়ে এ বিষয়টি সামনে রাখা দরকার। তার ভেতর আল্লাহর ভয় কতটুকু আছে? দ্বীনের ওপর চলার আগ্রহ কতটুকু? কেননা, তাকওয়া ও আল্লাহর ভয় ব্যতীত বিয়ের মৌলিক উদ্দেশ্যই লঙ্ঘিত হবে।

বিয়ে একটি ইবাদত
বিয়ের চুক্তির মধ্যে আল্লাহ তায়ালা দুটি বৈশিষ্ট্য রেখেছেন। একটি সামাজিক চুক্তি আরেকটি ইবাদতের মর্যাদা। কেননা বিয়ে মৌলিকভাবে একটি ইবাদত। ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, বিয়ের মধ্যে সামাজিকতার চেয়ে ইবাদত প্রবল। বিয়ে হচ্ছে দুই ব্যক্তির মাঝে সামাজিক একটি চুক্তির নাম। এতে দুপক্ষের মাঝে প্রস্তাব প্রদান ও প্রস্তাব গ্রহণ বিদ্যমান থাকে। স্ত্রীর পক্ষের উকিল স্বামীকে বলে আমি অমুক নারীর বিয়ে তোমার সঙ্গে দিচ্ছি। স্বামী বলে আমি কবুল করলাম। ক্রয়-বিক্রয়ে প্রস্তাব প্রদান ও গ্রহণ থাকলেও সেখানে কাজী, খুতবা এবং সাক্ষীর প্রয়োজন হয় না। বিয়ে ইবাদত হওয়ায় এসবের প্রয়োজন দেখা দেয়।

আমরা জেনেছি, বিয়েতে স্বামীর পক্ষ থেকে মহর দিতে হয়। স্ত্রীর ভরণপোষণ স্বামীকেই বহন করতে হয়। স্ত্রীর বাপের বাড়ি থেকে আনা কিংবা অন্যভাবে উপার্জনের কথা ইসলাম বলেনি। যৌতুকের মতো অভিশাপ ইসলামে নেই। অহেতুক অভিশপ্ত বিষয়ের লোভে পড়ে স্বামী নামক পাষন্ড মানুষটি অত্যাচারের স্টিমরোল চালিয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই। তাই আসুন, আল্লাহর দেওয়া স্ত্রী নামক শ্রেষ্ঠ সম্পদকে মূল্যায়ন করতে শিখি। সুখী সমৃদ্ধ জীবন গড়ি। আল্লাহ আমাদের বোঝার মতো ক্ষমতা এবং কার্যকর করার তাওফিক দান করুন।